অন্তর্বর্তী সরকারের ১৬ মাসের মধ্যে প্রায় ছয় মাসই দেশের বিভিন্ন স্তরের শিক্ষকরা পাঠদান বন্ধ রেখে আন্দোলন করেছেন। বেতন বৃদ্ধি, গ্রেড উন্নয়ন, এমপিওভুক্তি, জাতীয়করণসহ নানা দাবিতে এই আন্দোলন চলতে থাকায় প্রায় আড়াই কোটি শিক্ষার্থী অভূতপূর্ব শিখন ঘাটতিতে পড়েছে।
শিক্ষাবিদরা বলছেন—করোনাকালীন ক্ষতি এখনো কাটেনি, তার ওপর বারবার ক্লাস বন্ধ হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মনোযোগ নষ্ট হচ্ছে এবং তৈরি হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি শিক্ষাগত সংকট।
দশম গ্রেডসহ তিন দফা দাবিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা ইতিমধ্যে ৩৫ দিন পাঠদান বন্ধ রেখেছেন।
২৭ নভেম্বর থেকে তাদের নতুন লাগাতার কর্মবিরতি চলছে। দাবি পূরণ না হলে বার্ষিক পরীক্ষা বর্জন ও স্কুল শাটডাউনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন।
একদিন পাঠদান বন্ধ করেই প্রধান শিক্ষকদের দাবি পূরণ হওয়ায় সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ বেড়েছে। দেশের ৬৫ হাজারের বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১ কোটিরও বেশি শিশু পড়াশোনা করে এবং শিক্ষক সংখ্যা ৩ লাখ ৮৪ হাজারের বেশি।
দশম গ্রেড থেকে নবম গ্রেডে বেতন উন্নীত করা, মোট চারটি দাবির জন্য সরকারি মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষকরা সম্প্রতি দুই দিনের বিক্ষোভ ও পাঠদান বন্ধ করেছেন।
দাবি পূরণ না হলে ১ ডিসেম্বর থেকে দেশের ৭২১ সরকারি স্কুলে পূর্ণ শাটডাউন করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৫ লাখ ৭০ হাজারের বেশি।
বাড়ি ভাড়া ভাতা ২০ শতাংশে উন্নীত করার দাবিতে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা ১৪ দিন পাঠদান বন্ধ করেন।
দীর্ঘ আলাপ–আলোচনার পর সরকার ভাতা ১৫ শতাংশে উন্নীত করেছে—যা দুই ধাপে কার্যকর হবে। এ সিদ্ধান্তে খুশি হয়ে তারা ক্লাসে ফিরলেও আন্দোলনকালে বহু শিক্ষক পুলিশি হামলায় আহত হয়ে এখনো শ্রেণিকক্ষে ফিরে যেতে পারেননি।
মাধ্যমিক স্তরে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ৮৭ লাখের বেশি, আর উচ্চমাধ্যমিক স্তরে ৮ লাখের বেশি।
স্বীকৃতিপ্রাপ্ত কিন্তু এমপিও সুবিধাবঞ্চিত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা ৪৪ দিন পাঠদান বন্ধ করে আন্দোলন করছেন।
দেশে মোট ৯২ হাজার ৩৯২টি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে, যার মধ্যে ৭৩.৬ শতাংশই এখনো এমপিও সুবিধার বাইরে। এই অসমতা দূরীকরণের দাবিতেই তাদের কর্মসূচি অব্যাহত।
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার জাতীয়করণ ও আলাদা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার দাবিতে শিক্ষকরা টানা ৪৭ দিন অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন।
সরকার সম্প্রতি ১ হাজার ৫১৯টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির অনুমোদন দিয়েছে, বাকি প্রতিষ্ঠানও ধাপে ধাপে বিবেচনায় আসবে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। ইবতেদায়ি মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৮ লাখ ৮০ হাজারের বেশি।
দেশের সব প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের স্বীকৃতি ও এমপিওভুক্তির দাবিতে শিক্ষক–কর্মচারীরা ৩৪ দিন পাঠদান বন্ধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
২০১৯ সালে প্রজ্ঞাপন জারির পরও ১ হাজার ৭৭২টি প্রতিষ্ঠানের ফাইল প্রক্রিয়ায় আটকে থাকায় তাদের হতাশা আরও বেড়েছে।
শিক্ষাবিদরা মনে করেন, শিক্ষকদের অধিকাংশ দাবিই যৌক্তিক, কিন্তু সমাধানহীন আন্দোলন দীর্ঘমেয়াদি শিক্ষা সংকট তৈরি করবে।
করোনা, অভ্যুত্থান ও বারবার ক্লাস বন্ধে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ কমছে, শিখন ঘাটতি বাড়ছে। বিশেষত যেসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা টানা কর্মবিরতিতে ছিলেন, সেসব শিক্ষার্থী বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

