চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতারের সঙ্গে উপাচার্য কার্যালয়ে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ে জড়িয়েছে কিছু শিক্ষার্থী। একটি পদোন্নতি নিয়ে বিতর্কিত অবস্থানের জেরে শুক্রবার বিকেলে সংগঠিত এ ঘটনার একটি ভিডিও শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে শিক্ষার্থীদের একজন উপাচার্যকে উদ্দেশ করে বলতে শোনা যায়, ‘আপনি নিজ যোগ্যতায় বসেননি, আপনাকে আমরা বসিয়েছি, আপনি আমাদের কথা শুনতে বাধ্য।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সংস্কৃত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কুশল বরণ চক্রবর্তীর পদোন্নতি বাতিল এবং তাঁকে চাকরিচ্যুত করার দাবিতে ইসলামী ছাত্রশিবির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতা-কর্মীরা শুক্রবার বিকেলে উপাচার্য কার্যালয়ে যান। তাদের দাবি, কুশল বরণ ফ্যাসিবাদী ঘরানার শিক্ষক। তাঁর পদোন্নতি বাতিল না করা হলে তা হবে ‘জুলাই বিপ্লবের সঙ্গে বেইমানি’।
ভিডিওতে দেখা যায়, ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ও সাবেক ছাত্র অধিকার পরিষদ নেতা তাহসান হাবীব উপাচার্যকে বলেন, ‘স্যার, আপনাকে আমরা বসিয়েছি। আপনি নিজ যোগ্যতায় বসেননি।’ এ সময় সাবেক শিবির নেতা শাখাওয়াত হোসেন একই ধরনের মন্তব্য করেন। উত্তরে উপাচার্য যখন বলেন, ‘না’, তখন উপস্থিত ছাত্রনেতারা একযোগে হইচই শুরু করেন।
ঘটনার একপর্যায়ে উপাচার্য সাংবাদিকদের মুঠোফোন ক্যামেরা বন্ধ করতে বলেন। পুরো পরিস্থিতিতে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের একজন আঙুল উঁচিয়ে চিৎকার করতেও দেখা গেছে।
ঘটনার বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতারের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
তবে শাখাওয়াত হোসেন বলেন, উত্তেজনার মুহূর্তে কথাটি বলা হয়েছে। ‘খুব বেশি ভেবে বলেননি।’ অপরদিকে তাহসান হাবীব বলেন, ‘উপাচার্য অযোগ্য বোঝাতে চাইনি। বোঝাতে চেয়েছি, তিনি নিয়মতান্ত্রিকভাবে আসেননি। আন্দোলন, রক্ত এবং জুলাই শহীদদের বিপ্লবের পথ মাড়িয়ে তিনি পদে এসেছেন। সেখানেই ছিল মূল আপত্তি।’ তিনি উপাচার্যের কাছে দুঃখ প্রকাশও করেছেন বলে জানান।
তাহসান বর্তমানে আর ছাত্র অধিকার পরিষদের সঙ্গে জড়িত নন বলেও জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা। বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক তামজিদ উদ্দিন বলেন, অন্য সংগঠনের প্রভাবে থাকার কারণে তাহসানকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পদত্যাগের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়। একদিনের ব্যবধানে উপাচার্য, সহ-উপাচার্য, ছাত্র উপদেষ্টা, পরিবহন প্রশাসক, প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্য ও হল প্রাধ্যক্ষসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে থাকা প্রায় সব কর্মকর্তা পদত্যাগ করেন।
তবে উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী সিনেটের ভূমিকা থাকার কথা থাকলেও, অতীতে তা উপেক্ষা করে একাধিকবার সরাসরি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে দীর্ঘদিনের অসন্তোষ।