ভোরের আলো ফোটার আগেই দেশের গ্রামাঞ্চলে কৃষকেরা জমিতে সক্রিয় হয়ে পড়েন। কেউ কোদাল ধরে, কেউ লাঙল চালান, আবার কেউ বীজ ছিটান বা সেচ দেন। তাদের পরিশ্রমের আড়ালে থাকে জীবনের গভীর অনিশ্চয়তা। ফসল উৎপাদনের ঝুঁকির পাশাপাশি অসুখ, দুর্ঘটনা কিংবা অকালমৃত্যুর সম্ভাবনা কৃষক ও তাদের পরিবারের উপর চাপ সৃষ্টি করে।
এই ঝুঁকি কমাতে এবং কৃষকের পাশে দাঁড়াতে দেশের শীর্ষস্থানীয় অ্যাগ্রি-টেক প্রতিষ্ঠান ‘আই-ফার্মার’ ২০২৩ সালে চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড ও গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সঙ্গে অংশীদারিত্বে বিশেষ বীমা কাঠামো চালু করেছে। এতে দুটি প্রধান সুবিধা রয়েছে—ঋণ সুরক্ষা বীমা এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা বীমা।
ঋণের বোঝা থেকে মুক্তি-
ঋণ সুরক্ষা বীমার আওতায় কৃষক যদি হঠাৎ মৃত্যুবরণ করেন বা স্থায়ীভাবে অক্ষম হয়ে পড়েন, তবে তাদের পরিবারের ওপর ঋণের বোঝা পড়ে না। বীমার মাধ্যমে অবশিষ্ট ঋণ পরিশোধ করা হয় এবং জরুরি আর্থিক সহায়তাও প্রদান করা হয়। নওগাঁ সদরের মোশেরপুর এলাকার মোছা. গোলাপী বেগমের উদাহরণ এ সুবিধার কার্যকারিতা প্রমাণ করে। পোল্ট্রি প্রকল্পের জন্য ১০ হাজার টাকা ঋণ নেওয়া অবস্থায় ৪ অক্টোবর হঠাৎ স্ট্রোক করে তাঁর মৃত্যু হয়। আই-ফার্মার পুরো ঋণ মওকুফ করে এবং দাফন-কাফনের জন্য আরও ১০ হাজার টাকা প্রদান করে।
চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন-
স্বাস্থ্য সুরক্ষা বীমার আওতায় একজন কৃষক অসুস্থ হলে হাসপাতালের খরচ, চিকিৎসক ফি, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং অন্যান্য চিকিৎসাসহ ব্যয় বহন করা হয়। বগুড়ার শাহজাহানপুর উপজেলার চেংগাপাচপুকুরিয়া এলাকার আবু হানিফ জানান, ধানের ওপর নেওয়া ৫০ হাজার টাকার ঋণ সহ স্বাস্থ্য বীমা সুবিধা তার পরিবারকে বিপদে পড়তে দিচ্ছে না।
সহজ প্রক্রিয়া ও ব্যাপক সাড়া-
শুরু থেকেই এই উদ্যোগে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া মিলেছে। পনেরো হাজারের বেশি কৃষক বীমার আওতায় এসেছে। ইতোমধ্যে আটাশটি দাবি নিষ্পত্তি হয়েছে। আতাইল গ্রামের কৃষক আল-আমিন বলেন, অন্যান্য সমিতিতে যেমন সঞ্চয় বাধ্যতামূলক, সেখানে আই-ফার্মারে শুধু ফি দিয়ে ঋণ নেওয়া যায়, আর স্বাস্থ্য বীমা সুবিধাও রয়েছে।
আই-ফার্মারের হেড অফ নিউ বিজনেস অপারচুনিটিজ মোহাম্মদ ইখতিয়ার সোবহান বলেন, “কৃষকদের মধ্যে বীমা নিয়ে নেতিবাচক ধারণা কাটিয়ে ওঠার জন্য আমরা সহযোগী বীমা কোম্পানির সঙ্গে কাজ করছি। সুবিধা দাবি করার জটিলতা অনেকটাই দূর হয়েছে।”
আই-ফার্মারের দ্বৈত বীমা কাঠামো কৃষকের জীবন ও জীবিকার অনিশ্চয়তা কমিয়ে আত্মবিশ্বাস ও স্থিতিশীলতা প্রদান করছে। প্রযুক্তির সহায়তায় এই উদ্যোগ গ্রামীণ অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ও অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করছে।

