ভোটের কয়েক মাস আগে দেশের অর্থনীতিকে কেন্দ্র করে সতর্ক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। সর্বশেষ ইকোনমিক আপডেট অ্যান্ড আউটলুকে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক প্রবণতায় মূল্যস্ফীতি কমলেও সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির কারণে বেসরকারি খাতের ঋণ ও বিনিয়োগ কমেছে।
তবে নির্বাচনের তারিখ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে অর্থনীতিতে নির্বাচনসংক্রান্ত কার্যক্রম বাড়তে পারে। এতে অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা কিছুটা ফিরতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা এখনো রয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগসহ সব খাতে স্থবিরতা বিরাজ করছে। এর ফলে নির্বাচনের আগে অর্থনীতি ও সামাজিক খাতে অস্থিরতা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিবেদনে জিইডি সামষ্টিক অর্থনীতির চারটি মূল বিষয় তুলে ধরেছে:
১. সরকারের পদক্ষেপে চালের দাম কমতে শুরু করেছে
২. মুদ্রা বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকলেও রপ্তানি ধীরগতি নিয়ে যাচ্ছে
৩. ব্যাংক আমানত বেড়েছে, কিন্তু বেসরকারি খাতে ঋণ কমছে
৪. প্রশাসনিক সংস্কারের কারণে রাজস্ব আয় বাড়ছে
ইকনোমিক আউটলুক অংশে নির্বাচনের প্রভাবেও আলোকপাত করা হয়েছে। প্রতিবেদন বলছে, গত কয়েক মাস ধরে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর আমানত উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু সংস্কার উদ্যোগে আমানতকারীরা ব্যাংকের দিকে আকৃষ্ট হয়েছেন। সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর কারণেও ব্যাংক-আমানত আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধিও এতে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে।
তবে ব্যাংক আমানত বেড়ে গেলেও বেসরকারি খাতের ঋণ ও বিনিয়োগে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির কারণে এই ধারা সৃষ্টি হয়েছে। সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন একটি নীতি যেখানে নীতি-নির্ধারণী সুদের হার বাড়ানো হয়। ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বেসরকারি খাতে ঋণ না দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে টাকা রাখে। এতে ঋণপ্রবাহ কমে এবং বাজারে টাকার চলাচল ধীর হয়ে যায়। মূল্যস্ফীতি কমাতে বর্তমান সরকার এ নীতি অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের আগস্টে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি মাত্র ৬.৩৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা গত ২২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
জিইডির প্রতিবেদন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-এর সাবেক মহাপরিচালক ড. এম কে মুজেরী বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে যে আশাবাদ সৃষ্টি হয়েছিল, জুলাই মাসে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবৈষম্য দেখা দেওয়ায় আবারও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচনের দিনে প্রার্থীরা ভোটারদের পেছনে প্রচুর অর্থ ব্যয় করবেন। এতে কালো-টাকা বা সাদা অর্থ সব ধরনের নগদ টাকার প্রবাহ বাড়বে। এটি সাময়িক ভোগ বৃদ্ধি করলেও মূল্যস্ফীতি আরও উসকে দিতে পারে। একদিকে ঋণ ও বিনিয়োগে স্থবিরতা, অন্যদিকে অনুৎপাদনশীল খাতে অর্থ প্রবাহ বৃদ্ধি অর্থনীতিতে বড় ধরনের সংকট তৈরি করতে পারে।

