Close Menu
Citizens VoiceCitizens Voice
    Facebook X (Twitter) Instagram YouTube LinkedIn WhatsApp Telegram
    Citizens VoiceCitizens Voice Sun, Dec 7, 2025
    • প্রথমপাতা
    • অর্থনীতি
    • বাণিজ্য
    • ব্যাংক
    • পুঁজিবাজার
    • বিমা
    • কর্পোরেট
    • বাংলাদেশ
    • আন্তর্জাতিক
    • আইন
    • অপরাধ
    • মতামত
    • অন্যান্য
      • খেলা
      • শিক্ষা
      • স্বাস্থ্য
      • প্রযুক্তি
      • ধর্ম
      • বিনোদন
      • সাহিত্য
      • ভিডিও
    Citizens VoiceCitizens Voice
    Home » উইঘুর মুসলিমদের উপর চীনের বর্বর নির্যাতন
    আন্তর্জাতিক

    উইঘুর মুসলিমদের উপর চীনের বর্বর নির্যাতন

    ফাহিমা আক্তারJanuary 2, 2025Updated:January 19, 2025
    Facebook Twitter Email Telegram WhatsApp Copy Link
    Share
    Facebook Twitter LinkedIn Telegram WhatsApp Email Copy Link

    উইঘুর মুসলিমরা চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে বসবাসরত একটি তুর্কি-মুসলিম সংখ্যালঘু গোষ্ঠী। তাদের ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক এবং ভাষাগত বৈশিষ্ট্য চীনের প্রধান জনগণ হান চীনের সাথে অনেকটাই আলাদা। এই বৈশিষ্ট্যগুলির কারণে চীনা সরকারের জন্য এটি একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষত শি জিনপিংয়ের প্রশাসন এবং কমিউনিস্ট পার্টির শাসনামলে।

    উইঘুর মুসলিমদের বিরুদ্ধে চীনা সরকারের অত্যাচারের ইতিহাস অনেক পুরনো। তবে ২০১৪ সালের পর থেকে, এই নির্যাতন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। এর পেছনে সরকার কর্তৃক নিরাপত্তার খুঁটি হিসেবে বিচ্ছিন্নতাবাদী, সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের হুমকি দেখানো হচ্ছে। চীনা সরকার উইঘুরদের স্বাধীনতা ও তাদের স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক পরিচয়কে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করে, যা মূলত একটি অজুহাত হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশেষত জিনজিয়াং অঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলির ক্রিয়াকলাপের কারণে সরকার তাদেরকে “সন্ত্রাসী” বলে চিহ্নিত করেছে। যার মাধ্যমে একটি বৈধতা অর্জন করতে চাচ্ছে তাদের দমনমূলক নীতির জন্য।

    চীনা সরকারের দমনমূলক নীতি-

    ২০১৪ সালে, চীনা সরকার “পুনর্গঠন ও দমনমূলক নীতি” গ্রহণ করে। যার ফলে উইঘুর মুসলিমদের উপর ব্যাপক নির্যাতন শুরু হয়। বিশেষকরে ২০১৭ সাল থেকে চীনা সরকার জিনজিয়াং অঞ্চলে হাজার হাজার উইঘুর মুসলিমকে “পুনঃপ্রশিক্ষণ শিবির” বা “শিক্ষা কেন্দ্র”তে পাঠানো শুরু করে। এসব শিবিরের উদ্দেশ্য ছিল উইঘুরদের তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস, সাংস্কৃতিক পরিচয় এবং ভাষা থেকে দূরে সরিয়ে, হান চীনের সংস্কৃতিতে সংযুক্ত করা।

    সরকারি পক্ষ থেকে এসব শিবিরের কার্যক্রমের উদ্দেশ্য ঘোষণা করা হলেও, বাস্তবে সেখানে চলমান নির্যাতন, ধর্মীয় নিপীড়ন এবং সাংস্কৃতিক ধ্বংসের এক অমানবিক চিত্র ছিল। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, এসব শিবিরে বন্দি ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হতো। তাঁদের ধর্মীয় স্বাধীনতা, ভাষাগত অধিকার এবং সাংস্কৃতিক পরিচয়কে একেবারে নিঃশেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করা হতো।

