স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক পিএলসির চট্টগ্রামের বোয়ালখালী শাকপুরা শাখার ভবন ভাড়া নিয়ে একই ব্যাংকের পরিচালক মোহাম্মদ জাহেদুল হক ও তার ভাই মোহাম্মদ এনামুল হকের বিরুদ্ধে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ অনুযায়ী, তারা অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের পাশাপাশি ভাড়ার চুক্তিতে প্রকৃত দাগ ও খতিয়ান গোপন করে অন্য জমির তথ্য উল্লেখ করেছেন। এমনকি ভবনের প্রকৃত মালিক দুই ভাই—মোহাম্মদ ছাইদুল হক ও মোহাম্মদ নেছারুল হক—ভাড়ার অংশ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এ ভাড়ার বিপরীতে ভ্যাট ও কর পরিশোধ হচ্ছে ব্যাংকের তহবিল থেকে, যা ব্যাংকের আর্থিক ক্ষতির কারণ হলেও সুবিধাভোগী হয়েছেন পরিচালক জাহেদুল হক।
সম্প্রতি এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্ট্রিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিস ডিপার্টমেন্টে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়, শাকপুরা মৌজার বি.এস. ৩৩৭০ নম্বর খতিয়ানের ৪৩০৮, ৪৩০৯ ও ৪৩১২ দাগের জমিতে ভবনটি নির্মিত। জমির মালিক পাঁচ ভাই—ছাইদুল হক, নেছারুল হক, জাহেদুল হক, এনামুল হক ও জসিমুল হক। কিন্তু ভাড়ার চুক্তিতে পরিচালক জাহেদুল হক উল্লেখ করেন ৫০৪৪ নম্বর খতিয়ান এবং ৪৩১৪, ৪৩১৫, ২৯১২, ৪৪৯৯ ও ৪৪৩৪ নম্বর দাগের জমি, যা প্রকৃত ভবনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। এতে প্রকৃত দুই মালিককে ভাড়ার অংশ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, যৌথ সম্পত্তিকে একক মালিকানা হিসেবে দেখিয়ে ব্যাংকের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। প্রায় তিন হাজার বর্গফুটের ফ্লোরের মাসিক ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৫১ হাজার টাকা। এতে ভ্যাট ও কর যোগ হয়ে ব্যাংকের ব্যয় আরও বেড়েছে। ২০১৭ সালের ১৯ অক্টোবর থেকে আট বছরের জন্য এই চুক্তি কার্যকর হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বোয়ালখালী এলাকায় একই আয়তনের ভবনের ভাড়া সাধারণত ৩০ হাজার টাকার মধ্যে সীমিত থাকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে এই ভাড়াচুক্তিকে ‘গুরুতর অনিয়ম’ বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ রয়েছে, মোহাম্মদ জাহেদুল হক এখনো স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের পরিচালক পদে আছেন। তার অবস্থানের কারণে ব্যাংক ব্যবস্থাপনা অনিয়মের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে দ্বিধায় রয়েছে।
চলতি বছরের ৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো অভিযোগে ছাইদুল হক ও নেছারুল হক বলেন, ২০১৭ সালের ১৯ অক্টোবর থেকে তাদের ভাড়ার অংশ থেকে বঞ্চিত করে আসছেন জাহেদুল হক। চুক্তিতে অন্য দাগ দেখিয়ে ব্যাংকের সঙ্গে প্রতারণাও করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা জাহেদুল হকের প্রভাব এতটাই প্রবল যে, গত ১৫ বছরে তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কেউ কথা বলেননি। তিনি সর্বশেষ বোয়ালখালী উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
গত বছরের ৫ জুলাই শেখ হাসিনা সরকার পতনের দিনে চট্টগ্রাম নগরের চিটাগং ক্লাবের সামনে তার গ্রেফতারের দাবিতে অবস্থান নেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় যুবশক্তি ও এনসিপির নেতা-কর্মীরা। তাদের অভিযোগ, জাহেদুল হকের বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনের একাধিক হত্যা মামলা রয়েছে। সেদিন তার ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান চলছিল ক্লাবে। পুলিশের আশ্বাসে আন্দোলনকারীরা সরে গেলেও পরে তিনি বিদেশে পালিয়ে যান। বর্তমানে দেশে ফিরে আবার প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

