বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদের পদত্যাগের ঘটনাটি সাংস্কৃতিক অঙ্গনে একটি নতুন আলোচনা শুরু করেছে। এর পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। শিল্পকলা একাডেমি থেকে ফারুকী টাকা চেয়েছিলেন, তবে কোনো রকম কাগজপত্র ছাড়াই। এই ধরনের অনৈতিক আবদারে রাজি না হওয়ায় সৈয়দ জামিল আহমেদ প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালকের পদ ছাড়েন। তবে ফারুকী এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন, এটি সত্য নয়। এ ঘটনা দেশের সাংস্কৃতিক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
গত শুক্রবার নাট্যোৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে সৈয়দ জামিল আহমেদ আচমকা পদত্যাগের ঘোষণা দেন। যা উপস্থিত সবাইকে হতবাক করে। তিনি মঞ্চে থাকা অবস্থায় শিল্পকলা একাডেমির সচিব মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেনের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। নিজের বক্তব্যে তিনি সরাসরি ফারুকীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। যেখানে বলা হয় যে, উপদেষ্টা শিল্পকলা একাডেমিতে ‘অযাচিত হস্তক্ষেপ’ করেছেন।
জামিল আহমেদ আরও জানান, ১০ থেকে ১৫ দিন আগে ফারুকী তার কাছে একটি চেক চেয়েছিলেন। তবে কোনো রকম চিঠিপত্র ছাড়াই। তিনি বলেন, “চিঠি ছাড়া টাকা দেওয়া সম্ভব নয়”। পরে ফারুকী তাকে বলেন, “আমি আপনাকে শ্রদ্ধা করেছি অনেক, আর করব না।”
এরপর সৈয়দ জামিল চারটি শর্তের ভিত্তিতে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। প্রথম শর্ত ছিল, শিল্পকলা একাডেমি মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ ছাড়া কাজ করতে পারবে। দ্বিতীয় শর্ত ছিল, একাডেমি একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে চলতে হবে। তৃতীয় শর্ত ছিল, মন্ত্রণালয় থেকে কোনো ‘ফোকাল পয়েন্ট’ থাকবে না এবং চতুর্থ শর্ত ছিল, শিল্পকলা একাডেমির জন্য ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া। জামিল আহমেদ বলেছিলেন, “শিল্পকলা একাডেমি আইন অনুযায়ী একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান কিন্তু মন্ত্রণালয় তা মানছে না।”
এদিকে ফারুকী এসব অভিযোগ নাকচ করে বলেছেন, “জামিল ভাইয়ের অনেক কথাই মিথ্যা। তার বক্তব্য পরিস্থিতির হতাশা থেকে এসেছে।” তিনি আরও বলেন, “সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করার জন্য যে ধরনের ধৈর্য এবং ব্যবস্থাপনা দক্ষতা লাগে। তা জামিল আহমেদ প্রদর্শন করতে পারেননি।”
শিল্পকলা একাডেমির পদত্যাগের পর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং ব্যক্তিত্বরা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কামাল বায়েজিদ বলেছেন, “এটি দুঃখজনক ঘটনা, তবে আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে আলোচনা হবে এবং সমাধান আসবে।” নাট্যকার মাসুম রেজা বলেন, “এখনও বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। তবে যেটি শিল্পকলা ও থিয়েটারের জন্য ভালো হবে সেটাকেই সমর্থন করব।”
অন্যদিকে, মোহাম্মদ আলী হায়দার নাট্যদল বটতলার ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর। তিনি মনে করেন, “যদি টাকা চাওয়ার ঘটনা সত্য হয়, তবে সংস্কৃতি উপদেষ্টার পদে থাকার কোনো যোগ্যতা নেই। এটি তদন্ত হওয়া উচিত।”
এই পরিস্থিতিতে, আজ রোববার শিল্পকলা একাডেমির সচিব এবং পরিচালকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন উপদেষ্টা ফারুকী ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব। চলমান কার্যক্রম নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আরও কিছু সময় লাগবে।
এদিকে, পদত্যাগপত্র এখনও মন্ত্রণালয়ে গৃহীত হয়নি এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।

