জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) এমন একটি ভুল- যা শুনে কেউই বিশ্বাস করতে চাইবেন না। সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার এক দিনমজুরের পরিচয়পত্র অনুযায়ী, তার বয়স ১০৭ বছর, অথচ তার বাবার বয়স মাত্র ৫৮ বছর।
এই অবিশ্বাস্য তথ্যের বাস্তব ভুক্তভোগী হয়েছেন সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের বিনানই গ্রামের মো. জিন্নাহ। ছেলের স্কুলে ভর্তি করাতে গিয়ে ভুলটি প্রথম ধরা পড়ে। এরপর দুই বছর ধরে সংশোধনের জন্য উপজেলা নির্বাচন অফিসসহ একাধিক সরকারি দপ্তরে ঘুরেও সমাধান পাননি তিনি।
জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী, মো. জিন্নাহর জন্ম ৭ সেপ্টেম্বর ১৯১৮। ফলে বর্তমানে তার বয়স ১০৭ বছর! অথচ বাস্তবে তার জন্ম ১৯৮৫ সালে, বয়স ৩৯ বছর। অন্যদিকে তার বাবা কালু পরামানিকের জন্ম ৯ জুন ১৯৬৭, বয়স ৫৮ বছর এবং মা রবিয়া খাতুনের জন্ম ১১ জুন ১৯৭২, বয়স ৫৩ বছর। এই হিসেবে সন্তানের বয়সই বাবার চেয়ে ৪৯ বছর বেশি, আর মায়ের চেয়ে ৫৪ বছরের বড়!
ভুল বয়সের কারণে জিন্নাহ এখন নিজের ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করাতেও পারছেন না। কারণ ছেলের জন্মনিবন্ধন করতে গেলে অনলাইনে বাবা-মায়ের জন্মনিবন্ধনের তথ্য প্রয়োজন হয়, যা এনআইডির ভুল তথ্যের কারণে যাচাই হয়ে উঠছে অসম্ভব।
জিন্নাহ জানান, তিনি একটি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে গরু কিনে সংসার চালাতে চেয়েছিলেন। ঋণের জন্য প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র জমা দিলেও এনআইডিতে বয়স ১০৭ দেখানোয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ঋণ মঞ্জুর করেনি।
তার কথায়,
“আমি একজন দিনমজুর। ভোটার আইডি কার্ডের তেমন প্রয়োজন হয় না বলে এতদিন ভুলটা ধরা পড়েনি। এখন ছেলে ভর্তি করাতে গিয়েই বিপদে পড়েছি। দুই বছর ঘুরেও কাজ হয়নি।”
পরিবারের সদস্যরাও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
“এত বড় ভুল হয় কীভাবে? মা-বাবার চেয়ে সন্তানের বয়স দ্বিগুণ? এটার কারণে শুধু ভোগান্তি, আর কত জায়গায় ঘুরব?”
সিরাজগঞ্জ জেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ আমিনুর রহমান মিঞা বলেন,
“সম্ভবত এটা টাইপিং মিসটেক। জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য জন্মনিবন্ধন, মা-বাবার এনআইডি ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের প্রত্যয়নপত্রসহ অনলাইনে আবেদন করলে ঠিক হয়ে যাবে।”
তবে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে- জন্ম সাল ১৯১৮ টাইপ হয়ে গেল কীভাবে? একজন সাধারণ মানুষের ভুলে এমন ভোগান্তি হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ বা তদারকি কোথায়?
সংশোধনের ‘সহজ উপায়’ থাকলেও বাস্তবে সেটি কতটা কার্যকর- তা মো. জিন্নাহর অভিজ্ঞতা থেকেই বোঝা যায়। দুই বছরেও সংশোধন না হওয়া তার উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সিস্টেমের সীমাহীন জটিলতার।
সিরাজগঞ্জের এই ঘটনা দেশের এনআইডি ব্যবস্থাপনায় ত্রুটিপূর্ণ তথ্য ও সেবাপ্রক্রিয়ার অব্যবস্থাপনার একটি দৃষ্টান্ত। এ ধরনের ভুল শুধু ব্যক্তির নয়, পুরো পরিবার এবং পরবর্তী প্রজন্মের জীবন ও ভবিষ্যৎকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
প্রশ্ন উঠছে- তথ্যভিত্তিক এই সেবায় প্রশাসনিক ভুলে কেন বারবার সাধারণ মানুষকে ন্যায্য অধিকার পেতে এতটা সংগ্রাম করতে হয়? দায়িত্ব এড়ানো নয়, সময়মতো তথ্য সংশোধন নিশ্চিত করাই এখন সময়ের দাবি।