ঢাকার কিছু ব্যস্ত মোড়ে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সংকেত। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি দেখাচ্ছে, যানজট নিয়ন্ত্রণে এই পদক্ষেপ এখনো কাঙ্ক্ষিত ফল দিচ্ছে না। যানবাহনের চাপের কারণে ট্রাফিক পুলিশ এখনও হাতের ইশারাতেই গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে।
দায়িত্বশীলরা বলেন, এই সংকেতের মূল উদ্দেশ্য কেবল যানজট কমানো নয়। বরং মানুষকে হারিয়ে যাওয়া ট্রাফিক পদ্ধতির সঙ্গে পুনরায় অভ্যস্ত করা। ধীরে ধীরে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ফিরিয়ে আনা হবে।
গত ৩১ আগস্ট আবদুল্লাহপুর থেকে হাইকোর্ট পর্যন্ত সাতটি ইন্টারসেকশনে পরীক্ষামূলকভাবে এই পদ্ধতি চালু করা হয়। দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি লাল-সবুজ-হলুদ সংকেত বাতি বসানো হয়েছে ১৮ কোটি টাকায়। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ, ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কোঅর্ডিনেশন অথরিটি (ডিটিসিএ) ও দুই সিটি করপোরেশনের যৌথ উদ্যোগে এই কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পরীক্ষামূলক সফলতার পরে আরও ১৫টি মোড়ে এই ব্যবস্থা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে।
সপ্তাহখানেকের পরীক্ষামূলক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, বাংলামটর, সোনারগাঁও হোটেল (কারওয়ান বাজার), ফার্মগেট, বিজয় সরণি, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও জাহাঙ্গীর গেটে যানবাহন স্বয়ংক্রিয় সংকেত মেনে চলছে না। সকালে অফিসমুখী সময়ে গাড়ির চাপ বেড়ে গেলে ট্রাফিক পুলিশ বাধ্য হয়ে হাতের ইশারায় নিয়ন্ত্রণ করছেন।
কারওয়ান বাজারের দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক কর্মকর্তা মো. মাইনুল বলেন, “একদিক থেকে যানবাহনের চাপ বেশি হলে সংকেত দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। তখন ম্যানুয়ালি বাতির সময় বাড়িয়ে বা কমিয়ে চলাচল নিয়ন্ত্রণ করি।”
ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার জানান, কিছু কারিগরি ত্রুটি ধরা পড়েছে, যা বুয়েটের সংশ্লিষ্টরা সমাধান করছেন। তবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল পথচারীদের নিয়ন্ত্রণ করা। তারা সিগন্যাল মেনে চলছে না, তাই চালক এবং পথচারী উভয়কে সচেতন করতে হবে।
বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান বলেন, “ঢাকায় প্রতিটি মোড়েই এক সময় এক দিক থেকে যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়। এজন্য স্বয়ংক্রিয় ও ম্যানুয়াল—দুটি পদ্ধতিই রাখা হয়েছে। এটি কোনো জাদুকরী সমাধান নয়। মানুষকে ধীরে ধীরে এতে অভ্যস্ত হতে হবে।”