    বিচ্ছিন্নতাবাদ ও সন্ত্রাসবাদের অজুহাত-

    চীনা সরকার উইঘুর মুসলিমদের বিরুদ্ধে যে নির্যাতন চালাচ্ছে, তার পেছনে সবচেয়ে বড় যুক্তি হিসেবে “বিচ্ছিন্নতাবাদ” এবং “সন্ত্রাসবাদ” এর বিষয়টি তুলে ধরা হচ্ছে। সরকার মনে করে, উইঘুররা যদি তাদের ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক এবং ভাষাগত বৈশিষ্ট্য ধরে রাখে, তবে তারা দেশের একতার জন্য হুমকি হতে পারে। এর ফলে চীনা প্রশাসন উইঘুর মুসলিমদের দমন করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে।

    ২০১৪ সালে, উইঘুরদের উপর হামলা এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যক্রমের কারণে সরকার এই এলাকাকে “সন্ত্রাসী অঞ্চল” হিসেবে চিহ্নিত করে। এর পর থেকে, চীনা সরকার তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে, যার আওতায় উইঘুর মুসলিমদের উপর নির্যাতন এবং ভয়াবহ শাস্তি প্রদান করা হয়। এমনকি, অনেক ক্ষেত্রেই সাধারণ নিরীহ মানুষকেও এই অভিযানে শিকার হতে হয়।

    শিবির ও পুনঃপ্রশিক্ষণের নামে অত্যাচার-

    উইঘুর মুসলিমদের উপর নির্যাতনের আরেকটি বড় দিক হলো “পুনঃপ্রশিক্ষণ” শিবির। চীনা সরকারের দাবি, এসব শিবিরে উইঘুর মুসলিমদের “অপরাধমূলক” চিন্তা-চেতনা থেকে মুক্ত করে তাদের পুনর্বাসন করা হয়। যাতে তারা দেশের মূলধারায় মিশে যেতে পারে। তবে বাস্তবে এগুলো ছিল অত্যন্ত ভয়াবহ শিবির। যেখানে বন্দিদেরকে শারীরিক নির্যাতন, মানসিক অত্যাচার এবং তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে নিষ্ঠুর শাস্তি দেওয়া হত।

    শিবিরগুলির কার্যক্রম ব্যাপকভাবে গোপন রাখা হলেও, একাধিক তদন্ত এবং রিপোর্টে প্রকাশ পায় যে এখানে বন্দিদেরকে টর্চার করা হতো। তাদের ধর্মীয় আচার নিষিদ্ধ করা হত এবং তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করা হচ্ছিল।

    এভাবে চীনা সরকারের দমনমূলক নীতি এবং ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক নিধন উইঘুর মুসলিমদের জীবনে এক ভয়ঙ্কর সংকট সৃষ্টি করেছে। এই দমননীতি শুধু উইঘুর মুসলিমদের অস্তিত্বের জন্যই নয়। তাদের মৌলিক মানবাধিকার এবং স্বাধীনতা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মহলের নিন্দা ও সমালোচনার মুখে পড়েছে।

    এখন চীনের শাসকরা তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য আরও কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। যা উইঘুর মুসলিমদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা আরো বৃদ্ধি করতে পারে। আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া এবং ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে, পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

    শিবিরগুলির ভয়াবহতা, ধর্মীয় নিপীড়ন এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া-

    উইঘুর মুসলিমদের উপর চীনের নির্যাতনের সবচেয়ে ভয়াবহ অংশ হলো তাদেরকে “পুনঃপ্রশিক্ষণ” শিবিরে বন্দী করা। এসব শিবিরে উইঘুর মুসলিমদেরকে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস, সাংস্কৃতিক চর্চা, ভাষা এবং পরিচয় থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। চীনা সরকারের দৃষ্টিতে, এগুলি হলো “শিক্ষা কেন্দ্র” কিন্তু বাস্তবে এটি ছিল একটি ভয়ঙ্কর অত্যাচারের ক্ষেত্র যেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন ছিল সবচেয়ে চরম।

