খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) একাডেমিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু হওয়ার পরও টানা তৃতীয় দিন ক্লাসে ফেরেননি শিক্ষকরা। শিক্ষকরা জানিয়ে দিয়েছেন, তাদের লাঞ্চনার ঘটনায় দোষী শিক্ষার্থীদের শাস্তি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস বা পরীক্ষা কোনো কিছুই নেবেন না। ফলে বিপাকে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ হাজার ৫৬৫ জন শিক্ষার্থী।
মঙ্গলবার সকালে কুয়েট ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ ক্লাসরুম তালাবদ্ধ ও ফাঁকা। শিক্ষকরা উপস্থিত না থাকায় শিক্ষার্থীরাও ক্লাসে যাননি। হলের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ কক্ষে অবস্থান করলেও কেউ কেউ হলের সামনে আড্ডা দিতে বা ক্যাম্পাসে হাঁটতে দেখা গেছে। ক্যাম্পাসের বাইরে থাকা শিক্ষার্থীরা আসেননি। প্রধান ফটকে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. ফারুক হোসেন জানান, গত ১৮ ফেব্রুয়ারির সংঘর্ষের সময় কিছু শিক্ষার্থী কয়েকজন শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। প্রশাসন বিষয়টি আমলে না নেওয়ায় তারা ক্লাসে ফিরে যেতে নারাজ। তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, আগামী সাত দিনের মধ্যে শাস্তি কার্যকর না হলে প্রশাসনিক কাজ থেকেও বিরত থাকবেন শিক্ষকরা।
অন্যদিকে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় ইতোমধ্যে দুই দফায় ক্ষমা চেয়েছে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা। তবে শিক্ষকদের অনড় অবস্থানে কুয়েটের শিক্ষা কার্যক্রম অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে চলা দেড় বছরের সেশনজটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও আড়াই মাসের স্থবিরতা। শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা ও উদ্বেগ বাড়ছে।
একাধিক শিক্ষার্থী জানান, তারা ইতোমধ্যে নিজেদের ভুলের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ছাত্র রাহাতুল ইসলাম বলেন, আমরা চাই দ্রুত পড়াশোনায় ফিরে যেতে, কারণ সেশনজটে আমাদের ভবিষ্যৎ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
কুয়েট প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, ক্যাম্পাসে চলমান সংকটে শিক্ষা ও প্রশাসনিক সব কার্যক্রমই ভেঙে পড়েছে। স্থবির হয়ে গেছে অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ অন্যান্য কার্যক্রমও।
রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. আনিসুর রহমান ভুঞা এবং ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল্লাহ ইলিয়াছ আক্তার জানান, উপাচার্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানে কাজ করে যাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, গত ১৮ ফেব্রুয়ারির সংঘর্ষের পর থেকেই কুয়েটে বন্ধ রয়েছে সব ধরনের ক্লাস ও পরীক্ষা। এমন দীর্ঘ সময় ধরে একাডেমিক অচলাবস্থা কুয়েটের ইতিহাসে নজিরবিহীন।