বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে ১৯১৭ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠনের পথ তৈরি হয়। এরপর ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনের জমি দখল করে জন্ম নেয় ইসরায়েল।
পশ্চিমা দেশের সমর্থনে দেশটি গত আট দশক ধরে ফিলিস্তিনিদের ওপর চালিয়ে আসছে দমন–পীড়ন। দখল করেছে গাজা। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে একের পর এক বোমা হামলায় ধ্বংস করেছে রাফাসহ বহু এলাকা।
এখনও মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়ে আছে ওইসব অঞ্চল। এই বর্বরতার কারণে ইসরায়েলকে এখনো স্বীকৃতি দেয়নি বাংলাদেশ। দেশটির সঙ্গে নেই কোনো কূটনৈতিক বা বাণিজ্যিক সম্পর্কও। তবুও গত দেড় দশকে বাংলাদেশ থেকে ইসরায়েলে পণ্য গেছে প্রায় ১৩ লাখ ডলারের। এই তথ্য দিয়েছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো—ইপিবি। তাদের হিসাব বলছে, রপ্তানিকৃত পণ্যের বড় অংশই ওষুধ। তালিকায় আছে তৈরি পোশাক ও আসবাবপত্রও।
তবে প্রশ্ন উঠেছে—সম্পর্ক না থাকলেও কীভাবে পণ্য যাচ্ছে ইসরায়েলে?
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানিয়েছেন, ইসরায়েলের কিছু ক্রেতা বাংলাদেশ থেকে পণ্য কেনেন ঠিকই, তবে সরাসরি নয়। তৃতীয় কোনো দেশের মাধ্যমে তারা পণ্য নিয়ে থাকেন। তিনি আরও বলেন, ইপিবির কাছ থেকে জানতে হবে, রপ্তানির হিসাব ইসরায়েলের নামে কীভাবে দেখানো হয়েছে।
এ নিয়ে কথা বলেছেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, অনেক ক্রেতা বাংলাদেশ থেকে পণ্য কেনেন বিভিন্ন গন্তব্যের জন্য।
ইসরায়েল তাদের লক্ষ্য হলে, এখান থেকেই তা ঠিক করে রাখা হয়। ইপিবির হিসাব অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি হয় ইসরায়েলে। রপ্তানির পরিমাণ ছিল সোয়া ছয় লাখ ডলার। পণ্যগুলোর মধ্যে ছিল তৈরি পোশাক এবং যক্ষা, ম্যালেরিয়া, কুষ্ঠ রোগের ওষুধ ও ভ্যাকসিন। তবে বাংলাদেশ ইসরায়েল থেকে কোনো পণ্য আমদানি করেছে কি না, সে তথ্য ইপিবির কাছে নেই।
জাতিসংঘের বাণিজ্য বিষয়ক সংস্থা ইউএন কম ট্রেড বলছে, গত দেড় দশকে বাংলাদেশ ইসরায়েল থেকে আমদানি করেছে প্রায় ৩৮ লাখ ডলারের পণ্য।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই দেশের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। তারপরও পণ্য যাচ্ছে। এটা নিয়ে এখনই স্পষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এই লেনদেনগুলো সরকার কীভাবে দেখবে, তা নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ইপিবি এবং রপ্তানিকারকদের মধ্যে আলোচনা হওয়া উচিত।
এদিকে, একই সময়ে ফিলিস্তিনে রপ্তানি হয়েছে প্রায় সাড়ে চার লাখ ডলারের পণ্য। এর বড় অংশই ছিল তৈরি পোশাক। ইসরায়েলকে স্বীকৃতি না দিলেও সেখানকার বাজারে পণ্য যাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে।
এটা কি ভুল, নাকি কৌশলগত সিদ্ধান্ত—সে প্রশ্ন এখন সামনে আসছে।

