বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেছেন, জ্বালানির দাম বাড়ানোকে কেবল অর্থনৈতিক সমন্বয়ের অংশ হিসেবে দেখা হলে মূল সংকট বোঝা সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, বর্তমান মূল্যবৃদ্ধি শুধু অর্থনৈতিক বাস্তবতার ফল নয়, এটি রাষ্ট্রের কাঠামোগত দুর্বলতা, নৈতিক অবক্ষয় এবং শিক্ষাব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার প্রতিফলন।
গতকাল শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফফর চৌধুরী অডিটোরিয়ামে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) আয়োজিত ‘ক্যাব যুব সংসদ-২০২৫’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব মন্তব্য করেন। আনোয়ার হোসেন প্রশ্ন তোলেন, এই মূল্যবৃদ্ধি কি শুধুই ‘স্ট্রাকচারাল অ্যাডজাস্টমেন্ট প্রোগ্রাম’-এর অংশ, নাকি এর পেছনে রয়েছে রাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের সংস্কার ব্যর্থতা ও দুর্নীতি। তিনি বলেন, রাষ্ট্র সংস্কার মানে শুধু প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস নয়। এটি দুর্নীতি কমানো, জনগণের প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি এবং রাষ্ট্রের আয়-ব্যয়ের মধ্যে স্বচ্ছ সংযোগ স্থাপনের প্রক্রিয়া। মৌলিক বিষয়গুলো না মানলে জ্বালানিসহ সামগ্রিক অর্থনৈতিক সংকট থেকে মুক্তি সম্ভব নয়।

তিনি ‘ফ্রি মার্কেট ইকোনমি’ এবং ‘সামষ্টিক কল্যাণ’-এর পার্থক্য তুলে ধরে বলেন, যদি রাষ্ট্রনীতি ব্যক্তিগত স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়, তাহলে সামষ্টিক কল্যাণ দুর্বল হয়। এতে ‘এনার্জি জাস্টিস’ বা শক্তি-ন্যায়ের মতো ধারণা নীতি নির্ধারণে হারিয়ে যায়। আনোয়ার হোসেন আরও বলেন, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির পেছনে দুর্নীতি, অদক্ষতা এবং মানি লন্ডারিংয়ের মতো উপাদান জড়িত থাকতে পারে। তবে মূল সমস্যা রাষ্ট্রের কাঠামোগত অসঙ্গতি, যেখানে জবাবদিহি এবং ন্যায়বিচারের অভাব বিদ্যমান। তিনি উল্লেখ করেন, বিদ্যুৎ খাতে ধারাবাহিক সংস্কার ব্যর্থতা এবং শিক্ষা ব্যবস্থায় নৈতিক মূল্যবোধের অভাব রাষ্ট্রকে এমন অবস্থায় নিয়ে এসেছে যেখানে ব্যক্তিগত লোভ সামষ্টিক কল্যাণের জায়গা দখল করেছে।
আলোচনার শেষ পর্যায়ে তিনি বলেন, মূল্যবৃদ্ধির মতো সিদ্ধান্তগুলো কেবল অর্থনীতি বিষয়ক নয়, এটি রাষ্ট্রের নৈতিক দিকনির্দেশনার প্রতিফলন। ন্যায়সঙ্গত সমাজ গঠনের জন্য প্রয়োজন এমন সংস্কার যা জনগণের কল্যাণকে কেন্দ্র করে নীতিনির্ধারণ করে। দুদিনব্যাপী আয়োজিত ক্যাব যুব সংসদ-২০২৫-এর প্রথম দিনে ২০২৬ সালের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হয়। এবারের যুব সংসদের স্লোগান ছিল ‘জ্বালানি রূপান্তরে সুবিচার চাই’।

