যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও ফিলিস্তিনের গাজায় মানবিক পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। প্রতিশ্রুত ত্রাণের মাত্র এক-চতুর্থাংশ গাজায় প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল, অর্থাৎ মোট ত্রাণের প্রায় ৭৫ শতাংশই আটকে রেখেছে দেশটি।
রোববার (২ নভেম্বর) আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গ করে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা অব্যাহত রয়েছে। এতে গাজায় হতাহতের সংখ্যা ও মানবিক বিপর্যয় দ্রুত বাড়ছে।
গাজার সরকারি গণমাধ্যম দপ্তর জানিয়েছে, ১০ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ৩ হাজার ২০৩টি বাণিজ্যিক ও ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করেছে—যা দৈনিক গড়ে মাত্র ১৪৫টি। যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে নির্ধারিত দৈনিক ৬০০ ট্রাকের তুলনায় এটি মাত্র ২৪ শতাংশ। গাজার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে ত্রাণ ও বাণিজ্যিক পণ্যের প্রবেশে বাধা দিচ্ছে, যার ফলে ২৪ লাখের বেশি মানুষ তীব্র সংকটে পড়েছে।
এ অবস্থায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ যুদ্ধবিরতি মধ্যস্থতাকারীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে যেন “কোনও শর্ত বা বিধিনিষেধ ছাড়াই” গাজায় ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিতে ইসরায়েলের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয়।
ত্রাণ প্রবাহ কিছুটা বাড়লেও ইসরায়েলি বিধিনিষেধের কারণে অধিকাংশ মানুষ এখনো খাবার, পানি ও ওষুধের মারাত্মক ঘাটতিতে ভুগছেন। টানা দুই বছরের ইসরায়েলি হামলায় বহু পরিবার এখনো আশ্রয়হীন; ধ্বংসস্তূপে পরিণত ঘরবাড়ি থেকে বাঁচতে অনেকেই খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র ফারহান হক জানান, ইসরায়েলি নির্দেশে রুট পরিবর্তনের কারণে ত্রাণ কার্যক্রম মারাত্মকভাবে সীমিত হয়ে পড়েছে। এখন কনভয়গুলোকে মিসরের সীমান্তসংলগ্ন ফিলাডেলফি করিডর হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও সংকীর্ণ উপকূলীয় পথে চলতে হচ্ছে, যেখানে যানজট প্রায় স্থবির। তিনি বলেন, “ত্রাণ কার্যক্রম সচল রাখতে অতিরিক্ত সীমান্তপথ ও অভ্যন্তরীণ রুট জরুরি।”
যুদ্ধবিরতির শর্ত ভেঙে ইসরায়েল শনিবারও গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে বিমান ও ট্যাংকের হামলা চালায়। দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস এলাকায় গোলাবর্ষণে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হয়, আর উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে একাধিক আবাসিক ভবন ধ্বংস করা হয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু আজজুম জানান, খান ইউনিসে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, “ইসরায়েলি ড্রোন ও ভারী গোলাবর্ষণে ঘরবাড়ি ও কৃষিজমি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে।” আকাশে ড্রোনের উপস্থিতি ও অব্যাহত বোমাবর্ষণের কারণে গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থা বহু ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছাতে পারছে না।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২২২ ফিলিস্তিনি নিহত ও ৫৯৪ জন আহত হয়েছেন।