    শিবিরগুলিতে বন্দি থাকা উইঘুর মুসলিমরা বিভিন্ন ধরণের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এসব শিবিরে বন্দিদেরকে নিয়মিত শাস্তি দেওয়া হয়। তাদের ধর্মীয় আচার পালন করতে দেওয়া হয় না। তাদেরকে চীনের মূলধারা সংস্কৃতির সাথে মিশে যেতে বাধ্য করা হয়। শিবিরে থাকার সময় তাদেরকে নিজেদের ধর্মীয় বিশ্বাস ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয় এবং অনেকে শাস্তি হিসেবে নির্যাতনের শিকার হয়।

    তথ্যসূত্র অনুসারে, উইঘুর মুসলিমদেরকে সেখানে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। যাদের উপর অত্যাচার চালানোর জন্য বিশেষ বাহিনী নিযুক্ত থাকে। বন্দিদেরকে শারীরিক কষ্ট সহ্য করার জন্য মিথ্যা স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করা হয়। তাদের ধর্মীয় চিহ্ন যেমন ইসলামি পোশাক, হিজাব পরা, অথবা ধর্মীয় আচার পালন করা নিষিদ্ধ ছিল।

    শিবিরগুলির একটি বড় উদ্দেশ্য ছিল উইঘুর মুসলিমদের সংস্কৃতি, ভাষা এবং ধর্মীয় বিশ্বাস মুছে ফেলা। বন্দিদেরকে হান চীনের ভাষা শেখানো হতো, উইঘুর ভাষা শেখানোর কোনও সুযোগ ছিল না। তাদের মধ্যে ধর্মীয় বিশ্বাসের পরিবর্তন সাধনের জন্য নানা ধরনের মানসিক অত্যাচার চালানো হত।

    উইঘুর মুসলিমরা তাদের ধর্মীয় আচার এবং ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী। তবে চীনা সরকারের দমনমূলক নীতির ফলে তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং সাংস্কৃতিক পরিচয় বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। শাবান মাসে রোজা রাখা, মুসলিম নারীদের হিজাব পরা, কিংবা অন্য ধর্মীয় আচার পালন করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

    মসজিদগুলির ওপরও কঠোর নজরদারি ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। অনেক মসজিদ ধ্বংস করা হয়েছে। অন্যদিকে যেগুলি অবশিষ্ট রয়েছে, সেগুলিতে ধর্মীয় কার্যক্রম সীমিত করা হয়েছে। এমনকি মসজিদগুলিতে নামাজ পড়া, কোরআন পাঠ করা, ইসলামি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা-এসবেও বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে।

    এভাবে ধর্মীয় নিপীড়নের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক সংকটও শুরু হয়েছে। উইঘুর ভাষার শিক্ষা বন্ধ করা হয়েছে এবং উইঘুরদের চীনা সংস্কৃতির সাথে মিশিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এই শর্তে, উইঘুর মুসলিমরা তাদের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন।

    উইঘুর মুসলিম নারীদের উপর অত্যাচারের মাত্রা আরো ভয়াবহ। তাদেরকে শিবিরে পাঠানোর পর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার ছাড়াও যৌন হয়রানি ও ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। একাধিক প্রতিবেদন ও সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে যে, এই নারীদের অনেককেই চীনা পুরুষদের সাথে বিয়ে করতে বাধ্য করা হয়েছে।

    চীনের উদ্দেশ্য ছিল, মুসলিম নারীদেরকে সামাজিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচ্যুত করা এবং তাদের হান চীনের সমাজে অন্তর্ভুক্ত করা। এর ফলে, উইঘুর মুসলিম নারীরা না শুধুমাত্র শারীরিক নির্যাতন বরং শারীরিক স্বাধীনতা এবং আত্মপরিচয়ের উপরও আঘাত পেয়েছেন।

    চীনের উইঘুর মুসলিমদের প্রতি নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশগুলি চীনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ২০২১ সালে, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন চীনা কর্মকর্তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং তাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য শাস্তি দাবি করেছে।

    জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলিও চীনের নিন্দা করেছে এবং উইঘুর মুসলিমদের উপর অত্যাচারের শিকার হওয়ার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তবে চীন সরকার এইসব আন্তর্জাতিক সমালোচনাকে অস্বীকার করে এবং বলে যে, এটি তাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং বিদেশী হস্তক্ষেপ অগ্রহণযোগ্য।

