Close Menu
Citizens VoiceCitizens Voice
    Facebook X (Twitter) Instagram YouTube LinkedIn WhatsApp Telegram
    Citizens VoiceCitizens Voice Tue, Dec 9, 2025
    • প্রথমপাতা
    • অর্থনীতি
    • বাণিজ্য
    • ব্যাংক
    • পুঁজিবাজার
    • বিমা
    • কর্পোরেট
    • বাংলাদেশ
    • আন্তর্জাতিক
    • আইন
    • অপরাধ
    • মতামত
    • অন্যান্য
      • খেলা
      • শিক্ষা
      • স্বাস্থ্য
      • প্রযুক্তি
      • ধর্ম
      • বিনোদন
      • সাহিত্য
      • ভিডিও
    Citizens VoiceCitizens Voice
    Home » ভুট্টা চাষে বদলাচ্ছে গ্রাম বাংলার অর্থনীতি
    অর্থনীতি

    ভুট্টা চাষে বদলাচ্ছে গ্রাম বাংলার অর্থনীতি

    কাজি হেলালJuly 14, 2025
    Facebook Twitter Email Telegram WhatsApp Copy Link
    দারিদ্র্য নয়, বৈষম্যই বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে
    Share
    Facebook Twitter LinkedIn Telegram WhatsApp Email Copy Link

    বাংলাদেশের কৃষিতে এখন পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। একসময় ধান ও গমই ছিল কৃষকের মূল ভরসা, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চাষের ধরনেও আসছে বৈচিত্র্য। উৎপাদন খরচ বেশি, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, জমির সংকট ও বাজারে অনিশ্চয়তা—এইসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অনেক কৃষক এখন খুঁজছেন লাভজনক ও টেকসই বিকল্প। ঠিক এই সময়ে কৃষকের আশা হয়ে উঠেছে ভুট্টা।

    ভুট্টা এমন এক ফসল, যার চাষে খরচ কম, ফলন বেশি, পরিচর্যা সহজ এবং বাজারও নিশ্চিত। শুধু খাদ্যশস্য নয়, পোলট্রি, মাছ ও গবাদিপশুর খাদ্য থেকে শুরু করে শিল্পখাতে কাঁচামাল হিসেবেও ভুট্টার ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। ফলে দেশে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন চাহিদা ও সম্ভাবনার ক্ষেত্র। বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চল ও চরাঞ্চলে কৃষকেরা এখন ধান বা গমের জায়গায় বেছে নিচ্ছেন ভুট্টা চাষ। কারণ এতে আয় বেশি এবং ঝুঁকি কম।

    এই প্রবণতা শুধু কৃষকের আয় বাড়াচ্ছে না, বরং দেশীয় শিল্পেও নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করছে, কমিয়ে দিচ্ছে আমদানির চাপ এবং গড়ে তুলছে হাজার কোটি টাকার প্রাণিখাদ্য শিল্প। বাস্তবতা বলছে ভুট্টার আবাদ এখন আর কেবল একটি ফসল উৎপাদনের বিষয় নয়, এটি হয়ে উঠছে বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতির ভবিষ্যতের গুরুত্বপূর্ণ একটি দিকচিহ্ন।

    বাংলাদেশে ভুট্টার অভূতপূর্ব উত্থান: ভুট্টা এখন বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসলে পরিণত হয়েছে। দিন দিন এই ফসলের চাষ বাড়ছে এবং এর উৎপাদনেও এসেছে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮–১৯ অর্থবছরে দেশে প্রায় ৫ লাখ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছিল এবং উৎপাদন হয়েছিল ৪৭ লাখ টনের মতো। সেখানে ২০২৩–২৪ অর্থবছরে এসে ভুট্টার আবাদি জমি ২৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৪২ হাজার হেক্টরে, আর উৎপাদন পৌঁছেছে ৬৮ লাখ ৮৪ হাজার টনে।

