সরকার সরকারি-বেসরকারি সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক ছুটি কমানোর পরিকল্পনা করছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস ২০২৫ উপলক্ষে রোববার সকালে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ উদ্যোগের কথা জানান।
তিনি বলেন, “আমাদের দেখতে হবে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সঙ্গে কতটা সময় ব্যয় হচ্ছে। বর্তমানে স্কুলগুলো বছরে মাত্র ১৮০ দিন খোলা থাকে। অপ্রয়োজনীয় ছুটি কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সঙ্গে নিয়ে কাজ করা হবে। পাশাপাশি শিক্ষকদের শিক্ষাবহির্ভূত কাজে সম্পৃক্ত না করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”
প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদ বিষয়ে বিধান রঞ্জন জানান, দেশে প্রায় ৩২ হাজার প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক নেই। দীর্ঘদিন মামলার কারণে পদোন্নতি আটকে থাকার কারণে এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। মন্ত্রণালয় প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদ পূরণের জন্য পদোন্নতির মাধ্যমে ৮০ শতাংশ এবং সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে ২০ শতাংশ পদ পূরণের পরিকল্পনা করছে। একই সঙ্গে শিক্ষকদের বদলি শতভাগ অনলাইনে করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে সাত বছর ও তার বেশি বয়সী জনগোষ্ঠীর মধ্যে সাক্ষরতার হার ৭৭.৯ শতাংশ। অর্থাৎ, এখনও প্রায় ২২.১ শতাংশ জনগোষ্ঠী নিরক্ষর। মূলত বিদ্যালয় বহির্ভূত শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ এদের মধ্যে রয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা লিখিত বক্তব্যে বলেন, “জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সাক্ষরতা অপরিহার্য। শুধু অক্ষরজ্ঞানই নয়, মাতৃভাষায় পড়া-লেখা, গণনা, মৌখিক ও লিখিত যোগাযোগ ও ডিজিটাল দক্ষতা অর্জনও সাক্ষরতার অংশ।” তিনি আরও বলেন, মৌলিক শিক্ষা, দক্ষতাভিত্তিক সাক্ষরতা, জীবনব্যাপী শিক্ষা ও বাজারভিত্তিক প্রশিক্ষণ মানবসম্পদ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ।
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা আইন-২০১৪ অনুযায়ী, ১০–১৪ বছর বয়সী বিদ্যালয় বহির্ভূত শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা এবং ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সী নিরক্ষরদের সাক্ষরতা ও জীবনব্যাপী শিক্ষা প্রদান অব্যাহত আছে। ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬৩ জেলায় ২৫ হাজার ৮১৫টি শিখনকেন্দ্রে ৮ লাখ ২৫ হাজার ৩৬ জন শিশু অংশ নিয়েছিলেন। এর মধ্যে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৪৯৬ জন মূল ধারায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।
মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্পের মাধ্যমে ৬৪ জেলার ২৪৮টি উপজেলায় ৪৪ লাখ ৬০ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠী সাক্ষরজ্ঞান অর্জন করেছে। এছাড়া কক্সবাজারে ২০২৫ সালের জুনে শেষ হওয়া পাইলট প্রকল্পে ৬ হাজার ৮২৫ কিশোর-কিশোরীকে সাক্ষরতার সঙ্গে ১৩টি পেশায় কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই এই কর্মসূচি আরও ১৬ জেলায় সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।