গত ১৮ মাসে দেশের মোবাইল অপারেটররা ইন্টারনেট ডাটা প্যাকের দাম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করেছে। যেখানে সরকার সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য ইন্টারনেট সস্তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেখানে মোবাইল কোম্পানিগুলো উল্টো দিকেই গিয়েছে। বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদি প্যাকেজের দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। এই তালিকায় গ্রামীণফোন শীর্ষে রয়েছে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সাম্প্রতিক মূল্য পর্যালোচনা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের জুন থেকে ২০২৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক ও টেলিটক—চারটি প্রধান অপারেটরই বিভিন্ন ডাটা প্যাকের দাম ১০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে।
মূল্য বৃদ্ধি কেমন হয়েছে:
-
গ্রামীণফোন: ১ জিবি ১ দিনের প্যাকেজের দাম ৩৮ থেকে ৪৬ টাকা, ৫ জিবি ৭ দিনের প্যাকেজ ৯৯ থেকে ১৪৮ টাকা, এবং ৩০ জিবি ৩০ দিনের প্যাকেজ ৩৯৯ থেকে ৫৯৯ টাকায় পৌঁছেছে।
-
রবি: ১ জিবি ১ দিনের প্যাকেজ ৪১ থেকে ৪৯ টাকা, ৫ জিবি ৭ দিনের প্যাকেজ ১৪৮ থেকে ১৯৮ টাকা, এবং ৩০ দিনের ২০ জিবি প্যাকেজ ৪৯৮ থেকে ৫৯৯ টাকা।
-
বাংলালিংক: ১ জিবি ১ দিনের প্যাকেজ ৪৯ থেকে ৫৮ টাকা, ৫ জিবি ৭ দিনের প্যাকেজ ১০৮ থেকে ১৪৯ টাকা, ৩০ দিনের ২০ জিবি প্যাকেজ ৩৯৯ থেকে ৪৯৯ টাকা।
-
টেলিটক: ১ জিবি ১ দিনের প্যাকেজ ১৬ থেকে ২২ টাকা, ৫ জিবি ৭ দিনের প্যাকেজ ৫৫ থেকে ৬৭ টাকা, ৩০ দিনের ৩০ জিবি প্যাকেজ ২৮৪ থেকে ৩৫৯ টাকা।
এ ধরনের দাম বৃদ্ধির প্রভাব সরাসরি গ্রাহকের ওপর পড়েছে। মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারকারীদের জন্য মাসে অতিরিক্ত ৭৫ থেকে ২০০ টাকা খরচ বেড়েছে। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের ব্যবহারকারীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। অনেক ব্যবহারকারী এখন ডাটা কম ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন, যার ফলে অনলাইন শিক্ষা, ফ্রিল্যান্সিং, ব্যাংকিং, স্বাস্থ্যসেবা ও ডিজিটাল বিনোদনে প্রভাব পড়ছে।
প্যাকেজের মেয়াদ ছোট হওয়ায় বারবার রিচার্জের সমস্যা দেখা দিয়েছে। গ্রাহকেরা অভিযোগ করছেন, এখন আগের তুলনায় একই টাকায় অর্ধেক ডাটাও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। বাজারে কার্যকর প্রতিযোগিতা না থাকার কারণে তারা উচ্চমূল্যের প্যাকেজ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, “মূল্যবৃদ্ধি বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য ইন্টারনেটের অ্যাক্সেস সীমিত করছে। অপারেটররা সরকারের সুবিধা পেয়েও দাম বাড়াচ্ছে, যা গ্রাহকপ্রতি প্রতারণার শামিল।” তিনি দাবি করেন, সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ইন্টারনেটের দাম কমানো হয়নি এবং বিটিআরসিকে জবাবদিহির আওতায় আনা প্রয়োজন।
সরকার এপ্রিলে ঘোষণা দিয়েছিল, আইটিসি ও আইআইজি পর্যায়ে ১০ শতাংশ এবং এনটিটিএন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ হারে ইন্টারনেটের দাম কমানো হবে। প্রধান উপদেষ্টা (তথ্যপ্রযুক্তি) ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ইতিমধ্যে অপারেটরদের ডিডব্লিউডিএম এবং ডার্ক ফাইবার সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ফলে মোবাইল অপারেটরদের দাম কমানো ছাড়া অন্য কোনো যৌক্তিক কারণ নেই।
তিনি আরও বলেন, “যেসব ট্রান্সমিশন সুবিধা আমরা দিয়েছি, তা তারা ব্যবহার করছে। এখন যদি দাম না কমে, তাদের পুরোনো সুবিধা এবং বকেয়া বিষয়গুলো পুনর্বিবেচনা করা হবে।”
অপারেটরদের যুক্তি হলো, সামগ্রিক খরচ বৃদ্ধি এবং রাজস্ব কমে যাওয়ায় দাম কমানো কঠিন। বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অফিসার তাইমুর রহমান জানান, “দাম বৃদ্ধি শুধু একটি প্যাকেজ দেখে বোঝা যাবে না। সরকার যদি খরচের কিছু অংশ কমায়, আমরা তৎক্ষণাৎ দাম কমাতে পারি।”