    তবে এই আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ ও নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও, চীনা সরকারের দমনমূলক নীতি এবং উইঘুর মুসলিমদের প্রতি নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে। চীনা সরকারের আস্থাহীন অবস্থান এবং আন্তর্জাতিক সমালোচনার প্রতি তাদের অবহেলা, উইঘুর মুসলিমদের অবস্থার উন্নতির পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    চীনের এই নীতি যত দিন চলতে থাকবে, ততদিন উইঘুর মুসলিমদের মানবাধিকার রক্ষা এবং তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয় সুরক্ষিত করা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে থাকবে।

    উইঘুর মুসলিমদের উপর চীনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বর্তমানে আন্তর্জাতিক মহলে একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। চীনা সরকারের নিপীড়নমূলক নীতির বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ ও নিষেধাজ্ঞা জারি হলেও, চীনা সরকারের দৃঢ় অবস্থান এবং পৃথিবীর কিছু দেশের নীরবতার কারণে পরিস্থিতি পরিবর্তিত হতে দেখা যাচ্ছে না।

    আন্তর্জাতিক চাপ এবং প্রতিক্রিয়া-

    বিশ্বব্যাপী চীনের বিরুদ্ধে উইঘুর মুসলিমদের প্রতি নির্যাতন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচনা হচ্ছে। বিভিন্ন দেশের সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি চীনা সরকারের দমনমূলক নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ২০১৮ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে উইঘুর মুসলিমদের উপর চীনের অত্যাচারের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সেখানে বলা হয়, চীনা সরকারের এসব পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তির বিরুদ্ধে যাচ্ছে।

    বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মধ্যে গভীর উদ্বেগ দেখা গেছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন যেমন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা উইঘুর মুসলিমদের প্রতি চীনের অত্যাচারকে “জাতিগত নিধন” হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এসব প্রতিবেদন ও উপস্থাপিত প্রমাণ আন্তর্জাতিক মহলে চীনের নিন্দা বৃদ্ধি করেছে।

    তবে চীনের সরকারের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে এবং তারা দাবি করেছে যে, এটি তাদের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অধিকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নেই। চীন সরকারের এই বিরোধী মনোভাব এবং তাদের দৃঢ় অবস্থান, উইঘুর মুসলিমদের প্রতি মানবাধিকার লঙ্ঘনের অবসান ঘটাতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    জাতিগত শুদ্ধিকরণের নীতি-

    চীনা সরকারের এই পদক্ষেপগুলোকে জাতিগত শুদ্ধিকরণ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। যা মূলত উইঘুর মুসলিমদের স্বকীয়তা মুছে ফেলার উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে। ২০১৭ সালে, চীনা সরকার জিনজিয়াং অঞ্চলে উইঘুর মুসলিমদের “পুনঃপ্রশিক্ষণ শিবির” বা “শিক্ষা কেন্দ্র” স্থাপন শুরু করে। যেখানে তারা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

    এটি একটি সুপরিকল্পিত জাতিগত শুদ্ধিকরণ প্রক্রিয়া, যেখানে সরকারের লক্ষ্য ছিল উইঘুর মুসলিমদের ধর্মীয় বিশ্বাস, ভাষা এবং সাংস্কৃতিক পরিচয় মুছে ফেলানো এবং তাদেরকে চীনা রাষ্ট্রের মূলধারায় ঢুকিয়ে দেওয়া। উইঘুর ভাষা, ইসলামিক পোশাক, ধর্মীয় আচার, এমনকি উইঘুরদের নিজেদের মধ্যে সামাজিক সম্পর্কও সরকারের দমননীতি থেকে বাদ পড়েছে।

    এই জাতীয় পদক্ষেপের ফলে উইঘুর মুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং সাংস্কৃতিক পরিচয় হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যা তাদের মৌলিক অধিকার এবং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। একে জাতিগত শুদ্ধিকরণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। যা জাতিগত বৈচিত্র্য ও ধর্মীয় স্বাধীনতাকে সংকুচিত করার একটি পরিকল্পিত প্রচেষ্টা।

    উইঘুর মুসলিমদের ভবিষ্যতে কী অপেক্ষা করছে?