    সরকার ২০২৪–২৫ অর্থবছরের জন্য ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৬ লাখ ৫১ হাজার হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭১ লাখ ৬০ হাজার টন। দেশে এখন বছরে ভুট্টার চাহিদা ৭০ থেকে ৭৫ লাখ টনের মতো, যার একটি বড় অংশ ব্যবহৃত হয় পোলট্রি, গবাদিপশু ও মাছের খাদ্য তৈরিতে। ফলে ভুট্টা খাদ্য নিরাপত্তা এবং প্রাণিখাদ্য শিল্প এই দুই ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

    ভুট্টা চাষ বাড়ার মূল কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে এর লাভজনকতা, সহজ চাষপদ্ধতি এবং উচ্চ ফলনশীলতা। ধানের তুলনায় ভুট্টা চাষে পানির প্রয়োজন কম, পরিচর্যা সহজ, আর ফলনও বেশি। সেই সঙ্গে দেশে পোলট্রি ও পশুপালন শিল্পের ক্রমবর্ধমান চাহিদা কৃষকদের ভুট্টা চাষে আরও আগ্রহী করে তুলেছে।

    সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, গত এক দশকে দেশে ভুট্টার উৎপাদন দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ২০১৫–১৬ অর্থবছরে যেখানে উৎপাদন ছিল ২৭ লাখ ৫৯ হাজার টন, সেখানে ২০২৩–২৪ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৮ লাখ ৮৪ হাজার টনে। এমনকি ২০২০–২১ অর্থবছরেও উৎপাদন ছিল ৫৬ লাখ ২৭ হাজার টন। তবে চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরে বৈরী আবহাওয়ার প্রভাবে উৎপাদন কিছুটা কমে ৬৬ লাখ টনের আশেপাশে দাঁড়িয়েছে।

    উৎপাদনের পাশাপাশি আবাদি জমির পরিমাণও ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। ২০১১–১২ অর্থবছরে যেখানে ভুট্টার আবাদ হতো ২ দশমিক ৮৩ লাখ হেক্টরে, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫ দশমিক ৭৮ লাখ হেক্টরে।

    ভুট্টার আমদানির দিকেও নজর দিলে ইতিবাচক পরিবর্তন চোখে পড়ে। এক সময় আমদানির উপর অনেকটাই নির্ভর করতে হতো। ২০২০–২১ অর্থবছরে আমদানি ছিল ২১ লাখ ১৪ হাজার টন। অথচ ২০২৩–২৪ অর্থবছরে তা কমে হয়েছে সাড়ে ৪ লাখ টনের মতো। তবে চলতি অর্থবছরে উৎপাদন কিছুটা কম হওয়ায় আমদানি আবার কিছুটা বেড়ে ১৪ লাখ টনে পৌঁছেছে।

    খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে ভুট্টার বাজার মূলতঃ প্রাণিখাদ্য বা ফিডশিল্প ঘিরেই গড়ে উঠেছে। গত দেড় দশকে দেশে পোলট্রি ও পশুপালন শিল্পে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। ফিড কারখানাগুলো খামারিদের বাকিতে খাদ্য সরবরাহ করে এই শিল্পকে প্রসারিত করতে সাহায্য করছে। বর্তমানে দেশের ফিড খাতের বাজারমূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকায়। সব মিলিয়ে বলা যায়, ভুট্টা এখন শুধু একটি ফসল নয়, বরং এটি দেশের কৃষি, শিল্প ও অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে।

    লাভজনকতা ও আয়ের তুলনা: ভুট্টা চাষ এখন বাংলাদেশের কৃষকদের জন্য একটি লাভজনক ও টেকসই কৃষি উদ্যোগ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে। ধান বা গমের তুলনায় ভুট্টার গড় ফলন অনেক বেশি। বর্তমানে প্রতি হেক্টরে ভুট্টার গড় ফলন দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ থেকে ১২ টন, যা অন্যান্য খাদ্যশস্যের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। তবে ভালো ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই ফলন আরও বাড়ানো সম্ভব। শুধু ফলনেই নয়, উৎপাদন ব্যয় এবং আয়ের তুলনাতেও ভুট্টা চাষ অধিক সুবিধাজনক।

    অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে, ভুট্টা চাষে আয় ও বিনিয়োগের অনুপাত বা বেনিফিট-কস্ট রেশিও (BCR) এখন প্রায় ১ দশমিক ২৯। যা প্রমাণ করে যে, এটি কৃষকদের জন্য অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত লাভজনক। একর প্রতি আয়ের হার উৎপাদন খরচের তুলনায় বেশি হওয়ায় কৃষকেরা আগের চেয়ে বেশি মুনাফা পাচ্ছেন।

    উত্তরবঙ্গের নীলফামারী জেলার উদাহরণ উল্লেখযোগ্য। সেখানে মাত্র ৩৩ ডিসেম জমিতে ভুট্টা চাষ করে একজন কৃষক গড়ে ৪০ থেকে ৪২ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করছেন।যেখানে তাঁর মোট উৎপাদন খরচ হয় মাত্র ১৬ হাজার টাকার মতো। অর্থাৎ একই জমিতে ধান বা গম চাষের তুলনায় ভুট্টা চাষে তিনি দ্বিগুণেরও বেশি লাভ করতে পারছেন। এমন বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই কৃষকদের মধ্যে ভুট্টা চাষের প্রতি আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে।

    এভাবে ভুট্টা এখন শুধু একটি ফসল নয়, বরং এটি কৃষকের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম প্রধান সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করছে। সঠিক পরিকল্পনা ও বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ভুট্টা চাষ বাংলাদেশের কৃষি খাতকে আরও গতিশীল করতে পারে।

    ভুট্টা চাষে বর্তমান প্রেক্ষাপটে লাভজনকতার বাস্তব চিত্র:বাংলাদেশের কৃষি খাতে ভুট্টা এখন একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এবং লাভজনক ফসল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ধান ও গমের পরিবর্তে ভুট্টা চাষের প্রবণতা দ্রুত বেড়েছে। এর পেছনে রয়েছে একাধিক অর্থনৈতিক, পুষ্টিগত ও শিল্প সংশ্লিষ্ট কারণ, যা ভুট্টাকে অন্যান্য ফসলের তুলনায় অধিক সুবিধাজনক করে তুলেছে।

    বর্তমানে দেশে ভুট্টার প্রধান ব্যবহার হচ্ছে পশুখাদ্য তৈরিতে। পোলট্রি, গবাদি পশু ও মৎস্য খাতে ভুট্টা একটি অপরিহার্য কাঁচামাল, বিশেষ করে পোলট্রি ফিডের প্রায় ৫০-৬০% উপাদানই ভুট্টা। এই শিল্পগুলো ক্রমাগত সম্প্রসারিত হওয়ায় ভুট্টার চাহিদা দেশীয় বাজারে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে। এর ফলে কৃষকরা নিশ্চিত বাজার এবং নগদ অর্থপ্রাপ্তির সুবিধা পাচ্ছেন, যা অন্যান্য অনেক ফসলের ক্ষেত্রে অনুপলব্ধ।

    ভুট্টার আরেকটি বড় সুবিধা হলো উচ্চ ফলনশীলতা। এক হেক্টর জমিতে গড়ে ১১-১২ টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়, যা ধান বা গমের তুলনায় অনেক বেশি। উন্নত হাইব্রিড জাত ও সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে এই ফলন আরও বাড়ানো সম্ভব। পাশাপাশি ভুট্টা চাষে পানি, কীটনাশক ও সার ব্যবহার তুলনামূলকভাবে কম, ফলে উৎপাদন খরচ কম এবং লাভের পরিমাণ বেশি থাকে।

    ভুট্টার চাষে শ্রম ও সময়ের প্রয়োজনও কম। এটি একটি স্বল্পকালীন ফসল, ফলে কৃষকরা একই বছরে একাধিক ফসল ঘুরিয়ে নিতে পারেন। একই জমিতে ধান, আলু বা সরিষা ফসলের সঙ্গে ঘুরিয়ে ভুট্টা চাষ করা যায়, যা জমির উর্বরতা রক্ষায় সাহায্য করে এবং ফসলের বৈচিত্র্য আনে।

