ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) একযোগে দেশের ছয়টি সীমান্তপথ দিয়ে নারী-শিশুসহ অন্তত ১০৫ বাংলাদেশি নাগরিককে বাংলাদেশে জোরপূর্বক পাঠিয়েছে। বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত কুমিল্লা, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, মৌলভীবাজার, খাগড়াছড়ি ও ফেনীর সীমান্ত দিয়ে এসব পুশ-ইনের ঘটনা ঘটে। সংশ্লিষ্ট সীমান্ত পয়েন্টগুলো থেকে তাঁদের তাৎক্ষণিকভাবে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
বিজিবি জানিয়েছে, এসব ব্যক্তিদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। প্রাপ্তবয়স্করা বেশিরভাগই আগে থেকে ভারতে অবৈধভাবে কাজ করছিলেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
সীমান্তভিত্তিক পরিস্থিতি:
পঞ্চগড়: জয়ধরভাঙ্গা সীমান্ত দিয়ে বৃহস্পতিবার ভোরে ২১ জনকে ঠেলে পাঠায় বিএসএফ। তাঁদের মধ্যে ১৪ শিশু-কিশোর, ৬ নারী ও ১ তরুণ। বিজিবির নীলফামারী ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক জানান, তাঁদের গুজরাট থেকে আটক করে বিমান ও বাসযোগে সীমান্তে এনে পুশ-ইন করা হয়।
লালমনিরহাট: পাটগ্রামের গাটিয়ারভিটা সীমান্ত দিয়ে গভীর রাতে ২০ জনকে পাঠানো হয়, যাঁদের মধ্যে ১১ নারী, ৭ শিশু ও ২ পুরুষ রয়েছেন। তাঁরা জানান, ২০-২৫ দিন ভারতের কারাগারে ছিলেন।
মৌলভীবাজার: কুলাউড়ার মুরইছড়া সীমান্ত দিয়ে ৭ জনকে ঠেলে পাঠানো হয়, যাঁরা সবাই ইটভাটার শ্রমিক ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ২ পুরুষ, ২ নারী ও ৩ শিশু রয়েছে।
ফেনী: ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া সীমান্ত দিয়ে ৩৯ জনকে বাংলাদেশে পাঠায় বিএসএফ। তাঁদের মধ্যে ৬টি পরিবারের ২৪ জন ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজী দিয়ে প্রবেশ করেন। স্থানীয় পুলিশ তাঁদের হেফাজতে রেখেছে।
কুমিল্লা: আদর্শ সদর উপজেলার গোলাবাড়ী সীমান্ত দিয়ে ১৩ জনকে ঠেলে পাঠানো হয়। বিজিবি জানায়, তাঁদের মধ্যে ৩ জন পুরুষ, ৩ জন নারী ও ৭ শিশু রয়েছে।
খাগড়াছড়ি: রামগড় সীমান্ত দিয়ে পাঁচজনকে ঠেলে পাঠানো হয়। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ভারতের হরিয়ানায় ইটভাটায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন তাঁরা। রাতে ত্রিপুরা সীমান্ত দিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলে দেওয়া হয় বলে দাবি তাঁদের।
বিজিবি সূত্র জানায়, কেবল কুমিল্লা ও ফেনী সীমান্ত দিয়েই এক রাতে ৫২ জন বাংলাদেশিকে ঠেলে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে ১৯ জন পুরুষ, ১৫ নারী এবং ১৮ শিশু-কিশোর। আটককৃতদের পরিচয় যাচাই ও জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
স্থানীয় প্রশাসন ও বিজিবি জানিয়েছে, এসব ঘটনায় কূটনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। মানবিক দিক বিবেচনায় আটক ব্যক্তিদের খাদ্য ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নিয়মিতভাবে পুশ-ইনের ঘটনা বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে উদ্বেগ তৈরি করছে। সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও মানবাধিকার ইস্যুতে এমন আচরণ অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করছেন অনেকেই।