রাজনৈতিক চাপ থেকে মুক্তি চেয়ে জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) প্রশাসনিক কাজের স্বচ্ছতা ও স্বাধীনতা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন। রোববার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত তিন দিনের জেলা প্রশাসক সম্মেলনের প্রথম দিনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে মুক্ত আলোচনায় তাঁরা এসব দাবি তুলে ধরেন।
রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কমানোর দাবি-
সম্মেলনে ডিসিরা জানান, প্রশাসনকে সব সময় রাজনৈতিক চাপের মুখে কাজ করতে হয়, যা তাদের স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করে। তাঁরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য রাজনৈতিক প্রভাব হ্রাসে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের দাবি করেন।
একাধিক বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসি মত প্রকাশ করেন যে, মাঠ প্রশাসনকে জনগণের সেবায় আরও কার্যকর করতে পেশাগত মূল্যায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাস পরও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির পুরোপুরি উন্নতি না হওয়ার কারণ খুঁজে বের করাও জরুরি বলে মত দেন তাঁরা।
মাঠ প্রশাসনের সমন্বিত কার্যক্রম-
বিভাগীয় কমিশনাররা জানান, ৫ আগস্টের পর থেকে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা পারস্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করছেন। ডিসি, পুলিশ সুপারসহ (এসপি) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা একে অপরের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করলেও রাজনৈতিক চাপের কারণে মাঠপর্যায়ের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
নৌ পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রস্তাব-
ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী নদীপথে মাদক চোরাচালান ও অন্যান্য অপরাধ দমনে নৌ পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তাব দেন।
অর্পিত সম্পত্তি মামলার সময়সীমা সংশোধনের সুপারিশ-
ডিসিরা জানান, অর্পিত সম্পত্তি উদ্ধারের মামলা ১৬০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও বাস্তবে তা সম্ভব হয় না। প্রভাবশালী ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতাদের দখলে থাকা এসব সম্পত্তি পুনরুদ্ধারে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন হয়। তাই এই মামলা নিষ্পত্তির নির্দিষ্ট সময়সীমা না রাখার প্রস্তাব দেন তাঁরা। তবে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ মনে করেন- মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা এড়াতে নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকা প্রয়োজন।
নিখোঁজ জেলেদের তালিকা প্রকাশে সেল গঠনের দাবি-
অনেক জেলে সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ট্রলারসহ নিখোঁজ হন কিন্তু আইনি জটিলতার কারণে দ্রুত তাদের তালিকা প্রকাশ করা সম্ভব হয় না। এক ডিসি এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে একটি সেল গঠনের প্রস্তাব দেন।
তিনি বলেন, নিখোঁজ জেলেদের পরিবার যেন দ্রুত প্রয়োজনীয় সহায়তা পায়, সে জন্য এ উদ্যোগ জরুরি।
ন্যায্যমূল্যের বাজার স্থাপনের উদ্যোগ-
ঢাকার ডিসি তানভীর আহমেদ জানান, রমজান উপলক্ষে রাজধানীর দুটি স্থানে ন্যায্যমূল্যের বাজার স্থাপন করা হবে। কেরানীগঞ্জ ও সাভারের কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি পণ্য কিনে সেখানে কম দামে বিক্রি করা হবে।
চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রস্তাব-
চট্টগ্রামের ডিসি ফরিদা খানম জানান, জলাবদ্ধতা দূর করতে সম্ভাবনাময় নদীগুলো খনন করে পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগাতে হবে।
বগুড়ায় চিকিৎসা সুবিধা বাড়ানোর আহ্বান-
বগুড়ার ডিসি হোসনা আফরোজ শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ও জনবল সংকট নিরসনের দাবি জানান। হাসপাতালটির ধারণক্ষমতা ১,২০০ বেড হলেও সেখানে মাত্র ৫০০ বেডের জন্য প্রয়োজনীয় জনবল রয়েছে।
নিষ্কর্ষ-
সম্মেলনে অংশ নেওয়া ডিসিরা প্রশাসনের কার্যক্রমকে রাজনৈতিক চাপমুক্ত করে আরও দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনার আহ্বান জানান। প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য তারা নীতিমালা প্রণয়ন ও সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।