রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করলো নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। অদ্য শুক্রবার বিকেলে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে দলের আহ্বায়ক হিসেবে মো. নাহিদ ইসলাম এবং সদস্যসচিব হিসেবে আখতার হোসেনের নাম ঘোষণা করা হয়। এ ঘোষণা দেন জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে শহীদ ইসমাঈল হোসেন রাব্বির বোন মীম আক্তার।
দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশে ভারত ও পাকিস্তানপন্থী রাজনীতির কোনো স্থান হবে না। আমরা কেবল বাংলাদেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে রাষ্ট্র বিনির্মাণ করব। পেছনের ইতিহাস নয়, আমরা সম্ভাবনার বাংলাদেশের কথা বলতে চাই।” তিনি আরও বলেন, “আজকের মঞ্চ থেকে শপথ নিচ্ছি—বাংলাদেশকে বিভাজিত করা যাবে না।”
আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে আংশিক কমিটি ঘোষণা করেন দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেন-
- জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক: সামান্তা শারমিন ও আরিফুল ইসলাম আদীব
- জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব: তাসনিম জারা ও নাহিদা সারওয়ার নিভা
- মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল): হাসনাত আবদুল্লাহ
- মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল): সারজিস আলম
- মুখ্য সমন্বয়ক: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
- জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক: আবদুল হান্নান মাসউদ
পরে দলের যুগ্ম আহ্বায়ক, যুগ্ম সদস্যসচিব ও যুগ্ম মুখ্য সংগঠকদের নামও ঘোষণা করা হয়।
দেশের বিভিন্ন জেলা ও ঢাকার বিভিন্ন থানা থেকে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন। বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে শুরু হওয়া এ আয়োজনে প্রথমেই পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পাঠ করা হয়—পবিত্র কোরআন থেকে পাঠ করেন তারেকুল ইসলাম (তারেক রেজা), গীতা থেকে অর্পিতা শ্যামা দেব, ত্রিপিটক থেকে আবির বড়ুয়া ও বাইবেল থেকে অলিক মৃ। এরপর জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয় এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এর আগে স্লোগান ও মিছিল নিয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে জড়ো হন ছাত্র-জনতা। পতাকা হাতে তরুণদের উচ্ছ্বাসে পুরো এলাকা মুখর হয়ে ওঠে। রাজধানীর বাইরেও বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ এই আয়োজনে অংশ নেন। রংপুর, খুলনা, নীলফামারী, জয়পুরহাট, রাজশাহী ও কক্সবাজারসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত মানুষকে মিছিল নিয়ে আসতে দেখা যায়।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। সামনের সারিতে বসেন:
- নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।
- জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।
- গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।
- বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা আকবর খান।
- বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের জেনারেল সেক্রেটারি মাওলানা জালাল উদ্দিন আহমেদ।
- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন্দ।
- হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির আহমদ আলী কাসেমী।
এছাড়াও বিকল্প ধারা বাংলাদেশের নির্বাহী সভাপতি মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, খেলাফত মজলিসের নেতা আহমেদ আবদুল কাদের, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব সাখাওয়াত হোসেন রাজী, ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান এ কে এম আজহারুল ইসলাম, এবি পার্টির নেতা দিদারুল আলম এবং জামায়াতের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন কূটনীতিকদের জন্যও আসন সংরক্ষিত ছিল। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনের পলিটিক্যাল কাউন্সিলর কামরান দাঙ্গাল এবং ঢাকায় ভ্যাটিকান সিটির রাষ্ট্রদূত।
জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশ নতুন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দলের নেতারা একটি বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেছেন। তরুণদের বিপুল সাড়া এবং রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ব্যক্তিদের উপস্থিতি ইঙ্গিত দেয়। নতুন এই দল ভবিষ্যতে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।