২০২৪ সালে সারা দেশে ২৬ হাজার ৬৫৯টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। যা প্রতিদিন গড়ে ৭৩টি আগুনের ঘটনা। ফায়ার সার্ভিসের দেয়া তথ্যমতে, এসব অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ৪৪৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। তবে তাদের দ্রুত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ১ হাজার ৯৭৪ কোটি টাকার সম্পদ রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। একই বছরে অগ্নিকাণ্ডে ৩৪১ জন দগ্ধ হয়েছেন। আর ১৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের সাহসী ভূমিকার কারণে আগুন নির্বাপণের সময় ৩৭ জন কর্মী আহত হয়েছেন এবং দুইজন ফায়ার ফাইটার প্রাণ হারিয়েছেন।
গত বছর বিখ্যাত অগ্নিকাণ্ডের কারণ হিসেবে বৈদ্যুতিক গোলযোগ, বিড়ি-সিগারেটের জ্বলন্ত টুকরা, গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ, চুলা থেকে আগুন, উচ্ছৃঙ্খল জনতা এবং শিশুদের খেলার কারণে আগুনের ঘটনা উল্লেখযোগ্য ছিল। এর মধ্যে বিড়ি-সিগারেটের জ্বলন্ত টুকরা থেকেই ৪ হাজার ১৩৯টি আগুনের ঘটনা ঘটে। এছাড়া বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে ৯ হাজার ৬৯টি, গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ থেকে ৭০৪টি এবং আতশবাজি বা পটকা পোড়ানোর কারণে ৬৪টি আগুনের ঘটনা ঘটেছে।
অগ্নিকাণ্ডের সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটেছে আবাসিক ভবনগুলোতে। যেখানে ৭ হাজার ১৩১টি আগুনের ঘটনা ঘটেছে। যা মোট অগ্নিকাণ্ডের ২৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এছাড়া খড়ের গাদা, রান্নাঘর, দোকান, শপিংমলসহ বিভিন্ন স্থানে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। পরিবহনের ক্ষেত্রে, বাসে ১১৪টি, ট্রেনে ১৩টি এবং লঞ্চে তিনটি আগুনের ঘটনা ঘটে।
২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে সবচেয়ে বেশি, ২ হাজার ৭৩৭টি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। আর মার্চ, এপ্রিল এবং মে মাসেও যথাক্রমে ৩ হাজার ৪২১টি, ৩ হাজার ৪২৬টি এবং ২ হাজার ৬৮৬টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। মোট ১০২টি আগুন দৈনিক ঘটেছে এই চার মাসে।
আহত ও নিহতদের পরিসংখ্যানেও পুরুষের সংখ্যা বেশি। যেখানে ৩৪১ জন আহতের মধ্যে ২৩৭ জন পুরুষ এবং ১০৪ জন নারী এবং ১৪০ জন নিহতের মধ্যে ১০৭ জন পুরুষ ও ৩৩ জন নারী। সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটে আবাসিক ভবনগুলোতে। সেখানে ৭২ জন আহত এবং ৩৬ জন নিহত হয়েছেন। গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ৫৩ জন আহত হয়েছেন এবং ৮ জন নিহত হয়েছেন।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, ২০২৪ সালে ১৫৬ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছে এবং ৭৫০ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছে। এছাড়া ৯ হাজার ১২৮টি দুর্ঘটনায় ১০ হাজার ৮২৬ জন আহত এবং ২ হাজার ৪৩৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬ হাজার ৪০৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৯ হাজার ৩১৯ জন আহত এবং ১ হাজার ৪৮৪ জন নিহত হয়েছেন।
অগ্নিপ্রতিরোধে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ১৪৭টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে এবং ১৪৯টি প্রতিষ্ঠানকে ২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য ১৮ হাজার ৯৮৩টি মহড়া, ৩ হাজার ৩৬টি সার্ভে এবং ১৫ হাজার ৬৮৩টি গণসংযোগ করা হয়েছে। পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ কোর্স পরিচালনা করে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৮৪০ জনকে অগ্নিদুর্ঘটনার বিষয়ে সচেতন করা হয়েছে।
এই পরিসংখ্যান এবং কার্যক্রমগুলোর মাধ্যমে স্পষ্ট হয় যে, সারা দেশে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এবং তার পরবর্তী ক্ষতির পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে। তবে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের প্রচেষ্টার মাধ্যমে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।