    উইঘুর মুসলিমদের ভবিষ্যত এখন এক গুরুতর সংকটের মুখে রয়েছে। চীনা সরকারের দমনমূলক নীতির কারণে, উইঘুররা তাদের মৌলিক মানবাধিকার হারাচ্ছে। তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা, ভাষাগত অধিকার এবং সাংস্কৃতিক পরিচয় আজ সংকটাপন্ন। ভবিষ্যতে যদি আন্তর্জাতিক চাপ এবং প্রতিরোধ না বাড়ানো হয়, তবে উইঘুর মুসলিমদের পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

    এছাড়া উইঘুর মুসলিমদের পরিবারগুলোর মধ্যে ব্যাপক বিচ্ছিন্নতা দেখা যাচ্ছে। হাজার হাজার পরিবার তাদের প্রিয়জনদের নিখোঁজ হওয়ার খবর পাচ্ছে, যারা হয়তো চীনা সরকারের শিবিরে বন্দী। একসময় শান্তিপূর্ণ ও ধর্মনিরপেক্ষ ছিল এই অঞ্চলটি। আজ তা ভীতিকর এক শাসনের আওতায় চলে গেছে।

    উইঘুর মুসলিমদের উপর চীনের এই অত্যাচার শুধু একটি নিছক নির্যাতনের ঘটনা নয়। এটি তাদের স্বাধীনতা, ধর্মীয় অধিকার এবং সাংস্কৃতিক পরিচয় মুছে ফেলার একটি সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা। তাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত এই বর্বরতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে এবং আন্তর্জাতিক মহলকে এটি মোকাবেলা করার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে তাগিদ দিয়েছে।

    উইঘুর মুসলিমদের উপর চীনের বর্বর নির্যাতন একটি গুরুতর মানবাধিকার সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা শুধু চীনে নয়, গোটা বিশ্বের জন্য উদ্বেগের বিষয়। চীনা সরকারের দমনমূলক নীতি, শুদ্ধিকরণ প্রক্রিয়া এবং আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ এই সংকটের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। উইঘুর মুসলিমদের মানবাধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক সমাজের আরও কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন। যাতে তাদের সংস্কৃতি, ধর্ম এবং পরিচয় সুরক্ষিত থাকে।

    উইঘুর মুসলিমদের প্রতি চীনা সরকারের দমননীতি যতদিন অব্যাহত থাকবে, ততদিন পর্যন্ত তাদের জীবনে অন্ধকার এবং নির্যাতনের আবহ থাকবে। বিশ্বের সামনে একে মোকাবেলা করার এখনই সময় এবং প্রয়োজনে শক্তিশালী আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে উইঘুর মুসলিমদের অধিকার পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করা উচিত।

    Share. Facebook Twitter LinkedIn Email Telegram WhatsApp Copy Link

    সম্পর্কিত সংবাদ

    আন্তর্জাতিক

    বেনিনে প্রেসিডেন্ট উৎখাতের দাবি সেনাদের, সরকারের অস্বীকার

    December 7, 2025
    আন্তর্জাতিক

    মার্কিন ইস্যুতে মাদুরোকে কী পরামর্শ দিলেন এরদোয়ান

    December 7, 2025
    আন্তর্জাতিক

    ‘ইসরাইল আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়াচ্ছে’—অভিযোগ আল-শারার

    December 7, 2025
    Leave A Reply Cancel Reply

    সর্বাধিক পঠিত

    সাউথইস্ট ব্যাংকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাত

    আইন আদালত October 7, 2025

    ক্রেতারা ভারত-চীন ছাড়ছে, বাংলাদেশ পাচ্ছে অর্ডার

    অর্থনীতি August 15, 2025

    সব ব্যবসায়ী ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপী নয়

    মতামত January 13, 2025

    বরিশালের উন্নয়ন বঞ্চনা: শিল্প, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য ও পর্যটন খাতে নেই অগ্রগতি

    মতামত April 22, 2025
    সংযুক্ত থাকুন
    • Facebook
    • Twitter
    • Instagram
    • YouTube
    • Telegram

    EMAIL US

    contact@citizensvoicebd.com

    FOLLOW US

    Facebook YouTube X (Twitter) LinkedIn
    • About Us
    • Contact Us
    • Terms & Conditions
    • Comment Policy
    • Advertisement
    • About Us
    • Contact Us
    • Terms & Conditions
    • Comment Policy
    • Advertisement

    WhatsAppp

    01339-517418

    Copyright © 2025 Citizens Voice All rights reserved

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.