অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, বিগত ১৭ বছরে স্বজন হারানোর বেদনা, অনিয়ম ও অবিচারের বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে, তার বহিঃপ্রকাশ হতে পারে মব সন্ত্রাস। তবে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “কোনোভাবেই মব সন্ত্রাস গ্রহণযোগ্য নয়। এটি জুলাই আন্দোলনের চেতনার পরিপন্থী।” সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদার বিরুদ্ধে সম্প্রতি সংঘটিত মব হামলার প্রসঙ্গে তিনি সতর্ক করেন, এ ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হবে।
শনিবার (৫ জুলাই) রাজধানীর এফডিসিতে ‘ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’ আয়োজিত ছায়া সংসদে এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানের বিষয় ছিল- “জুলাই আন্দোলনের চেতনা বাস্তবায়নে সরকার অপেক্ষা নাগরিক সমাজের ভূমিকা বেশি”।
তিনি বলেন, “ফ্যাসিস্ট আমলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, আইনজীবী, সাংবাদিকসহ তথাকথিত সুশীল সমাজের অনেকে স্বৈরাচারের পদলেহন করে একনায়কতন্ত্রকে শক্তিশালী করেছিলেন। তারা সরাসরি সরকারের অংশ হয়ে বাংলাদেশকে ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রে পরিণত করতে কাজ করেছে।”
জাতীয় ঐক্য গঠনের প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মতপার্থক্য থাকলেও তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান সম্ভব। তবে “ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সবদলই ঐক্যবদ্ধ”- এটা হলো জুলাই চেতনার অন্যতম ভিত্তি।
তিনি আরো বলেন, “আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দণ্ডিত ব্যক্তিরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। একইসঙ্গে যারা মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে যুক্ত সংগঠনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত, তাদেরও বিচারের আওতায় আনা হবে।”
ছায়া সংসদের আলোচনায় ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ আরো কড়া ভাষায় বিগত সরকারের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “জুলাই হত্যাকাণ্ডের দায় বিগত সরকার কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। এসব হত্যাকাণ্ড তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি ছাড়া হয়নি।” তিনি আরো বলেন, বিগত ১৫ বছরে বিগত সরকার গুম, খুন, টর্চারসেল ও ‘আয়নাঘর’ তৈরি করে যে নির্যাতন চালিয়েছে তা ক্ষমার অযোগ্য।
তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে বলেন, তিনি স্বৈরাচারের প্রতীক, ফ্যাসিস্টদের মুখপাত্র এবং উপমহাদেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কিত শাসক, যিনি জনরোষে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।
আরো বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থান প্রমাণ করেছে, দেশের প্রকৃত মালিক জনগণ। জনগণ আর কখনোই ফ্যাসিস্ট শাসন মেনে নেবে না।” কিরণ বলেন, আগামীতে যারা ক্ষমতায় আসবেন, তাদের মানবিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র গঠনে কাজ করতে হবে।
তিনি জানান, বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির মধ্যে কিছু মতভিন্নতা থাকলেও বিগত সরকার ব্যতীত সব রাজনৈতিক শক্তির ঐক্য আজ সময়ের দাবি।
ছায়া সংসদ প্রতিযোগিতায় শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিক দল বিজয়ী হয়, যারা ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকদের পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হন। অনুষ্ঠানে বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, উপসচিব রোকেয়া পারভীন জুই, উন্নয়ন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক হাসান জাবেদ ও আহমেদ সরওয়ার। বিতার্কিকদের হাতে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র তুলে দেওয়া হয়।