ঢাকার হাতিরঝিল ঘিরে চলাচলকারী সার্কুলার বাসে যাত্রীদের ভ্রমণ সহজ ও নগদহীন করতে চালু করা হয়েছিল র্যাপিড পাস সেবা। কিন্তু প্রত্যাশিত ফল আসছে না। কার্ড প্রসেসিংয়ে ধীরগতি, বারবার ত্রুটি এবং শেষ পর্যন্ত ম্যানুয়াল টিকিটের ওপর নির্ভরশীলতা প্রকল্পটিকে নগদহীন পরিবহন ব্যবস্থার লক্ষ্য থেকে অনেক দূরে সরিয়ে দিয়েছে।
তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, সফটওয়্যার ও সেবার উন্নয়ন চলছে, যা চালু হলে সমস্যাগুলো অনেকটা কেটে যাবে।
হাতিরঝিলে নিয়মিত চলাচলকারী সাখাওয়াত বলেন, কার্ডে বারবার “Sorry, try again” বার্তা আসে, ফলে ভিড় বাড়ে। শেষমেশ তাকে টিকিট কাউন্টার থেকে ম্যানুয়াল টিকিট কিনতে হয়।
আরেক যাত্রী জান্নাত জানান, “এখানে কার্ড ট্যাপ করতে অনেক সময় লাগে। মেট্রোতে মিলিসেকেন্ডে কাজ করে, কিন্তু হাতিরঝিলে কয়েক সেকেন্ড লাগে।”
ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) এক কর্মকর্তা জানান, হাতিরঝিলে একটি ট্যাপ সম্পন্ন হতে ১.২২–১.৩০ সেকেন্ড সময় লাগে, যেখানে মেট্রোতে হয় ন্যানোসেকেন্ডে। এই ধীরগতি যাত্রীদের হতাশ করছে।
ডিটিসিএ আশা নিয়ে প্রকল্পটি শুরু করলেও সাড়া পাচ্ছে না। হাতিরঝিলে প্রতিদিন প্রায় ৪ হাজার ২০০ যাত্রী বাসে চড়েন। এর মধ্যে এখনো ৭৬ শতাংশ ম্যানুয়াল টিকিট ব্যবহার করছেন, মাত্র ২৪ শতাংশ র্যাপিড পাস ব্যবহার করছেন—যদিও আগে এ হার ছিল ১০–১২ শতাংশ।
অন্য এক কর্মকর্তা জানান, দেশের বেশিরভাগ বাস র্যাপিড পাসের যন্ত্রপাতি ব্যবহারের জন্য উপযোগী নয়। অনেক ডিভাইস উল্লম্বভাবে বসানো বা সংকীর্ণ জায়গায় আটকে রাখা হয়, যা ব্যবহার কঠিন করে তোলে। যাত্রীরা অনেক সময় ওঠার সময় ট্যাপ করেন কিন্তু নামার সময় করেন না, ফলে কার্ড ব্লক হয়ে যায় এবং মেরামতের জন্য পাঠাতে হয়।
তবে ডিটিসিএ নতুন সফটওয়্যার সংস্করণ তৈরি করেছে, যা মেট্রোর চেয়েও দ্রুত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি আগামী সপ্তাহে চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
ডিটিসিএর তথ্য অনুযায়ী, হাতিরঝিল সার্কুলার বাসে দৈনিক ৯০০–১,০০০ যাত্রী র্যাপিড পাস ব্যবহার করেন। গত ১৭–২৩ আগস্ট সপ্তাহে প্রায় ১০ হাজার পাস ব্যবহার হয়েছে, আর প্রতিদিন ২০–৩০টি নতুন পাস বিক্রি হয়েছে। তুলনায় মেট্রোতে প্রতিদিন ১,২০০–১,৬০০ নতুন কার্ড বিক্রি হয় এবং দৈনিক ৩.৫–৪ লাখ যাত্রীর মধ্যে ১.১ লাখই র্যাপিড পাস ব্যবহার করেন, যা মোট যাত্রীর ২৭–৩১ শতাংশ।
হাতিরঝিল বাসে ভাড়া নির্ধারণ ও স্টেশন ঘোষণার জন্য জিপিএস প্রযুক্তি ব্যবহার হয়, যা ভাড়ার বিভ্রান্তি দূর করে। কিন্তু বাসমালিকেরা ৫০–৬০ হাজার টাকা ব্যয় করে ডিভাইস বসাতে আগ্রহী নন, কারণ নগদ লেনদেন থাকলে আয়ের কিছু অংশ গোপন রাখা যায়। নগদহীন ব্যবস্থায় তা সম্ভব নয়।
ডিটিসিএ জানিয়েছে, রিচার্জের জন্য মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ও ভিসা/মাস্টারকার্ড ব্যবহারের সুবিধা প্রায় শেষ পর্যায়ে। এই সিস্টেম পরে গুলশান চাকা, ঢাকা চাকা ও বিআরটিসি বাসে চালু করার পরিকল্পনাও রয়েছে।
ডিটিসিএ পরিচালক নীলিমা আখতার বলেন, “এটি কেবল শুরু হয়েছে। মানুষকে মানিয়ে নিতে সময় লাগবে। আমরা আশা করি, অন্য পরিবহন খাতও এ মডেল অনুসরণ করবে। প্রযুক্তি নিয়মিত হালনাগাদ হবে এবং সেক্টর ক্রমেই উন্নত হবে।”