    এটির আরেকটি বড় দিক হলো এর বহুমুখী ব্যবহার। শুধু পশুখাদ্য নয়, এটি থেকে স্টার্চ, ভুট্টার তেল, সিরাপ, পানীয়, বিস্কুট, সুজি, নুডলসসহ নানা ধরনের খাদ্যপণ্য তৈরি হয়। শিল্প খাতেও এর ব্যবহার বাড়ছে যেমন: বায়োফুয়েল, কাগজ, প্লাস্টিক, ওষুধ ও রঙ তৈরির কাজে।

    ভুট্টা উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে এর আমদানি নির্ভরতা কমে এসেছে, যা বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে ভূমিকা রাখছে। একদিকে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে দেশীয় শিল্পের কাঁচামাল ঘাটতি পূরণ হচ্ছে। সবদিক বিবেচনায় বলা যায়, বর্তমান কৃষি ব্যবস্থায় ভুট্টা চাষ একটি কার্যকর ও লাভজনক সিদ্ধান্ত। কৃষক, ব্যবসায়ী ও শিল্প—তিন পক্ষেরই লাভ নিশ্চিত হচ্ছে এই ফসলে। যথাযথ সরকারি সহায়তা, মানসম্পন্ন বীজ সরবরাহ এবং বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ঘটলে ভুট্টা বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষি অর্থনীতিতে আরও বড় ভূমিকা রাখতে পারবে।

    ভুট্টা চাষের চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনার সঙ্গে বাস্তবতার দ্বন্দ্ব: যদিও ভুট্টা চাষ বর্তমানে বাংলাদেশে একটি লাভজনক ও জনপ্রিয় কৃষিকাজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তবে এর পথ একেবারে মসৃণ নয়। বাস্তব মাটিতে চাষাবাদের ক্ষেত্রে কৃষকদের নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। এসব চ্যালেঞ্জ যথাযথভাবে মোকাবিলা করা না গেলে ভুট্টা চাষের সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগানো সম্ভব নয়।

    প্রথমতঃ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব ভুট্টা চাষে বড় একটি বাঁধা হিসেবে দেখা দিচ্ছে। অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, দীর্ঘ খরা, হঠাৎ বন্যা বা অতিরিক্ত ঠাণ্ডা ও তাপমাত্রা ফসলের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত করছে। ভুট্টা তুলনামূলকভাবে খরা সহনশীল হলেও নির্দিষ্ট সময়ে পর্যাপ্ত পানি না পেলে ফলন কমে যেতে পারে। অনেক সময় একবারের খরার ক্ষতি পুরো মৌসুমের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকেই নষ্ট করে দেয়।

    দ্বিতীয়তঃ রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণও ভুট্টা চাষে বড় সমস্যা তৈরি করে। পাতা ঝরা, গাছের শিকড় পচা, ছত্রাকজনিত রোগ এবং পাতার রস চোষা পোকার আক্রমণে ফসলের গুণমান ও পরিমাণ দু‘টোই নষ্ট হয়। অনেক কৃষকের কাছে এসব রোগ-ব্যাধি শনাক্ত ও নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও উপকরণ নেই।

    তৃতীয়তঃ আগাছা নিয়ন্ত্রণে অবহেলা ভুট্টা চাষের ফলনে সরাসরি প্রভাব ফেলে। ভুট্টা চাষে আগাছা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং গাছের পুষ্টি গ্রহণে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। সময়মতো আগাছা দমন না করা হলে ফলন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।

    আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো, কৃষকদের মাঝে ভুট্টা চাষ সংক্রান্ত সঠিক জ্ঞানের অভাব। উন্নত জাতের নির্বাচন, জমি প্রস্তুতি, সার ব্যবস্থাপনা, রোগ দমন কৌশল এবং আধুনিক চাষপদ্ধতি সম্পর্কে অনেক কৃষক এখনও পর্যাপ্ত ধারণা রাখেন না। ফলে তারা সম্ভাব্য সর্বোচ্চ ফলন থেকে বঞ্চিত হন।

    বাজারজাতকরণও একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। যদিও ফিড মিলগুলো ভুট্টা ক্রয়ে আগ্রহী, তবুও অনেক সময় কৃষকদের উৎপাদিত ফসল সংগ্রহের জন্য স্থানীয় পর্যায়ে পর্যাপ্ত সংযোগ থাকে না। যাতায়াতের অসুবিধা, মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব এবং মূল্য নির্ধারণে স্বচ্ছতার অভাবে কৃষকরা তাদের ফসলের ন্যায্য দাম পান না।

    উন্নত জাতের বীজের অভাবও একটি সমস্যা। অনেক অঞ্চলে মানসম্পন্ন হাইব্রিড বীজ সহজলভ্য নয়। ফলে কৃষকরা বাধ্য হয়ে নিম্নমানের জাত ব্যবহার করেন, যার ফলে ফলন আশানুরূপ হয় না। একইসঙ্গে নির্দিষ্ট সময়ে পর্যাপ্ত সেচ সুবিধা না পাওয়াও ভুট্টার উৎপাদন কমিয়ে দেয়। অনেক এলাকায় পানি সংকট বা অব্যবস্থাপনার কারণে ভুট্টা গাছ ঠিকমতো বেড়ে উঠতে পারে না।

    এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, সঠিক পরিকল্পনা ও সহায়তার মাধ্যমে ভুট্টা চাষে উল্লেখযোগ্য উন্নতি সম্ভব। সরকার ও কৃষি বিভাগের সমন্বিত উদ্যোগে প্রশিক্ষণ, উন্নত বীজ সরবরাহ, রোগ প্রতিরোধে সহায়তা, সহজতর বাজার ব্যবস্থা এবং সেচ সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে ভুট্টা চাষ বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতিকে আরও একধাপ এগিয়ে নিতে পারে। কৃষকদের হাতে সঠিক জ্ঞান ও উপকরণ পৌঁছালে ভুট্টা শুধু একটি লাভজনক ফসল নয়, বরং টেকসই কৃষির মডেল হিসেবেও প্রতিষ্ঠা পেতে পারে।

    গবেষণা ও প্রযুক্তির ছোঁয়ায় ভুট্টা চাষে বিপ্লব: বাংলাদেশে ভুট্টা চাষের সম্প্রসারণ ও ফলন বৃদ্ধির পেছনে গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশেষ করে বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট (BWMRI)-এর অবদান গুরুত্বপূর্ণ। আধুনিক প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি এমন কিছু উন্নত জাতের ভুট্টা উদ্ভাবন করেছে, যা দেশের আবহাওয়া ও মাটির উপযোগী এবং একইসঙ্গে উচ্চ ফলনশীল।

    এই উন্নত জাতের ভুট্টার মধ্যে BWMRI Hybrid-1 এবং BWMRI Hybrid-2 নামের দু‘টি জাত দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চাষ করে রবি মৌসুমে হেক্টরপ্রতি গড়ে ১২ থেকে ১৪ টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া গেছে, যা ভুট্টা চাষের জন্য এক বিপ্লবমূলক অগ্রগতি।

    BWMRI Hybrid-1 জাতটির দানাগুলো বড়, হলুদ বর্ণের এবং ‘ডেন্ট’ ধরনের। ১ হাজার টি দানার ওজন প্রায় ৪০০ থেকে ৪৬০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই জাতের আরেকটি বড় সুবিধা হলো মোচার অগ্রভাগ খুব শক্তভাবে আবৃত থাকে, যার ফলে বৃষ্টির পানি ঢুকে দানা পচে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। এটি ভুট্টার গুণগতমান রক্ষা ও সংরক্ষণে সহায়ক।

