ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে যাত্রা করা আন্তর্জাতিক বেসামরিক নৌবহর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা থেকে আটক ১৩৭ জন কর্মীকে অবশেষে তুরস্কে ফেরত পাঠানো হয়েছে। শনিবার স্থানীয় সময় বিকেলে তারা তুরস্কের ইস্তাম্বুলে পৌঁছান।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ফ্লোটিলায় অংশ নেওয়া ৪০টিরও বেশি নৌযান থেকে মোট ৪৫০ জনেরও বেশি আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তাদের মধ্য থেকে এই ১৩৭ জনকে বিশেষ উড়োজাহাজে করে ইসরায়েলি শহর ইলাতের রামন বিমানবন্দর থেকে তুরস্কে পাঠানো হয়।
ফেরত আসা কর্মীদের মধ্যে ৩৬ জন তুরস্কের নাগরিক। বাকিরা যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত, আলজেরিয়া, মরক্কো, ইতালি, কুয়েত, লিবিয়া, মালয়েশিয়া, মৌরিতানিয়া, সুইজারল্যান্ড, তিউনিসিয়া ও জর্ডানসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিক। সিনহুয়ার খবরে বলা হয়েছে, বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে ফ্লাইটটি ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে অবতরণ করে, যেখানে তুর্কি সরকারি কর্মকর্তারা ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা তাঁদের স্বাগত জানান।
তুরস্কের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম টিআরটি জানিয়েছে, দেশে ফেরার পর আন্দোলনকারীদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে, এরপর তাঁদের পুলিশ সদর দপ্তরে নিয়ে জবানবন্দি নেওয়া হবে। এছাড়া আন্তর্জাতিক জলসীমায় তুর্কি নাগরিকদের আটক করার ঘটনায় ইস্তাম্বুলের পাবলিক প্রসিকিউটর কার্যালয় আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করেছে।
জানা গেছে, গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা-তে প্রায় ৪২ থেকে ৪৪টি নৌযান অংশ নেয়, যেখানে ৪০টি দেশের ৪৫০–৫০০ জন মানবাধিকারকর্মী ছিলেন। আগস্টে স্পেনের বার্সেলোনা বন্দর থেকে তাদের যাত্রা শুরু হয়। উদ্দেশ্য ছিল—ইসরায়েলি নৌ-অবরোধ উপেক্ষা করে গাজার উপকূলে পৌঁছে খাদ্য ও ওষুধসহ মানবিক সহায়তা সরবরাহ করা।
কিন্তু গাজার জলসীমায় প্রবেশের আগেই আন্তর্জাতিক সমুদ্রে ইসরায়েলি বাহিনী অভিযান চালিয়ে ফ্লোটিলার গতিপথ রোধ করে। পরে নৌযানগুলো জব্দ করে এবং শত শত আন্দোলনকারীকে আটক করে ইসরায়েলের বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে হামাস গাজার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকেই ইসরায়েল সেখানে কঠোর নৌ-অবরোধ আরোপ করে রেখেছে। আর ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের সীমান্ত আক্রমণের পর শুরু হওয়া চলমান যুদ্ধে এই অবরোধ আরও কঠোর হয়ে পড়ে, যার ফলে গাজায় ভয়াবহ মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে।

