চলতি অর্থবছর ২০২৫-২৬ সালের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার, কার্গো ও জাহাজ হ্যান্ডলিং বেড়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বন্দর কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের মাধ্যমে ৪৮ বছরের রেকর্ড ভাঙেছিল।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের তিন মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৯ লাখ ২৭ হাজার ৭১৩ টিইইউস। আগের বছরের একই সময়ে এটি ছিল ৮ লাখ ২৬ হাজার ৫২৮ টিইইউস। অর্থাৎ কনটেইনার হ্যান্ডলিং ১২.২৪ শতাংশ বেড়েছে। তবে বন্দরের ওপর চাপ বাড়ার পেছনে দেশীয় স্থলবন্দরগুলোর আংশিক বন্ধ থাকা এবং কিছু পণ্যের স্থলপথে আমদানি-রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এতে অনেক পণ্য সমুদ্রপথে আনা-নেয়া করতে হচ্ছে, ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রমে বাড়তি চাপ পড়েছে। চলতি অর্থবছরের তিন মাসে কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩ কোটি ২৯ লাখ ১৯ হাজার ৯৬৬ টন এবং জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে ১ হাজার ৩১টি। গত বছরের একই সময়ে এই সংখ্যা কম ছিল।
এর ফলে কার্গো হ্যান্ডলিং বেড়েছে ১৩.৮৮ শতাংশ এবং জাহাজ হ্যান্ডলিং বেড়েছে ৯.২২ শতাংশ। বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ধারাবাহিক কর্মতৎপরতা, কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি এবং জেটি ও ইয়ার্ড সুবিধা সম্প্রসারণের কারণে এই অগ্রগতি এসেছে। নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি)-তে চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেড পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার পরও কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে উন্নতি হয়েছে। বন্দর তথ্য অনুযায়ী, চলতি তিন মাসে চট্টগ্রাম ড্রাইডক এনসিটিতে ৩ লাখ ৪২ হাজার ৬৪৯ টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছে। এটি আগের বছরের একই সময়ে ৪১ হাজার ৭৫৪ টিইইউস বেশি। অর্থাৎ এনসিটিতে কনটেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে ১৩.৮৮ শতাংশ। জাহাজ হ্যান্ডলিংও বেড়ে ১৭৮টি হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ২৬টি বেশি।
বন্দর ব্যবহারকারীরা বলেন, বিশ্ববাজারে যুদ্ধ ও ভ‚-রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে অর্থনীতির গতি মন্থর হয়েছে। পরিবহন ধর্মঘট, কাস্টমসে কলমবিরতি এবং শাটডাউনের কারণে বন্দরে কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও অফিস, শ্রমিক ও স্টেকহোল্ডারদের সহযোগিতায় হ্যান্ডলিং কার্যক্রমে তেমন প্রভাব পড়েনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আমদানি ও রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, আগে স্থলবন্দরগুলো দিয়ে যেসব পণ্য আমদানি-রপ্তানি হতো, সেগুলো এখন সমুদ্রপথে আনা-নেয়া করতে হচ্ছে। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ বাড়ছে এবং ভবিষ্যতে হ্যান্ডলিং আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বন্দর দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। জাতীয় রাজস্বের বড় অংশ এই বন্দর থেকে আসে। আধুনিকায়ন, দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডলিং দ্রুততর করা, জাহাজের অবস্থানকাল কমানো, জেটি ও ইয়ার্ড সম্প্রসারণ এবং নিরাপদ বন্দরের ব্যাবস্থা নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য। এজন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিরলসভাবে কাজ করছেন। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই প্রচেষ্টার ফলে চট্টগ্রাম বন্দর রেকর্ড পরিমাণ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছে।

