একজন প্রার্থী বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ৪ বার অংশগ্রহণ করতে পারবেন। বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এরকম তথ্য প্রকাশ করা হয়।
যেখানে বলা হয়েছে, সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, স্ব-শাসিত সংস্থাসহ সরকারি অ-আর্থিক কর্পোরেশনে সরাসরি নিয়োগের জন্য উচ্চ বয়সসীমা অধ্যাদেশ, 2024-এর আলোকে ‘সরকারি চাকরি’র ধারা-৫৯ আইন, ২০১৮’- জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক ‘বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বয়স, যোগ্যতা এবং সরাসরি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা, ২০১৪’ পুনর্গঠন করে একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ চারবার বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এ নিয়ম সংযোজনের বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছে বলেও জানা যায়।
এর পূর্বে সাবেক সচিব আবদুল মুঈদ চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন কমিটি সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়স বাড়ানোর সুপারিশ করেছিল। কমিটি ছেলেদের জন্য ৩৫ বছর এবং মেয়েদের জন্য ৩৭ বছর সুপারিশ করেছে। এই সুপারিশের ভিত্তিতে সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়।
এর পূর্বে গত ২৪ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় সর্বোচ্চ তিনবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। তেজগাঁওয়ের কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়- একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ তিনবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টা ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রেস উইং সাংবাদিকদের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। সভায় ‘সরকার, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, স্ব-শাসিত সংস্থা অধ্যাদেশ, ২০২৪ সহ পাবলিক নোব নন-ফাইনান্সিয়াল কর্পোরেশনে সরাসরি নিয়োগের জন্য সর্বোচ্চ বয়সসীমা নির্ধারণ’-এর খসড়া অনুমোদন করা হয়। চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ সেপ্টেম্বর সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সাবেক সচিব আবদুল মুঈদ চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে সরকার। চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে কমিটি তাদের সুপারিশ পেশ করে। কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমান। সদস্যরা হলেন সাবেক যুগ্ম সচিব কাউছার জহুরা, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ইকবাল এবং অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বর্তমানে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) সাইফুল ইসলাম।
কমিটি চাকরিতে আবেদনের বয়স বাড়ানোর সুপারিশের পেছনে তিনটি প্রধান কারণ উল্লেখ করেছে। প্রথমত, করোনা মহামারির কারণে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ বন্ধ ছিল। গত সরকার এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বয়সে ছাড় দিলেও থমকে যাওয়া নিয়োগে তেমন গতি নেই। নতুন নিয়োগের উদ্যোগও ছিল কম। দ্বিতীয়ত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় আগের সরকার দেশটির অর্থনীতি নিয়ে সমস্যায় পড়েছিল। ফলে চাকরির সুযোগ ছিল সীমিত। তৃতীয়ত, বিগত সরকারের মামলা-হামলার কারণে অনেক ছাত্র সংগঠনের হাজার হাজার শিক্ষার্থী সময়মতো শিক্ষা শেষ করতে পারেনি। ফলে তারা চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি।
কমিটি সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন রাজনৈতিক মহল থেকে চাকরির আবেদনের বয়স বাড়ানোর সুপারিশও ছিল। বিগত দিনে সরকারি দল ও পুলিশের হামলা-মামলার কারণে বিরোধী দল ও তাদের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঘরে থাকতে পারছেন না। বয়স ত্রিশ পেরিয়ে গেলেও অনেকে সরকারি চাকরিতে আবেদন করার সুযোগ হারায়। রাজনৈতিক কারণে বঞ্চিত ওই প্রার্থীদের অধিকারের বিষয়টিও সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছে।
কমিটির সুপারিশ গণমাধ্যমে আসার পর সেটা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় বিতর্ক। একপক্ষ এ সুপারিশের পক্ষে অবস্থান নেয়। তাদের বক্তব্য, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজটের কারণে স্নাতকোত্তর শেষ করার বয়স ২৭-২৮ পেরিয়ে যাচ্ছে। সুপারিশ বিরোধীদের যুক্তি হলো, মধ্যবয়সে চাকরিতে এসে এই শ্রমিকরা দেশে নতুন কিছু করতে পারেন না। তারা বলেন, একটি বিসিএস শেষ করতে আড়াই থেকে তিন বছর সময় লাগে, তাই ৩৫ বা ৩৭ বছর বয়সে আবেদন করলে তারা আসলে ৪০ বছর বয়সে চাকরিতে যোগ দেবেন।
বর্তমানে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩০ বছর। মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের বয়স ৩২ বছর। জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন (বিজেএস) এবং ডাক্তারদের আবেদনের বয়সসীমা 32 বছর। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতায় প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর। আগে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ছিল ২৭ বছর। ১৯৯১ সালে এটি ৩০ বছর বৃদ্ধি করা হয়েছিল। সরকারি কর্মীরা বর্তমানে ৫৯ বছর বয়স পর্যন্ত চাকরি করেন। এর পর প্রিপারেটরি রিটায়ারমেন্ট লিভ এ যান। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য এই বয়স ৬৫। হাইকোর্টের বিচারপতিরা ৬৭ বছর পর্যন্ত চাকরি করেন। আগে সরকারি চাকরিতে অবসরের বয়স ছিল ৫৭ বছর। ২০১১ সালে, বয়স দুই বছর বাড়িয়ে ৫৭ থেকে ৫৯ করা হয়েছিল।