ইসরাইল পরিকল্পিতভাবে আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধি করছে এবং নিরাপত্তা ইস্যুকে অজুহাত বানিয়ে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা। একই সঙ্গে তিনি সিরিয়ায় জাতীয় ঐক্য, শান্তি এবং গণতান্ত্রিক সংস্কারের অগ্রগতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
দোহা ফোরামে ভাষণকালে আল-শারা বলেন, তার সরকার শান্তিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে, নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করছে এবং সংবিধান ঘোষণার পাঁচ বছরের মধ্যে সংসদ নির্বাচন আয়োজন করবে।
সিএনএন-এর ক্রিশ্চিয়ান আমানপুরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ইসরাইল অক্টোবর ৭ হামলাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে সামরিক অভিযান বাড়াচ্ছে। তার ভাষায়, “ইসরায়েল এখন এমন এক রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে, যারা ভূতের সঙ্গে যুদ্ধ করছে।”
ইসরাইলি হামলার প্রেক্ষাপট-
২০২৪ সালের ডিসেম্বর বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের পর সিরিয়ায় ইসরাইলি বিমান হামলায় কয়েকশ মানুষ নিহত হয়েছেন। এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলে অনুপ্রবেশ, বেআইনি আটক অভিযান ও চেকপোস্ট স্থাপনের অভিযোগও করেছেন আল-শারা।
১৯৭৪ বিচ্ছিন্নতা চুক্তি মানার আহ্বান-
আল-শারা বলেন, ইসরাইলকে আসাদের পতনের পূর্ববর্তী অবস্থানে ফিরে যেতে হবে এবং গোলান মালভূমি নিয়ে ১৯৭৪ সালের যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চলতে হবে। তিনি সতর্ক করে উল্লেখ করেন, অর্ধশতাব্দী ধরে টিকে থাকা চুক্তিকে পরিবর্তনের চেষ্টা অঞ্চলকে বিপদে ফেলতে পারে। তিনি দাবি করেন, সিরিয়া কখনোই ইসরাইলে হামলা চালায়নি; বরং নিজেদের ভূখণ্ড রক্ষায় লড়াই করেছে।
সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ ঐক্য ও পুনর্মিলন-
দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ে আল-শারা বলেন, জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার পথে অগ্রগতি হচ্ছে। বিভিন্ন গোষ্ঠী ও ব্যক্তিকে ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে ভবিষ্যতের স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করতে।
তিনি সম্প্রদায়ভিত্তিক রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, সিরিয়ার সব জনগোষ্ঠী বিপ্লবের অংশ ছিল। উপকূলীয় এলাকা ও সুয়াইদায় অতীতে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রসঙ্গেও আল-শারা বলেছেন, সিরিয়া একটি আইনের রাষ্ট্র, এবং এখানে আইনই শাসন করে।
নারী অধিকার ও ভবিষ্যৎ নির্বাচন-
নিজ প্রশাসনে নারীর অধিকার ও অংশগ্রহণ সুরক্ষিত আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নারীরা ক্ষমতায়িত এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন। তিনি বলেন, “নারীরা নিরাপদ, ভয় পাবেন পুরুষদের জন্য।”
সিরিয়ার সাংবিধানিক ঘোষণার পাঁচ বছরের মধ্যে সংসদ নির্বাচন আয়োজন করা হবে, যা দেশের অন্তর্বর্তী সময়ের সমাপ্তি নির্দেশ করবে।
শেষে আল-শারা বলেন, “সিরিয়া কোনো একক গোত্র নয়; এটি নানা ভাবনার সমৃদ্ধ দেশ। শাসকদের জনগণের সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে এবং জনগণের অংশগ্রহণই মূল ভিত্তি।”

