স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পর এবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুটি বিভাগ একীভূত করার কাজ শুরু হয়েছে। জনসাধারণের জন্য চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা এবং বিভাগগুলোর মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর উদ্দেশ্যেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রস্তাবটি শিগগিরই প্রি-এনআইসিএআর (জাতীয় প্রশাসনিক সংস্কার বাস্তবায়ন কমিটি) বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সাবেক সচিব ২৮ আগস্ট অবসর নেওয়ার পর সেখানে নতুন কোনো সচিব নিয়োগ করা হয়নি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেছেন, “সরকার নীতিগতভাবে এই একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে।”
মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে পরিচালিত প্রি-এনআইসিএআর কমিটি নতুন মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা ও উপজেলা গঠন এবং জনবল অনুমোদনের প্রস্তাব পর্যালোচনা করে। এরপর এসব বিষয়ে সুপারিশ পাঠানো হয় প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন এনআইসিএআর সভায়।
সেপ্টেম্বরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা জননিরাপত্তা ও সুরক্ষা সেবা বিভাগকে একীভূত করা হয়েছিল। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ক্ষেত্রে, ২০১৭ সালে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগে ভাগ করা হয়েছিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, “বিভাগ আলাদা থাকায় কোনো সুবিধা হয়নি, বরং সমন্বয়হীনতা বেড়েছে এবং একই কাজ বারবার করা হয়। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দুটি বিভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে; পরিবার পরিকল্পনা স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণের আওতায় চলে যায়, আর কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অধীনে থাকে। একইভাবে মেডিকেল কলেজগুলো স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণের অধীনে এবং হাসপাতালগুলো স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অধীনে থাকে, যা সমন্বয়হীনতা ও কাজের পুনরাবৃত্তির সুযোগ সৃষ্টি করেছে।”
অধ্যাপক হামিদ আরও জানান, স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন স্বাস্থ্যখাতে স্থায়ী পরিবর্তনের সুপারিশ করেছিল। তবে কমিশনের প্রস্তাব বাস্তবায়নে তেমন অগ্রগতি দেখা যায়নি। তাই এই দুটি বিভাগের একীভূতকরণ সমন্বয় বাড়ানো এবং সেবা নিশ্চিত করার জন্য বুদ্ধিমানের পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বিভাগের একজন যুগ্ম সচিব বলেন, “সাবেক সচিব সরোয়ার বারীর অবসরের পর নতুন কোনো সচিব নিয়োগ করা হয়নি, কারণ একীভূত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।”
ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলছেন, “এই একীভূতকরণের মূল লক্ষ্য হলো উন্নত সমন্বয় নিশ্চিত করা এবং কাজের পুনরাবৃত্তি এড়ানো।”

