রেলের লাগেজ ভ্যান প্রকল্পের নামে রাষ্ট্রের ৩৫৮ কোটি টাকার ক্ষতিসাধনের অভিযোগে সংস্থাটির সাবেক ডিজি শামসুজ্জামানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রোববার (১৬ নভেম্বর) সংস্থাটির উপ-সহকারী পরিচালক হাবিবুর রহমান বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে রেলের সাবেক ডিজি শামসুজ্জামান, সাবেক মহাব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান, হারুন অর রশীদ, প্রকল্প পরিচালক আব্দুল মতিন চৌধুরীসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালে পণ্য পরিবহন বাড়ানোর উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ে ১২৫টি লাগেজ ভ্যান কিনেছিল। এর জন্য ব্যয় হয় ৩৫৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। তবে যথাযথ পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের অভাবে এই ভ্যানগুলো এখন প্রায় নিষ্ক্রিয় অবস্থায় পড়ে আছে। উদ্বোধনের পর লক্ষ্য অনুযায়ী আয় না বাড়ায়, বরং কমেছে। লাগেজ ভ্যানগুলো মূলত দ্রুত নষ্ট হওয়া পণ্য পরিবহনের জন্য কেনা হয়েছিল।
নথিপত্র অনুযায়ী, প্রকল্পে সমীক্ষা থাকলেও কৃষক বা ব্যবসায়ীদের চাহিদা, বাজার যাচাই ছাড়াই ব্যক্তিস্বার্থে ভ্যান কেনা হয়। রেলের কিছু কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের যোগসাজশে এ ব্যয় করা হয়।
রেল মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সম্প্রতি বলেছেন, অপ্রয়োজনীয় বিদেশি ঋণে কেনাকাটা যারা করেছেন, তাদের খুঁজে বের করে জবাবদিহি করা হবে।
অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শে এসব লাগেজ ভ্যান কেনা হয়েছিল। উদ্বোধনের সময় তৎকালীন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন দাবি করেছিলেন, সরকারের কৃষিবান্ধব নীতির অংশ হিসেবে এই ভ্যান কেনা হয়েছে।
চীনের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ২০২০ সালের ৩১ আগস্ট চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিটি ব্রডগেজ লাগেজ ভ্যানের দাম ছিল ৩ কোটি ৫ লাখ টাকা এবং প্রতিটি মিটার গেজ লাগেজ ভ্যানের দাম নির্ধারিত হয়েছিল ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। পরে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ১২৫টি ভ্যান রেলওয়ের বহরে যুক্ত হয়।
রেলওয়ে ২০২০ সালে ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন’ চালু করেছিল। ২০২৪ সাল পর্যন্ত আম পরিবহনে লোকসান হয়েছে ১ কোটি ৮২ হাজার ৮৬০ টাকা। তারপরও লাভ দেখিয়ে নতুন লাগেজ ভ্যান কেনা হয়। ‘কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন’ চালু করা হলেও- এক সপ্তাহের মাথায় তা বন্ধ করতে হয়, ফলে রেলওয়ের লোকসান হয় বিশাল অঙ্কের।

