চিকিৎসাশিক্ষার মৌলিক আটটি বিষয়ের শিক্ষকদের জন্য শতভাগ প্রণোদনা ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এই পদক্ষেপটি সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অনুমোদন দিয়েছেন। এর লক্ষ্য হলো, মৌলিক বিষয়ে শিক্ষক সংকট কমিয়ে শিক্ষার মান উন্নয়ন করা।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শিক্ষা বিভাগের সংশ্লিষ্ট দপ্তর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। বর্তমানে, দেশে সরকারি মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ৩৭টি, যেখানে মৌলিক ৮টি বিষয়ে মোট ৪ হাজার ৭৭৮টি শিক্ষকপদ রয়েছে। তবে, বর্তমানে শিক্ষকের সংখ্যা ১ হাজার ৩০৬ জন, যা মোট পদ সংখ্যার মাত্র ২৭ শতাংশ। ফলে সরকারি মেডিকেল কলেজে শিক্ষার কার্যক্রম চলছে ৭৩ শতাংশ খালি পদ নিয়ে। বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে এই পরিস্থিতি আরও খারাপ বলে জানা গেছে।
এ প্রণোদনা ভাতার আওতায় আসবেন শুধুমাত্র সরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষকরা। এর মাধ্যমে তাঁদের বর্তমান বেতন পরিমাণের সমপরিমাণ মাসিক ভাতা দেওয়া হবে, যা তাঁদের সম্মানজনক জীবনযাপনে সহায়ক হবে বলে আশা করছে মন্ত্রণালয়।
মৌলিক আটটি বিষয়ে রয়েছে—অ্যানাটমি, ফিজিওলজি, প্যাথলজি, ফার্মাকোলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, মাইক্রোবায়োলজি, ফরেনসিক মেডিসিন এবং কমিউনিটি মেডিসিন। এসব বিষয়ের শিক্ষক সংকটের ফলে মেডিকেল শিক্ষার মৌলিক ভিত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হতে হলে ফিজিওলজি, বায়োকেমিস্ট্রি এবং প্যাথলজি বিষয়ে গভীর জ্ঞান থাকা প্রয়োজন, এবং সার্জন হতে হলে অ্যানাটমি ও প্যাথলজি সম্পর্কে দক্ষতা অর্জন আবশ্যক।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ‘মৌলিক বিষয়গুলো চিকিৎসাশিক্ষার মূল স্তম্ভ। তবে এসব বিষয়ে পড়ানো শিক্ষকদের জন্য ক্লিনিক্যাল ক্ষেত্রে কোনও পেশাগত সুযোগ না থাকায় তরুণ চিকিৎসকদের আগ্রহ কমে যায়। সেই কারণে তাঁদের জন্য বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
এতদিন মৌলিক বিষয়ের শিক্ষকদের জন্য প্রণোদনার উদ্যোগ নেওয়া হলেও, চিকিৎসকদের অসন্তুষ্টি থাকার কারণে সেগুলো কার্যকর হয়নি। তবে, এবার শতভাগ প্রণোদনা ভাতার ঘোষণা দেয়ার পর কোনো অসন্তুষ্টির খবর শোনা যায়নি।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘মৌলিক বিষয়গুলোর শিক্ষকদের জন্য প্রাইভেট প্র্যাকটিসের সুযোগ না থাকায়, তরুণ চিকিৎসকরা এগুলো পড়তে আগ্রহী হন না। এই ভাতা তাঁদের শিক্ষকতার প্রতি আগ্রহী করে তুলবে এবং চিকিৎসাশিক্ষার গুণগত মান বাড়াতে সহায়তা করবে।’
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মতে, এর ফলে দেশের চিকিৎসাশিক্ষা ও সেবার ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে এবং এটি ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে।