যখন বিশ্ব কোভিড-১৯ মহামারির ভয়াবহতা কাটিয়ে নতুন দিনের স্বপ্ন দেখছে, ঠিক তখনই এক নতুন আতঙ্কের নাম উঠেছে—‘এমপক্স’। গুটিবসন্তের একটি প্রকার হিসেবে বিবেচিত এই রোগটি নতুন করে জনমনে উদ্বেগ তৈরি করছে। সংক্রমণ কমাতে লকডাউন ও বিধিনিষেধের তিক্ত অভিজ্ঞতা এখনও মনে গেঁথে আছে। এখন প্রশ্ন উঠছে—এমপক্স কি আমাদের আবারও সেই ভয়ঙ্কর দিনের সামনে নিয়ে আসবে? করোনা মহামারির ধ্বংসযজ্ঞের মতোই কি এমপক্স আরও ব্যাপক ও প্রাণঘাতী হতে পারে? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ইতোমধ্যেই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বিশ্বজুড়ে সম্ভাব্য বিপর্যয়ের পূর্বাভাস দিচ্ছেন। কিন্তু আসলেই এমপক্স কি করোনা থেকেও ভয়ঙ্কর?
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে, এই রোগটি নিয়ে উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। যদিও এদেশে এখনো এমপক্স এর প্রবেশ ঘটেনি তবুও আশেপাশের প্রতিবেশী দেশগুলোতে যেমন ভারত, মায়ানমার , চীন ও পাকিস্তানে সংক্রমণ চিহ্নিত হওয়ায় বাংলাদেশেও তা যে কোন মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে। এম পক্স নিয়ে ইতোমধ্যে বাংলাদেশে সর্তকতা জারি করা হয়েছে।
এমপক্স কি?
এমপক্স একটি ভাইরাস জনিত প্রাণী বাহিত রোগ। এমপক্স জলবসন্ত বা গুটি বসন্ত থেকে আলাদা ধরনের একটি ভাইরাস। এই ভাইরাসটি Orthopoxvirus গণভুক্ত এবং এটি Variola virus (যা গুটিবসন্ত বা স্মলপক্সের কারণ), Vaccinia virus (যা স্মলপক্স ভ্যাকসিনে ব্যবহৃত হয়), এবং Cowpox virus এর মতো ভাইরাসের সাথে সম্পর্কিত। এম পক্সের প্রধানত দুইটি ধরন আছে -ক্লেড ১এবং ক্লেড২ । এই দুই ধরনের মধ্যে আবার সাব ডিভিশন এ আর বি রয়েছে। এখানে বলা যায় ক্লেড ২ ভাইরাসে মৃত্যুহার কম কিন্তু ক্লেড ১ এর মৃত্যু হার বেশি।
১৯৫৮ সালে ডেনমার্ক এ বানরের দেহে সর্বপ্রথম এই রোগ শনাক্ত হয় বলে একে মাঙ্কিপক্স বলা হয়। ২০২২ সালের নভেম্বরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) রোগের নামকরণ করে চুক্তির নাম পরিবর্তন করে এম পক্স রাখা হয়। এ রোগটি প্রধানত মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকায় দেখা দেয়।
কিভাবে ছড়ায় –
বর্তমানে এমপক্স ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষের মধ্যে ছড়াচ্ছে। এর জন্য এর ঝুঁকি বেড়ে গেছে। সংক্রমণের কারণগুলো হচ্ছে-
সংক্রমিত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ও সংস্পর্শের মাধ্যমে।
০সংক্রমিত ব্যক্তির ত্বকের ফুসকুড়ি বা ক্ষত, শরীরের তরল পদার্থ এবং শ্বাসতন্ত্রের নিঃসরণের মাধ্যমে সরাসরি সংস্পর্শে এলে ভাইরাসটি ছড়াতে পারে।
ভাইরাসটি সংক্রমিত প্রাণীর কামড়, আঁচড়, বা তাদের দেহের তরল পদার্থের সংস্পর্শে এলেও ছড়াতে পারে। বিশেষ করে বানর ও ইঁদুরের মতো প্রাণী থেকে এই রোগ মানুষের মধ্যে ছড়াতে পারে।
০ ভাইরাসটি সংক্রমিত প্রাণীর কামড়, আঁচড়, বা তাদের দেহের তরল পদার্থের সংস্পর্শে এলেও ছড়াতে পারে। বিশেষ করে বানর ও ইঁদুরের মতো প্রাণী থেকে এই রোগ মানুষের মধ্যে ছড়াতে পারে।
কম তাপে রান্না করা খাবার খেলে।
সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহার করা পোশাক, তোয়ালে ও যেকোনো ধরনের ব্যবহার্য জিনিসপত্র ব্যবহার করলে।
এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার করা ইনজেকশনের সুঁই অন্য কারো শরীরে প্রবেশ করলে।
সন্তান সম্ভাবন নারী আক্রান্ত হলে অনাগত সন্তান ও এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে।
এমপক্স শুকিয়ে যাওয়ার পর ফুসকার আবরণ যদি বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে, সেখান থেকে ও ভাইরাস সংক্রম হতে পারে।
এখানে উল্লেখ্য যে,এমপক্স আক্রান্তের সংস্পর্শে যাওয়া ব্যক্তির এতে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। রোগটি যৌন সম্পর্ক, ত্বকের সংস্পর্শে, কথা বলা বা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমেও সংক্রমিত হয়।
এমপক্স ভাইরাসের উপসর্গ-
. জ্বর (৩৮° সেন্টিগ্রেডের বেশি তাপমাত্রা)
. প্রচন্ড মাথা ব্যাথা
. গলা ব্যথা
. শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লসিকা গ্রন্থি ফুলে যাওয়া ও ব্যথা
. মাংসপেশিতে ব্যথা
. অবসাদগ্রস্থতা , ক্লান্তি
. সাধারণত মুখে শুরু হয়ে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। ফুসকুড়িগুলো একসময় পানিভর্তি ফোস্কায় রূপান্তরিত হয় এবং পরে শুকিয়ে পড়ে।
লক্ষণগুলো সাধারণত সংক্রমণের ৬ থেকে ১৩ দিনের মধ্যে দেখা দেয়, তবে এটি ৫ থেকে ২১ দিনের মধ্যেও হতে পারে।
প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা-
• হাত ধোয়া: নিয়মিত এবং সঠিকভাবে হাত ধোয়া বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। হাতের উপর ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সাবান ও পানির ব্যবহার করা উচিত যাতে ভাইরাস রোগ বিস্তার করতে না পারে।
• হ্যান্ড স্যানিটাইজার: সাবান ও পানি না থাকলে অ্যালকোহল ভিত্তিক হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা , কেননা অ্যালকোহল ভিত্তিক স্যানিটাইজার এমপক্স ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর। অ্যালকোহল (বিশেষত ৬০% বা তার বেশি কনসেন্ট্রেশন) ভাইরাসের কোষে প্রবেশ করে এবং তাদের ধ্বংস করে, যা সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক। তবে সাবান ও পানির সাহায্যে হাত ধোয়া সবচেয়ে ভাল।
সংক্রমণ প্রতিরোধ-
• চিকিৎসা পর্যবেক্ষণ: যদি পরিচিত কারোর এমপক্সের লক্ষণ দেখা দেয়, তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
• স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ: যদি এমপক্স আক্রান্ত এলাকার সংস্পর্শে এসে থাকলে, তৎক্ষণাৎ স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে নির্ধারিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা।
. চিকিৎসক বা অন্য কেউ রোগের সংস্পর্শে আসলে অবশ্যই গ্লাভস ও মাস্ক পড়তে হবে এবং যথাসম্ভব সাবধানতার সহিত রোগীর চিকিৎসা ও সেবা দিতে হবে।
.পক্স শুকিয়ে যাওয়ার পর ফুসকুড়ির আবরণ যেন যেখানে সেখানে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখায় করনীয়-
• বস্ত্র ও বস্ত্রজাত দ্রব্য: আক্রান্ত ব্যক্তি বা তাদের ব্যবহৃত সামগ্রী ধোয়া এবং পরিষ্কার রাখতে হবে। পাশাপাশি আক্রান্তদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ এড়িয়ে চলতে হবে।
• ফুসকুড়ি থেকে দূরে থাকা: আক্রান্ত ব্যক্তি বা তাদের ব্যবহৃত বস্তু থেকে সরাসরি সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা, যাতে এটি সরাসরি ছড়িয়ে না পড়ে।
টিকা-
• গুটিবসন্ত টিকা: এমপক্সের জন্য সরাসরি কোনো টিকা নেই। তবে, গুটিবসন্তের (smallpox) টিকা কিছুটা সুরক্ষা প্রদান করতে পারে, কারণ গুটিবসন্ত এবং এমপক্স ভাইরাস একই পারিবারিক গোষ্ঠীর অন্তর্গত। গুটিবসন্তের টিকা দেওয়ার মাধ্যমে এমপক্স থেকে কিছুটা সুরক্ষা পাওয়া যেতে পারে।
বর্তমানে, এমপক্সের বিরুদ্ধে বিশেষভাবে তৈরি করা কোনো টিকা বাজারে নেই, তবে গবেষণা এবং উন্নয়ন চলছে যাতে ভবিষ্যতে এমপক্সের জন্য কার্যকর টিকা প্রস্তুত করা যায়।
চিকিৎসা-
• চিকিৎসক পরামর্শ: এমপক্সের লক্ষণ দেখা দিলে একজন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করা উচিত। যিনি রোগের গুরুতরতা অনুযায়ী চিকিৎসার পরিকল্পনা করবেন।
• বিশ্রাম: রোগীদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং শরীরকে সুস্হ রাখার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
• পানিশূন্যতা প্রতিরোধ: প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা এবং পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে।
• ব্যথানাশক ওষুধ: তাপমাত্রা এবং ব্যথা কমানোর জন্য চিকিৎসক কর্তৃক নির্ধারিত ব্যথানাশক ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
• ফুসকুড়ির যত্ন: ফুসকুড়ির কারণে চুলকানি বা অস্বস্তি হলে চিকিৎসক নির্দেশিত স্থানীয় ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
• বিশেষ এন্টিভাইরাল ওষুধ: কেবল চিকিৎসকের পরামর্শে এ রোগে আক্রান্ত হলে কিছু ওষুধ গ্রহণ করা যেতে পারে।টেকোভিরিম্যাট (Tecovirimat) নামে একটি অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ এমপক্সের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। এটি মূলত গুটিবসন্তের চিকিৎসার জন্য অনুমোদিত, তবে এমপক্সের চিকিৎসায়ও ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়াও, সিডোফোভির (Cidofovir) এবং ব্রিনসিডোফোভির (Brincidofovir) নামের দুটি ওষুধও এমপক্স সংক্রমণের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতে পারে।
তবে, এগুলো শুধুমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহৃত হওয়া উচিত এবং সাধারণ মানুষকে নিজে থেকে এসব ওষুধ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
বিশেষ করে যারা আগে থেকেই দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভুগছেন (যেমন: অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সার) তাদের অতি দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
এমপক্সের প্রতিরোধ ও চিকিৎসা প্রক্রিয়া সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মূলত মানুষের আতঙ্কের কারণ- এখানেই, যে এই রোগের সুনির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা নেই। ওষুধ আবিষ্কারের চেষ্টা চলছে। তবে পরীক্ষামূলক কিছু ওষুধ আছে। রোগীকে আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা দিতে হবে। ফুসকুড়ি বা ফুসকার ব্যথা কমানোর জন্য ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার ,পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ রাখতে হবে। জল বসন্তের রোগীর মত এমপক্স রোগীর যত্ন নিতে হবে। সাধারণত স্মল পক্স বা গুটি বসন্তের জন্য ব্যবহৃত টিকা এমপক্স প্রতিরোধে ৮৫% কার্যকর। WHO এর সুপারিশ অনুসারে, সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে টিকা দান কর্মসূচি, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও সতর্কতা অবলম্বন করা অনস্বীকার্য। WHO এম পক্স এর ব্যাপারে নজর রাখছে এবং বিভিন্ন দেশের পরিস্থিতি অনুযায়ী সতর্কতা জারি করছে।
বর্তমান পরিস্থিতি-
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রোগটি আরো কিছু দেশে ছড়িয়ে গেছে ,এমনকি দেশগুলোতে মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। ২০২২ সাল থেকে ১২১ টি দেশে এ রোগটি সনাক্ত হয়েছে এবং এক লাখ ৭৭ হাজার ২৫ জন (প্রায়) এতে আক্রান্ত হয়েছে এবং ২১৯ জন মারা গিয়েছেন। তাই এটি একটি উদ্বেগের বিষয় হিসেবে রয়ে গেছে। এই বিষয়ে নতুন করে সংক্রমনের সম্ভাবনা থাকায় সতর্কতা বজায় রাখা প্রয়োজন।
