ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী (২৬) মানসিক হয়রানির শিকার হয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন না করেই প্রতিষ্ঠানটি ত্যাগ করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, অনার্সের সময় কিছু সহপাঠীর মাধ্যমে নিয়মিত বুলিংয়ের শিকার হয়েছেন। যদিও তিনি বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়েছিলেন, কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
তরুণী বলেন, “ঘটনাগুলো আমাকে এত তাড়া করত, আমি কাঁদতাম। ক্লাসে যেতে ইচ্ছা হত না। যৌন হয়রানির বিষয়গুলো সম্পর্কে অনেকেই কথা বলেন, কিন্তু বুলিং-গসিপের মতো মানসিক হয়রানির ভয়াবহতা ততটা গুরুত্ব পায় না।” অনার্স শেষে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স না করে চাকরিতে যোগ দেন। প্রায় এক বছর চাকরি করার পর সম্প্রতি তিনি মাস্টার্স করার জন্য বিদেশে চলে যান।
তিনি জানান, সহপাঠীদের বুলিং-গসিপের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন এবং মনোবিদের কাছে ছয় থেকে সাতটি কাউন্সেলিং সেশন নিতে হয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্ব দেননি। তরুণী বলেন, “এটা সেখানে শাস্তিযোগ্য অপরাধ নয়। অথচ বুলিদের কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করতে পারিনি।”
তরুণীর ভাষ্য, কিছু সহপাঠী তার ওপর নারীবিদ্বেষী মন্তব্য করতেন, বডি শেমিং ও স্লাট শেমিং করতেন। এক ছাত্র এমন আচরণ করেছিলেন যা স্পর্শকাতর ছিল, পরে ‘সরি’ বলে মীমাংসা করেছিলেন। বছর দুয়েক পরে তিনি একটি ‘নিরীহ’ ছাত্রের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেন, কিন্তু সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর বুলিং আরও বেড়ে যায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ও তৎকালীন স্টুডেন্ট কাউন্সেলর বলেন, অভিযোগ প্রমাণ করা কঠিন ছিল। মেয়েটিকে মানসিকভাবে শক্ত থাকার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
গবেষণা বলছে, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বুলিং ঘটে। ২০২২ সালের একটি জরিপে দেখা গেছে, সহপাঠীদের তুচ্ছতাচ্ছিলার কারণে প্রায় ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী হীনম্মন্যতায় ভোগেন। বডি শেমিংয়ের শিকার তরুণীর সংখ্যা ২২ শতাংশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল চৌধুরী বলেন, যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা থাকলেও বুলিংয়ের ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয় না।
তিনি উল্লেখ করেন, বুলিংয়ের শিকার শিক্ষার্থী মানসিকভাবে দুর্বল, ক্লাসে যেতে ভয় পায়, হীনম্মন্যতায় ভোগে বা অপরাধবোধে থাকে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত এবং ভুক্তভোগীকে কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে সহায়তা দেওয়া উচিত।
তিনি আরও জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে এবং ছাত্র–শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) তৃতীয় তলায় বিনা মূল্যে মানসিক সহায়তা দেওয়া হয়। তবে অনেক শিক্ষার্থী এই সেবার খবর জানেন না।