ভারতের রাজস্থানের পাহাড়ি গ্রাম পিপলোদিতে গত ২৫ জুলাই ঘটে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। গ্রামের স্কুল ভবনের ছাদ ধসে পড়ে সাত শিশু নিহত ও ২১ জন আহত হন। পুরো স্কুল ভবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই পরিস্থিতিতে গ্রামের ৬০ বছর বয়সী কৃষক মোর সিং অপ্রত্যাশিতভাবে সামনে আসেন—নিজের দুই কক্ষের বাড়ি স্কুলের জন্য দান করে দেন।
মোর সিং কখনো স্কুলে যাননি। তবু তিনি শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিত করতে নিজের স্বাচ্ছন্দ্য ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন। তার বাড়িতে এখন ৫০–৬০ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। মোর সিং বলেন, “যদি আমি দ্রুত সিদ্ধান্ত না নিতাম, অনেক শিশু স্কুলে যেত না। পাশের স্কুল পর্যন্ত যেতে দুই কিলোমিটার পাহাড়ি পথ পেরোতে হতো, যা ছোটদের জন্য সম্ভব হতো না।”
এই উদারতার জন্য রাজ্য সরকার মোর সিংকে ২ লাখ রুপি (প্রায় ২,২৬৬ ডলার) আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। তার পরিবারসহ দুই বছরের নাতি—একটি বাঁশ ও টারপোলিনের অস্থায়ী কুঁড়েঘরে চলে যান।
রাজ্যজুড়ে চলমান ভারী বর্ষণে স্কুল ভবন ধসে যাওয়া ঘটনা শিক্ষা অবকাঠামোর দুর্বলতাকে সামনে এনেছে। সরকারি জরিপে দেখা গেছে, রাজ্যে ৫,৬০০টির বেশি স্কুল ক্ষয়প্রাপ্ত অবস্থায় রয়েছে।
মোর সিংয়ের এই ত্যাগের ফলে পিপলোদি গ্রামকে “মডেল ভিলেজ” ঘোষণা করা হয়েছে। এতে নতুন স্কুল, খেলার মাঠ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও অন্যান্য সুবিধার জন্য আরও তহবিল গঠন করা হবে। স্থানীয় কর্মকর্তা জানান, নতুন স্কুল নির্মাণে অন্তত দেড় বছর সময় লাগবে।
গ্রামের বাসিন্দারা মোর সিংয়ের এই কাজকে নায়কীয় উদাহরণ হিসেবে দেখছেন। রাম দয়ালের মেয়ে, যিনি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিলেন, এখন মোর সিংয়ের বাড়িতে স্কুলে পড়ছেন। তিনি বলেন, “তিনি পুরো গ্রামের জন্য একজন নায়ক।” আর এক বাসিন্দা, রাম কুমার বলেন, “আমরা সবাই তার এই উদারতার সত্যিই প্রশংসা করি।”
মোর সিংয়ের ত্যাগ পুরো গ্রামের শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিত করেছে, এবং তার উদাহরণ বহু মানুষকে অনুপ্রাণিত করছে।