বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, দেশের অর্থনীতির সামষ্টিক চ্যালেঞ্জের মধ্যেও বিদেশি ব্যাংক থেকে লাইন অব ক্রেডিট বন্ধ হয়নি। বরং প্রয়োজন মতো সেই সুবিধা অব্যাহত রাখা হয়েছে, যা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় সহায়ক হয়েছে।
আজ গুলশানের লেকশোর হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ আয়োজিত ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ৩৬৫ দিন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তফিজুর রহমান সভাপতিত্ব করেন। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
গভর্নর জানান, আন্তর্জাতিক ব্যাংকারদের সঙ্গে প্রথম বৈঠকে ২০০-এর বেশি বিদেশি ব্যাংক এলসি বন্ধ করেছিল। তখন তারা বলেছিলো, এখানেই থামুন, আর বন্ধ করবেন না। আমাদের উন্নতি করতে না পারলে তখন ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, “আমরা কখনো বকেয়া রাখিনি, রাখবোও না। ২.৫ বিলিয়ন ডলার বকেয়া জমেছিলো, পরে আমরা কমিটমেন্ট নিয়েছিলাম ধীরে ধীরে পরিশোধের। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি ভালো হয়েছে। এখন প্রত্যেক বিদেশি ব্যাংক বাংলাদেশের জন্য আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে। কেউ কেউ এলসি বাড়িয়েছে।”
গত বছরের ১৪ আগস্টের পর থেকে এক ডলারও বিক্রি করা হয়নি জানিয়ে গভর্নর বলেন, “মুদ্রাস্ফীতি কমাতে বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে হবে। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ডলার বিক্রি করব না। দুবাই ভিত্তিক এগ্রিগেটরদের বলা হয়েছে, আমাদের নির্ধারিত রেট (১২২ টাকা) মেনে চলতে হবে। তারা চাইলে ডলার ধরে রাখতে পারে, এতে আমাদের কোনো অসুবিধা নেই। কারণ তারা পাঁচ থেকে সাত দিনের বেশি ধরে রাখতে পারবে না।”
গভর্নর বলেন, “আমার স্থিতিশীলতা শুধু আর্থিক খাতে এসেছে, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এখনও আসেনি। নিরাপত্তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। এখন কেউ বিনিয়োগে ঝাঁপিয়ে পড়বে, তা ঠিক হবে না। সামনে নির্বাচন আসছে। নির্বাচিত সরকার কী পরিবর্তন আনবে, বিনিয়োগকারীরা লক্ষ্য করবে।” তিনি আরও জানান, বাজারে তরল অর্থ প্রবাহ আসছে। শেয়ারবাজার স্বাভাবিক সাড়া দেবে। আগামী এক বছরে শেয়ারবাজারে এক হাজার পয়েন্টের বৃদ্ধি আশা করা যায়। এ বছর বৈদেশিক লেনদেনেও উদ্বৃত্ত হয়েছে।
মুদ্রাস্ফীতির বিষয়ে গভর্নর বলেন, “মুদ্রাস্ফীতি কিছুটা কমেছে, তবে আরও কমানো দরকার। প্রতি মাসে কমবে না, তবে এই অর্থবছরের শেষে পাঁচ শতাংশের নিচে নামার সম্ভাবনা রয়েছে।” সরকারের রাজস্ব সংগ্রহ ও এনবিআরের সংস্কার দ্রুত বাস্তবায়ন জরুরি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ব্যাংকিং খাতের সংস্কার প্রসঙ্গে গভর্নর জানান, ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ পরিবর্তন করে পরিচালকদের মেয়াদ ৬ বছরে সীমাবদ্ধ করা হবে। বোর্ডে অন্তত ৬ জন স্বাধীন পরিচালক থাকবেন। মানি লন্ডারিং আইন ও ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২-এ মৌলিক পরিবর্তন আনা হবে।
তিনি বলেন, “আইনের যথাযথ প্রয়োগের জন্য স্বাধীন ও শক্তিশালী নেতৃত্ব প্রয়োজন। আর্থিক খাতকে রাজনীতির উপরে রাখতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষমতা ও দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। নতুন ডিপোজিট ইন্সুরেন্স আইন আনা হচ্ছে। ব্যাংক রেগুলেশন অধ্যাদেশে বাংলাদেশ ব্যাংককে অধিক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।” গভর্নর আরো বলেন, “সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পদ্ধতি ভিন্ন হবে না। কোনো ব্যাংক নন-পারফরমিং হলে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যবস্থা নেবে। অদক্ষ ব্যাংককে কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না।”