এমপক্সের ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি নির্ভর করবে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কার্যকারিতা, টিকাদান কর্মসূচির ব্যাপক বিতরণ, জনসচেতনতার উপর। এমপক্সের ভয়াবহ পরিমাণ কমিয়ে আনতে জনগণের সহযোগিতা এবং স্বাস্থ্যবিধির কঠোর নিরাপত্তা পালন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমপক্সের বর্তমান পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতির দিকে অগ্রসর হলেও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা। এ ব্যাপারে প্রয়োজনে পদক্ষেপ গ্রহণ করা অপরিহার্য।
Mpox কি কোভিড-১৯ থেকেও ভয়ংকর?-
এমপক্স এবং কোভিড-১৯ উভয়ই বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস দ্বারা সৃষ্টি রোগ। এদিকে এমপক্স একটি ভাইরাস ইনফেকশন যা সাধারণত বানরের মধ্যে পাওয়া যায় কিন্তু মানুষের মধ্যেও সংক্রমিত হয়ে থাকে।
অন্যদিকে কোভিড-১৯ হল করোনা ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট রোগ যা ২০১৯ সালে প্রথম শনাক্ত হয়। এ রোগে সংক্রমণের ফল স্বরূপ উচ্চ মৃত্যু। যদিও এমপক্স বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কম মারাত্মক, এটি আবার কিছু ক্ষেত্রে মারাত্মক হতে পারে। তবে এর সংক্রমনের বিস্তার এবং প্রতিক্রিয়া বিভিন্ন মানুষের ক্ষেত্রে ভিন্ন হতে পারে।
স্বাস্থ্য সংস্থার পর্যালোচনা:
আফ্রিকার দেশগুলোতে এমপক্সের বিস্তার দ্রুত হচ্ছে। এমতাবস্থায় বিশ্বজুড়ে জনস্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউ এইচ ও ) জরুরি অবস্থা জারি করেছে । গত দুই বছরের মধ্যে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। এর আগে ২০২২ সালে এই রোগের বিস্তার লাভ করার পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল। সবার
প্রথমে কঙ্গোতে এমপক্সের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এরপর প্রতিবেশী দেশগুলোতে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ে। প্রথম পর্যায়ে কঙ্গোতে এই রোগে ৪৫০ জনের মৃত্যু হয়। চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত কঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ১৩ হাজার ৭০০ জন। এইরূপ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে এবং মানুষের জীবন বাঁচাতে সমন্বিত আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা একান্ত অপরিহার্য। আফ্রিকার দেশগুলোতে মৃত্যুহার বেশি হলেও অন্যান্য দেশে তেমনটি দেখা যায়নি ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে যে, যদিও এমপক্স উদ্বেগজনক, তবুও এটি নিয়ে অপ্রয়োজনীয় ভয় বা আতঙ্কের দরকার নেই। ডাব্লিউএইচও স্বীকার করেছে যে, বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য এই রোগটি গুরুতর হতে পারে। তবে সাধারণত এটি অন্যান্য ভাইরাস যেমন গুটিবসন্ত বা কোভিড-১৯ এর মতো প্রাণঘাতী নয়। তারা জনসাধারণকে আশ্বস্ত করেছে যে, এই রোগটি বিপজ্জনক হতে পারে। বিশেষ করে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তাদের জন্য; তবে যথাযথ জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য।
বর্তমানে এমপক্স কোভিড-১৯ এর মত একটি গুরুতর মহামারীর সৃষ্টি না করলেও এতে জনগণের ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য একটি উদ্যোগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি নিয়ন্ত্রণ রাখতে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থা গুলোর কার্যকর পদক্ষেপ এবং জনসচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সার্বিকভাবে এই বিষয়ে সাধারণ জনগণকে নিরাপদ থাকার ও স্বাস্থ্যের প্রতি সচেতন থাকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।