ব্যাংক ঋণের মতো ক্ষুদ্রঋণেও চালু হচ্ছে মাইক্রো ফাইন্যান্স ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (এমএফ-সিআইবি) সিস্টেম। এতে ক্ষুদ্রঋণের একটি কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডার তৈরি হবে। ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন ঋণগ্রহীতার তথ্য বিশ্লেষণ করে যোগ্য গ্রাহককে সহজে ঋণ দিতে পারবে। পাশাপাশি ঋণের ঝুঁকি মূল্যায়ন ও ব্যবস্থাপনা করতেও সহায়ক হবে। সূত্রের খবর, চলতি ডিসেম্বর বা আগামী বছরের জানুয়ারি মাস থেকে এই সিআইবি কার্যক্রম শুরু হতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কারিগরি সহায়তায় এবং মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) তত্ত্বাবধানে এটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। এমআরএ এক্সিকিউটিভ ভাইস-চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, “বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যারা ব্যাংক ঋণ পান না, তাদের অর্থায়ন করছে ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডার না থাকায় ঋণগ্রহীতার সঠিক তথ্য জানা সম্ভব ছিল না। এখন সিআইবি চালু হলে ঋণগ্রহীতার প্রকৃত তথ্য পাওয়া যাবে এবং ঋণ নীতি নির্ধারণে সহায়ক হবে।”
সূত্র জানায়, সিআইবির মাধ্যমে ঋণগ্রহীতার প্রকৃত সংখ্যা, একজন গ্রাহক কতটি প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়েছেন, ঋণের পরিমাণ, কিস্তি ও পরিশোধের তথ্য, বকেয়া এবং খেলাপি ঋণের তথ্য জানা যাবে। এর ফলে ঋণের ঝুঁকি মূল্যায়ন সহজ হবে।
এমআরএ কর্মকর্তা বলেন, “বর্তমানে একজন ক্ষুদ্র ঋণগ্রাহক কোথা থেকে কত ঋণ নিচ্ছেন তা যাচাই করা সম্ভব নয়। ফলে ভালো গ্রাহক ঋণ সুবিধা পাচ্ছেন না, আর মন্দ গ্রাহক ঋণ পেয়ে যাচ্ছেন। এটি প্রাতিষ্ঠানিক ঝুঁকি সৃষ্টি করে। সিআইবি চালু হলে এই ঝুঁকির পরিমাণ কমবে।”
পরিচালক (এমআইএস, সিআইবি ম্যানেজমেন্ট ও অফসাইট মনিটরিং) মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানান, “ক্ষুদ্রঋণ গ্রাহকের তথ্যভাণ্ডার হিসেবে সিআইবি বাস্তবায়নের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আশা করি, ডিসেম্বর বা আগামী বছরের জানুয়ারিতে এটি চালু করা সম্ভব হবে।”
এমআরএ সূত্র জানায়, সঠিক তথ্য নিশ্চিত করতে গ্রাহকের জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই করা হচ্ছে। পাইলট প্রক্রিয়ায় ৫০টি ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের প্রায় এক কোটি গ্রাহকের তথ্য সিস্টেমে আপলোড করা হয়েছে। মোট ১৪৮টি প্রতিষ্ঠান থেকে তিন কোটি ৫৫ লাখ গ্রাহকের জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই সম্পন্ন হয়েছে। একজন গ্রাহককে তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে শনাক্ত করা হচ্ছে।
ইনজিও ও ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল অ্যাকশনের (ইপসা) প্রধান নির্বাহী আরিফুর রহমান বলেন, “এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। ভুয়া আইডি ব্যবহার করে ঋণ নেওয়া বন্ধ হবে। তবে ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের খরচ বাড়বে। খরচ যেন গ্রাহকের উপর না পড়ে তা নিশ্চিত করা উচিত।”
এমআরএ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে ৭৪৬টি সনদপ্রাপ্ত ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এদের গ্রাহক সংখ্যা তিন কোটি ২৫ লাখ। সিআইবি পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু করলে এটি হবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্ষুদ্রঋণ তথ্যভাণ্ডার। ভারতের ক্রিফ হাইমার্ক ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো সর্ববৃহৎ, যেখানে আট কোটি গ্রাহকের তথ্য রয়েছে।

