কক্সবাজার শহরে নদীবন্দরের সীমানা নির্ধারণকে কেন্দ্র করে আজ রোববার উত্তেজনার সৃষ্টি হয় স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে। দুপুরে শহরের বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধের মুখে বিআইডব্লিউটিএ (বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ) কর্মকর্তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়ে পিছিয়ে আসেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, কস্তুরাঘাট এলাকায় নদীবন্দরের সীমানা নির্ধারণে বিআইডব্লিউটিএর একটি দল আসবে—এমন খবর ছড়ালেই সকাল থেকেই এলাকাবাসী জড়ো হতে শুরু করেন। সকাল ৯টা থেকে বদরমোকাম, কস্তুরাঘাট ও পেশকারপাড়ার বাসিন্দারা গাছের গুঁড়ি ফেলে এবং টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। এতে ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বেলা ১১টার দিকে একই এলাকায় কয়েক শ নারী–পুরুষ মানববন্ধনে অংশ নেন। পরে দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ, র্যাব, আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে উত্তেজনা বেড়ে যায়। শেষ পর্যন্ত সীমানা নির্ধারণের কাজ স্থগিত রেখে তাঁরা ফিরে যান।
বিআইডব্লিউটিএ ও জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, চলতি বছরের ১ থেকে ৫ সেপ্টেম্বর বাঁকখালী নদীর ওই অংশে উচ্ছেদ অভিযানে ৪৯৬টি অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে প্রায় ৬৩ একর জমি উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার জমি পুনর্দখল ঠেকাতে কাঁটাতারের বেড়া ও সীমানা পিলার স্থাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ-
অবরোধকারীদের দাবি, উচ্ছেদ হওয়া স্থানের মধ্যে ব্যক্তিমালিকানাধীন খতিয়ানভুক্ত জমিও রয়েছে। পারুল আক্তার নামের এক নারী বলেন, ‘আমাদের খতিয়ান আছে, খাজনাও দিচ্ছি। ক্ষতিপূরণ বা আলোচনা ছাড়া ঘরবাড়ি ভাঙা বা কাঁটাতার বসানো মেনে নেওয়া যায় না।’
সাবিনা ইয়াছমিন নামের আরেক নারী বলেন, এলাকার অনেক পাকা ভবন তৈরি হওয়ার সময় কেউ বাধা দেননি, অথচ হঠাৎ উচ্ছেদে অনেকে বড় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ক্ষতিপূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা স্থায়ী কোনো কাঠামো হতে দেবেন না বলেও জানান।
স্থানীয়দের মানববন্ধনে বিএনপি ও সহায়ক সংগঠনের কয়েকজন নেতা–কর্মীও উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের একজন, কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও জেলা মহিলা দলের সভাপতি নাসিমা আকতার বলেন, বাঁকখালী নদী দখল নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের তিনটি মামলা রয়েছে এবং বিআইডব্লিউটিএর উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ রাখতে হাইকোর্টেও তিনটি মামলা চলছে। তাঁর অভিযোগ, মামলা নিষ্পত্তির আগেই ঘরবাড়ি উচ্ছেদ এবং জমি কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে ফেলা অন্যায়।
জেলা যুবদলের প্রচার সম্পাদক ও আইনজীবী মো. ইসমাইল বলেন, উচ্ছেদ করা এলাকায় বহু মানুষের খতিয়ানভুক্ত জমি আছে। উচ্ছেদ অভিযানের বিরুদ্ধে তিনি ও আরো ৭৭ জন হাইকোর্টে মামলা করেছেন। আদালত উচ্ছেদ অভিযান স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছেন, কিন্তু বিআইডব্লিউটিএ সেই আদেশ অমান্য করছে বলে দাবি করেন তিনি।
বিআইডব্লিউটিএর বক্তব্য-
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ অস্বীকার করে কক্সবাজার নদীবন্দরের পোর্ট অফিসার মো. আবদুল ওয়াকিল বলেন, অবরোধকারীদের বড় অংশ ভাসমান, যাঁদের জমির বৈধ কাগজ নেই। কিছু দখলদার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাঁদের ব্যবহার করেছেন। তাঁর ভাষায়, হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ নির্দিষ্ট কিছু দাগের জমি পর্যন্ত সীমিত এবং বন্দরের সীমানা নির্ধারণে তা বাধা নয়।
তিনি আরো বলেন, উদ্ধারকৃত জমি পুনর্দখল ঠেকাতে পিলার বসানো জরুরি, কারণ ২০২৩ সালেও উদ্ধার জমি ফের দখল হয়ে গিয়েছিল।

