রাশিয়া কখনোই যুক্তরাষ্ট্রের চাপে মাথা নত করবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন- রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, ওয়াশিংটনের সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞাগুলো রুশ অর্থনীতিতে কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি রাশিয়ার দুটি বৃহৎ তেল কোম্পানি—রোসনেফট ও লুকঅয়েল—এবং তাদের সহযোগী প্রায় তিন ডজন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
এই পদক্ষেপের পর চীন ও ভারত রুশ তেল আমদানি কমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য রাশিয়ার তেল রপ্তানিজনিত আয় বন্ধ করা, যা ইউক্রেন যুদ্ধের প্রধান অর্থায়ন উৎস হিসেবে বিবেচিত।
গতকাল বৃহস্পতিবার পুতিন বলেন, “কোনো আত্মমর্যাদাশীল দেশ চাপের মুখে কখনো নতি স্বীকার করে না।” তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপকে “অমৈত্রীসুলভ এবং ব্যর্থ চাপ প্রয়োগের চেষ্টা” হিসেবে আখ্যা দেন।
প্রেসিডেন্ট পুতিন আরো বলেন, নিষেধাজ্ঞাগুলো রাশিয়ার অর্থনীতিকে পুরোপুরি নাড়াতে পারবে না, যদিও এতে “কিছু ক্ষতি হবে।”
পুতিন ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্দেশে বলেন, রুশ তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে প্রেসিডেন্টের ভাবা উচিত, তাঁর উপদেষ্টারা আসলে কার স্বার্থে কাজ করছেন। তিনি সতর্ক করে দেন, এসব নিষেধাজ্ঞা তেলের বৈশ্বিক দাম আরও বাড়াবে।
তবে পুতিনের সতর্কতা এখানেই শেষ হয়নি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ারি দেন—যদি ওয়াশিংটন ইউক্রেনকে টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করে এবং সেগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়, তবে রাশিয়া “ব্যাপক ধ্বংসাত্মক না হলেও অত্যন্ত শক্তিশালী” প্রতিক্রিয়া দেখাবে।
নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলো ‘রুশ-মার্কিন সম্পর্ক শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে কোনোই কাজে না আসা অমৈত্রীসুলভ পদক্ষেপ’। এটি রাশিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টি করার এক ব্যর্থ চেষ্টা। কোনো আত্মমর্যাদাশীল দেশ কখনো চাপের মুখে নতি স্বীকার করে না।
-ভ্লাদিমির পুতিন, রুশ প্রেসিডেন্ট

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী, কোনো বিদেশি রাষ্ট্র বা প্রতিষ্ঠান রাশিয়ার বড় তেল কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ব্যবসা করতে পারবে না। এর ফলে রাশিয়া অনেকাংশে বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থার বাইরে চলে যাবে।
ইতিমধ্যে চীন ও ভারতের প্রধান তেল কোম্পানিগুলো রুশ তেল আমদানি সাময়িকভাবে স্থগিত করার ইঙ্গিত দিয়েছে।
ভারতের রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ জানিয়েছে, তারা রুশ তেল কেনার বিষয়ে পুনর্মূল্যায়ন করছে। চীনের রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানিগুলোও আশঙ্কা করছে, নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করলে বড় ধরনের আর্থিক ঝুঁকিতে পড়তে হবে।
রাশিয়ার মোট দেশজ উৎপাদনের প্রায় এক–পঞ্চমাংশই আসে তেল ও গ্যাস খাত থেকে। তাই ভারত ও চীনের মতো ক্রেতারা যদি আমদানি কমায়, ক্রেমলিনের রাজস্বে বড় ধাক্কা লাগবে। এতে বৈশ্বিক তেলের দামও আরও বাড়তে পারে।
এই প্রেক্ষাপটে পুতিন বলেন, “সংলাপ সব সময় যুদ্ধের চেয়ে উত্তম।” তবে রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের জ্যেষ্ঠ সদস্য ও সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্র কার্যত রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।”
রাশিয়ার সরকারি অর্থনীতি–বিশ্লেষক ইগর ইউশকভ বলেন, “রোসনেফট ও লুকঅয়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা এশীয় ক্রেতাদের দ্বিধায় ফেলবে। এতে রাশিয়াকে মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে তেল বিক্রি করতে হবে, যা পরিবহন খরচ বাড়াবে।”
নিষেধাজ্ঞাগুলো কার্যকর হওয়ার আগে রাশিয়ার হাতে প্রায় এক মাস সময় আছে। এই সময়ের মধ্যে মস্কো নতুন বাণিজ্য–কৌশল নির্ধারণে কাজ করছে।
বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া আগের মতোই ‘ছায়া নৌবহর’ ও বিকল্প পথ ব্যবহার করে তেল রপ্তানি চালিয়ে যেতে পারে, যদিও এতে লজিস্টিক জটিলতা ও ব্যয় বাড়বে।
তবে পশ্চিমা আর্থিক ব্যবস্থায় প্রবেশাধিকার হারানোর আশঙ্কায় বহু আন্তর্জাতিক কোম্পানি ইতিমধ্যে রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।

