নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘বাংলাদেশে ভারত ও পাকিস্তানপন্থী রাজনীতির কোনো স্থান হবে না। আমরা শুধুমাত্র বাংলাদেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে রাষ্ট্রকে পুনর্গঠনের পথে এগিয়ে যাব।’ রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে এনসিপির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই নাহিদ ইসলাম জুলাই গণ–অভ্যুত্থানকারী ছাত্র–জনতা, শহীদ পরিবারের সদস্য এবং রাজনৈতিক দলের নেতাদের সংগ্রামী সালাম ও শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা অতীত নিয়ে পড়ে থাকতে চাই না। আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই, সম্ভাবনার বাংলাদেশের কথা বলতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘তুমি কে, আমি কে? বিকল্প, বিকল্প’—জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এই স্লোগানকে সামনে রেখে নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। আজকের মঞ্চ থেকে আমাদের শপথ—বাংলাদেশকে বিভাজিত হতে দেওয়া যাবে না।’ এরপর তিনি লিখিত ঘোষণাপত্র পাঠ করেন, যা পরে জাতীয় নাগরিক কমিটি সাংবাদিকদের সরবরাহ করে।
ঘোষণাপত্রে বলা হয়, জুলাই ২০২৪ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আত্মপ্রকাশ করছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের জনগণ দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করলেও স্বাধীনতার পাঁচ দশক পরও গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জিত হয়নি। বরং বিগত ১৫ বছরে দেশে একটি স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা কায়েম হয়েছে, যেখানে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে, বিরোধী মতের কণ্ঠরোধ করে, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, দুর্নীতি ও অর্থ পাচারকে রাষ্ট্রীয় সংস্কৃতিতে পরিণত করা হয়েছে।
জুলাই ২০২৪-এর ছাত্র-জনতার বিপুল আত্মত্যাগের মাধ্যমে এই ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটেছে। কিন্তু এ লড়াই শুধু সরকার পরিবর্তনের জন্য ছিল না, বরং একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার জন্য ছিল। জনগণের অধিকারভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যেই জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আত্মপ্রকাশ করেছে।
এনসিপি মনে করে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশের সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম সূচনা করেছে। গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক নতুন সংবিধান প্রণয়ন করাই এই দলের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। একই সঙ্গে জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গণতান্ত্রিক চরিত্র পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে পুনর্গঠন করা হবে। দারিদ্র্য, বৈষম্য ও ক্ষমতার অপব্যবহার থেকে জনগণকে সুরক্ষা প্রদান করাই হবে দলের অন্যতম অঙ্গীকার।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা এমন একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশ চাই যেখানে সমাজে ও রাষ্ট্রের সর্বস্তরে বিভেদের বদলে ঐক্য, প্রতিশোধের বদলে ন্যায়বিচার এবং পরিবারতন্ত্রের বদলে মেধা ও যোগ্যতার মূল্যায়ন হবে। আমাদের রাজনীতিতে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কোনো স্থান থাকবে না।’
অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রসঙ্গে এনসিপি জানায়, তারা এমন একটি অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তুলতে চায়, যেখানে কৃষি, সেবা ও উৎপাদন খাতের মধ্যে সমন্বয় থাকবে এবং সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা হবে। তারা বেসরকারি খাতের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থান গ্রহণের পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে চায়।
ঘোষণাপত্রের শেষে বলা হয়, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, জুলাই ২০২৪ গণ–অভ্যুত্থান শুধু একটি স্বৈরাচারী সরকারের পতন নয় এটি ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ নির্মাণেরও শপথ। তাই আসুন, আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এমন এক বাংলাদেশ গড়ে তুলি যেখানে প্রতিটি নাগরিকের কণ্ঠস্বর প্রতিধ্বনিত হবে। যেখানে ন্যায়বিচার, মানবাধিকার এবং সাম্য হবে রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি।’