দেশের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন কোথায় হবে—এই প্রশ্ন ঘিরে কয়েক মাস ধরেই বিভিন্ন দপ্তরে আলোচনার ঝড় বইছে। সরকারের একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি প্রথমে প্রস্তাব করেছিল, জাতীয় সংসদের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের বাসভবনকে একীভূত করে তা নতুন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে রূপ দেওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা এবং হেয়ার রোডের ২৪ ও ২৫ নম্বর বাংলো নিয়েও ভাবা হয়েছিল সমন্বিত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে।
তবে শেষ পর্যন্ত কোনোটিই বাস্তবে রূপ পায়নি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভাষায়, এখনো পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। আলোচনায় এমনটিও উঠে এসেছে যে, নতুন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঠিক করার দায়িত্ব আগামী সরকারের ওপরই ছেড়ে দেওয়া হতে পারে।
গত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শাসনামলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসস্থান ছিল গণভবন। কিন্তু গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ক্ষুব্ধ জনতা গণভবনে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এরপর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ সিদ্ধান্ত নেয় যে গণভবনকে রূপান্তর করা হবে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘরে’। সেখানে পিলখানা হত্যাকাণ্ড, গুম-খুন, আয়নাঘর, ভোট কারচুপি—শেখ হাসিনার দীর্ঘ ক্ষমতাকাল ঘিরে আলোচিত ঘটনাগুলোর দলিল উপস্থাপন করা হবে। বর্তমানে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনাই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
সরকারি সূত্র জানায়, গত ৭ জুলাই প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবকে প্রধান করে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়। তারা নতুন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সম্ভাব্য স্থানগুলো পর্যালোচনার দায়িত্ব পান। শুরুতে যমুনা বা হেয়ার রোডের বাংলোগুলো বিবেচনায় থাকলেও পরে নজর যায় জাতীয় সংসদ এলাকার স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের বাড়ির দিকে। কমিটির সদস্যরা সেপ্টেম্বর মাসে দুটি ভবনই সরেজমিনে পরিদর্শন করেন।
কিন্তু পরে বিষয়টি জটিলতায় জড়িয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রীকে সংসদ এলাকােই রাখার পরিকল্পনা লুই আই কানের নকশার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে—এমন উদ্বেগ উঠে আসে। অন্যদিকে, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের বাসভবন প্রধানমন্ত্রীর জন্য বরাদ্দ করা হলে আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ও নতুন সংসদের সামনে তাঁদের জন্য আলাদা বাড়ি বরাদ্দের চাপ তৈরি হবে। এত স্বল্প সময়ে সেই ব্যবস্থা করা বাস্তবে বেশ কঠিন। শুধু প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন নয়—তাঁর দপ্তরের কর্মকর্তা, নিরাপত্তাকর্মী—এদের আবাসনের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ, যার জন্য অতিরিক্ত অবকাঠামো প্রয়োজন।
এছাড়া বাজেটীয় দিকটিও গুরুত্বপূর্ণ বাধা। প্রধানমন্ত্রীর জন্য নতুন বাসভবন নির্মাণের যেকোনো প্রকল্প নিতে হলে তা স্থান পেতে হবে এডিপিতে। কিন্তু চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন সংক্রান্ত কোনো প্রকল্প নেই—না গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনায়, না জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের জমা দেওয়া এডিপিতে। ফলে বাস্তব অর্থে এখনই কোনো নির্মাণকাজ শুরুর সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত আগামী নির্বাচনে আসা নতুন সরকারের হাতেই থাকবে। কোথায় হবে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন—তা নির্ধারণে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
সব মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ভবিষ্যৎ বাসভবন এখনো অনিশ্চয়তার আবরণেই ঢাকা। সরকারের অভ্যন্তরীণ আলোচনা চলছে, কিন্তু কোনো সিদ্ধান্তের দিকে পরিস্থিতি এখনো ঝুঁকছে না।