    অন্যদিকে BWMRI Hybrid-2 জাতটিও সমানভাবে ফলনক্ষম। এর দানাও হলুদ বর্ণের, তবে ‘সেমি-ডেন্ট’ প্রকৃতির। এই জাতের দানার আকার বড় এবং ১ হাজার টি দানার গড় ওজন প্রায় ৩৮৫ গ্রাম। এটি রবি মৌসুমের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী এবং মোচার গঠন এমনভাবে শক্ত থাকে যে, দুর্যোগকালীন আবহাওয়ায়ও দানার ক্ষতির আশঙ্কা কম থাকে।

    এই জাতদ্বয়ের উদ্ভাবন দেশের ভুট্টা উৎপাদনে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। গবেষণার ফসল হিসেবে এসব উন্নত জাত মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়লে বাংলাদেশ অল্প খরচে অধিক ফলনের মাধ্যমে আমদানি নির্ভরতা হ্রাস করে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন করতে পারবে। কৃষকের আয়ও বাড়বে, যা দেশের সামগ্রিক কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

    বাংলাদেশে ভুট্টা চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এবং এর পেছনে রয়েছে উচ্চ ফলন, কম পরিচর্যা, নিশ্চিত বাজার, পশুখাদ্য ও শিল্পে ক্রমবর্ধমান চাহিদা। গবেষণা ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের ফলে উন্নত জাতের ভুট্টা যেমন: BWMRI Hybrid-1 ও Hybrid-2 এর সাফল্য কৃষকদের মাঝে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। যদিও আবহাওয়ার পরিবর্তন, রোগবালাই এবং বাজার ব্যবস্থাপনায় কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে, তবে সঠিক পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ ও সরকারি সহায়তার মাধ্যমে এগুলো সহজেই মোকাবিলা করা সম্ভব। ভুট্টা এখন শুধু একটি খাদ্যশস্য নয়, বরং বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতি ও পোলট্রি-ফিড শিল্পের একটি কৌশলগত উপাদান। তাই বলা যায় ভবিষ্যতের টেকসই ও লাভজনক কৃষির অন্যতম ভরসা হতে পারে ভুট্টা চাষ।

    Share. Facebook Twitter LinkedIn Email Telegram WhatsApp Copy Link

    সম্পর্কিত সংবাদ

    অর্থনীতি

    দেশের ৬০% মানুষ নিরাপদ পানি থেকে বঞ্চিত

    December 8, 2025
    মতামত

    অতীত থেকে বর্তমান: খেলাপি ঋণের ভয়ঙ্কর চিত্র

    December 8, 2025
    অর্থনীতি

    ঋণের ফাঁদে ফেঁসে গেছে দেশ: এনবিআর চেয়ারম্যান

    December 8, 2025
    Leave A Reply Cancel Reply

    সর্বাধিক পঠিত

    সাউথইস্ট ব্যাংকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাত

    আইন আদালত October 7, 2025

    ক্রেতারা ভারত-চীন ছাড়ছে, বাংলাদেশ পাচ্ছে অর্ডার

    অর্থনীতি August 15, 2025

    সব ব্যবসায়ী ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপী নয়

    মতামত January 13, 2025

    বরিশালের উন্নয়ন বঞ্চনা: শিল্প, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য ও পর্যটন খাতে নেই অগ্রগতি

    মতামত April 22, 2025
    সংযুক্ত থাকুন
    • Facebook
    • Twitter
    • Instagram
    • YouTube
    • Telegram

    EMAIL US

    contact@citizensvoicebd.com

    FOLLOW US

    Facebook YouTube X (Twitter) LinkedIn
    • About Us
    • Contact Us
    • Terms & Conditions
    • Comment Policy
    • Advertisement
    • About Us
    • Contact Us
    • Terms & Conditions
    • Comment Policy
    • Advertisement

    WhatsAppp

    01339-517418

    Copyright © 2025 Citizens Voice All rights reserved

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.