অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে ভয়মুক্ত ও সম্প্রীতিপূর্ণ একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নের কথা তুলে ধরেছেন। তিনি জোর দিয়েছেন এমন একটি দেশের ওপর, যেখানে জনগণ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ থাকবে এবং কোনো প্রকার ভয়ের ছায়া তাদের জীবনে থাকবে না।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রয়োজনীয়তা-
বৈঠকের সমাপনী বক্তব্যে ড. ইউনূস বলেন- “আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলছি। আমরা সবাই একমত যে আমাদের মধ্যে সম্প্রীতি রয়েছে। কিন্তু সম্প্রীতির পাশাপাশি আমাদের মনে ভয়ও রয়েছে। আমাদের লক্ষ্য হলো এমন এক বাংলাদেশ গড়া, যেখানে কোনো নাগরিক অন্য নাগরিককে ভয় পাবে না।”
তিনি উল্লেখ করেন- দেশের মানুষকে ক্রোধ ও ভয়ের বাইরে একটি সহনশীল পরিবেশে বসবাস করার সুযোগ দিতে হবে। তিনি বলেন, “আমরা যদি এমন একটি দেশ গড়ে তুলতে পারি, তবে এটি হবে একটি সফল দেশ। আমরা এর জন্য অপেক্ষা করছি এবং আল্লাহ আমাদের এমন একটি স্বপ্ন দেখার সুযোগ করে দিয়েছেন।”
উসকানিমুক্ত সমাজ গড়ার আহ্বান-
ড. ইউনূস তার বক্তব্যে রাজনৈতিক উসকানি ও অস্থিতিশীলতার প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন- “দেশের জনগণ একটি রাজনৈতিক শক্তিকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে কিন্তু সেই শক্তি এখনও নিষ্ক্রিয় নয়। তারা দেশ ও বিদেশে উসকানি ছড়াচ্ছে। জনগণকে এসব উসকানিতে সাড়া না দিতে অনুরোধ করছি।”
প্রধান উপদেষ্টা এও বলেন, দেশের বাইরের প্রভাবেও উসকানি তৈরি হচ্ছে। তিনি জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “উসকানির কারণে বাংলাদেশ বারবার আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে। এটি মোকাবিলার জন্য জনগণকে সঠিকভাবে প্রস্তুত হতে হবে।”
সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিতের আহ্বান-
বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে ড. ইউনূস দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি ধর্মীয় নেতাদের উদ্দেশে বলেন, “সংখ্যালঘুদের ওপর কোনো হামলা হলে সঠিক তথ্য সংগ্রহে আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। তবে যারা তথ্য সরবরাহ করবেন, তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করাও অত্যন্ত জরুরি।”
তিনি জানান- অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের কিছু অভিযোগ সামনে এসেছিল, যা তাকে দুঃখিত করেছিল। বিদেশি গণমাধ্যমে এসব বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও বাস্তবতা এবং এসব প্রতিবেদনের মধ্যে ফারাক রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ড. ইউনূস আরও বলেন- “সংখ্যালঘুদের ওপর কোনো হামলা হলে তাৎক্ষণিকভাবে এর সঠিক তথ্য সংগ্রহ এবং দোষীদের আইনের আওতায় আনতে আমরা বদ্ধপরিকর। ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত প্রতিকার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সকলের ঐক্য প্রয়োজন-
শান্তি ও সম্প্রীতির প্রশ্নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন- “আমরা ভীত নাগরিক নই। আমাদের লক্ষ্য নির্ভীক নাগরিক গড়ে তোলা। একমাত্র ঐক্যের মাধ্যমেই বাংলাদেশ ক্রোধ, ভয় এবং উসকানিমুক্ত হয়ে একটি স্বপ্নের দেশ হিসেবে এগিয়ে যেতে পারবে।”
বৈঠকটি এক নতুন বাংলাদেশের জন্য একটি সাহসী আহ্বানের উদাহরণ হয়ে থাকবে, যেখানে সকল নাগরিক ভয় এবং উসকানি ছাড়াই একটি নিরাপদ ও সহনশীল পরিবেশে জীবনযাপন করতে পারবে।