মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চলমান আন্দোলন ও বিভিন্ন স্থানে বার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তকে সরকারি আচরণবিধি লঙ্ঘন বলে আখ্যায়িত করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, পরীক্ষা বন্ধ রাখলে সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। সোমবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে (বাসস) দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সি আর আবরার বলেন, আন্দোলনের নামে অনেক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক যা করছেন, তা সরাসরি সরকারি আচরণবিধি লঙ্ঘন। সরকার এ বিষয়ে খুবই কঠোর অবস্থানে আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সরকারি আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য আপনাদের তৈরি থাকতে হবে। সরকার একেবারে দৃঢ়ভাবে তার অবস্থান জানিয়ে দিয়েছে।’
উপদেষ্টা জানান, দেশজুড়ে কোথাও পরীক্ষা হয়েছে, কোথাও হয়নি—এ ধরনের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ অনভিপ্রেত। নবম গ্রেডে উত্তীর্ণ হওয়ার যে দাবি শিক্ষকরা তুলেছেন, তাকে তিনি ‘অন্যায্য ও অন্যায়’ বলে উল্লেখ করেন। তার ব্যাখ্যা, শিক্ষকরা যখন চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন, তখন তাঁরা জানতেন দশম গ্রেডেই তাদের অবস্থান থাকবে। নবম গ্রেডের দাবি তাঁদের চাকরির শর্তে ছিল না।
তিনি আরো বলেন, নবম গ্রেড মূলত বিসিএস অ্যাডমিন ক্যাডারের জন্য সংরক্ষিত। কাজেই এককভাবে শিক্ষকদের দাবি মেনে নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এ বিষয়টি আন্তমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের পর্যায়ের এবং যেকোনো ব্যক্তি ইচ্ছেমতো এই গ্রেডে যেতে পারেন না।
চলমান আন্দোলনের সময়সূচি নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘তাঁরা দাবি তুলেছেন এমন সময়ে, যখন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলছে বা চলছে টেস্ট পরীক্ষা। তাঁরা যে হাতিয়ার ব্যবহার করছেন, সেটা শিক্ষার্থীদের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা—যা একজন শিক্ষক হিসেবে চরম অনৈতিক কাজ।’
আবরার বলেন, সরকার শিক্ষকদের অযৌক্তিক দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। তিনি শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা আগামীকাল থেকে পরীক্ষা নেবেন। অন্যথায় সরকারি কর্মচারী হিসেবে বিধি লঙ্ঘনের দায়ে যে শাস্তি রয়েছে, সেগুলোর জন্য আপনাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।’
তিনি জানান, সোমবার সন্ধ্যায় সব জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা হয়েছে। জেলা প্রশাসকেরা জানিয়েছেন, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিতে আগ্রহী হলেও একটি অংশের শিক্ষক পরীক্ষা নিচ্ছেন না। উপদেষ্টা স্পষ্ট নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘শিক্ষকেরা আগামীকাল তাঁদের স্কুলে পরীক্ষা নেবেন। না নিলে তাঁরা শাস্তির মুখোমুখি হবেন।’
তিনি আরো বলেন, পরীক্ষায় কোনো রকম আপস হবে না। শিক্ষার্থীদের চাপ কমাতে এবং শিক্ষাব্যবস্থার স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে পরীক্ষা সময়মতো নেওয়া হবে।

