দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত দেশে ৮০,৬৩৪ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। প্রতি দিন মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে এবং আক্রান্তের সংখ্যা ঢাকার বাইরেও ব্যাপকভাবে বেড়ে চলেছে।
সরকার এই মুহূর্তে ডেঙ্গুর ভ্যাকসিন প্রয়োগের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে না, কারণ দেশীয় সব বয়সীদের জন্য কার্যকর ভ্যাকসিন এখনও নেই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মো. আবু জাফর বলেন, “বেশ কিছু দেশে সীমিত পরিমাণে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু কোনো দেশই এটি বিস্তৃতভাবে প্রয়োগ করছে না। তাই আমাদের ফোকাস ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায়।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, “জ্বর হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রোগীরা যদি শেষ পর্যায়ে হাসপাতালে আসে, তখন চিকিৎসার সম্ভাবনা কমে যায়।” বর্তমান সময়ে প্রাদুর্ভাবের সর্বোচ্চ সংক্রমণ এলাকায় হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত স্যালাইন সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে এবং ডেঙ্গুর এনএস১ পরীক্ষা ফ্রি করা হয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৯১২ জন নতুন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৫% পুরুষ, এবং সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত বয়সী জনগোষ্ঠী হলো ১৬–২৫ বছর। মৃত্যুর হিসাব অনুযায়ী, শিশুদের (০–১৫ বছর) মধ্যে মৃত্যুর হার বিশেষভাবে উদ্বেগজনক। এ পর্যন্ত মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৩১৮, যা প্রাদুর্ভাবের উদ্বেগজনক প্রবণতা নির্দেশ করছে।
বর্তমানে বিশ্বে দুইটি ডেঙ্গু ভ্যাকসিন আছে—ডেংভ্যাক্সিয়া এবং কিউডেঙ্গা। তবে উভয়ই এখনও বাংলাদেশে ব্যাপক ব্যবহারের উপযোগী নয়। কিউডেঙ্গা (টিএকে-০০৩) একমাত্র সুপারিশকৃত ভ্যাকসিন, যা ৬–১৬ বছর বয়সী শিশুদের জন্য সীমিত এলাকায় ব্যবহারযোগ্য। ডেংভ্যাক্সিয়া ভ্যাকসিন ১৯–২১ দেশে অনুমোদিত, কিন্তু তা তিন ডোজে দেওয়া হয় এবং বাংলাদেশে এখনও প্রয়োগ হচ্ছে না।
দেশীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইসিডিডিআরবি মার্কিন ভার্মন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে এক ডোজের চতুর্মুখী ডেঙ্গু ভ্যাকসিন ‘টিভি০০৫’ তৈরি করছে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে সেকেন্ড ফেজ ট্রায়াল সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। গবেষকরা আশা করছেন, থার্ড ফেজ ট্রায়াল আগামী মাসে শুরু হবে, এবং এটি বাংলাদেশের ডেঙ্গু প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করাচ্ছেন, শুধুমাত্র ফগিং বা আংশিক পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়। সম্পূর্ণ ইন্টিগ্রেটেড ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট (আইভিএম) পদ্ধতি, প্রশিক্ষিত কর্মী, আধুনিক সরঞ্জাম এবং ওয়ার্ড পর্যায়ের ডেঙ্গু কন্ট্রোল টাস্কফোর্স ছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কঠিন।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ডেঙ্গু প্রতিরোধে এখনই জনসচেতনতা, মশক নিয়ন্ত্রণ এবং চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় জোর দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, এই প্রাদুর্ভাব নভেম্বর জুড়ে চলতে পারে এবং এটি নিয়ন্ত্রণে না আনলে পরিস্থিতি আরও গুরুতর হতে পারে।

