দীর্ঘদিনের জমির নামজারি জট, দালালচক্রের দুর্নীতি এবং ঘুষের কারণে ভূমি মালিকরা দীর্ঘ সময় সমস্যার সম্মুখীন থাকলেও- ভূমি মন্ত্রণালয় এবার তিনটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে। নতুন ব্যবস্থায় নামজারি হবে দ্রুত, সহজ এবং সম্পূর্ণ স্বচ্ছ; ফলে অনিয়ম ও ঘুষের সুযোগ কার্যত শূন্যে নামানো সম্ভব হবে।
মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই পরিবর্তনের লক্ষ্য হলো ভূমি সেবায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা।
প্রথম পদক্ষেপ: নামজারি আবেদন সম্পূর্ণ নথিভিত্তিক হবে। জমির রেজিস্ট্রিকৃত দলিল, পূর্ব মালিকের যাচাইযোগ্য কাগজপত্র, আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবি জমা বাধ্যতামূলক। অনুপস্থিত নথি থাকলে আবেদন বাতিল হবে, তবে অসম্পূর্ণ নথি সংশোধনের সুযোগ থাকছে।
দ্বিতীয় পদক্ষেপ: ওয়ারিশদের মধ্যে সম্পত্তি বণ্টনে মতবিরোধ থাকলে এককভাবে নামজারি করা যাবে না। বণ্টন দলিল ছাড়া আবেদন অবৈধ ধরা হবে, তবে প্রতিটি ওয়ারিশ যৌথ খতিয়ানের মাধ্যমে নামজারি করতে পারবে। ইউনিয়ন, উপজেলা বা সিটি কর্পোরেশন থেকে সনদ সংগ্রহ করে জমি অফিসে আবেদন করলে ভূমি কমিশনার যৌথ খতিয়ান ঘোষণা করবেন।
তৃতীয় পদক্ষেপ: নামজারি প্রক্রিয়া অনলাইনে হবে। জুলাই পর্যন্ত ২১টি উপজেলায় অটোমেশন চালু হয়েছে, যা শিগগিরই সারাদেশে সম্প্রসারিত হবে। সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে দলিল রেজিস্ট্রেশন পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভূমি অফিসে কপি পাঠানো হবে। যাচাই-বাছাই শেষে ‘নো অবজেকশন’ রিপোর্ট পাঠানো হলে নামজারি সম্পন্ন হবে।
প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপ অনলাইনে ট্র্যাক করা যাবে। আবেদনকারীর মোবাইলে বার্তা যাবে, আবেদন কোন অবস্থায় আছে তা জানানো হবে। নতুন সিস্টেমে দলিল রেজিস্ট্রেশন, খতিয়ান সংশোধন এবং অনলাইন ডকুমেন্ট সংযুক্তকরণ একসঙ্গে করা যাবে। প্রতিটি মালিককে দেওয়া হবে অনলাইন আইডি এবং ডিজিটাল মালিকানা সনদ, যা কিউআর কোড বা ওয়েবসাইট লিঙ্কের মাধ্যমে যাচাইযোগ্য হবে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অটোমেশন ও ডিজিটাল যাচাই একত্রে চালু হওয়ায় নামজারিতে পুরনো অনিয়ম বন্ধ হবে। দালালচক্র বা অবৈধ প্রভাব আর কোনোভাবেই কার্যকর হতে পারবে না। নতুন উদ্যোগের মাধ্যমে দেশে ভূমি ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা, নিরাপত্তা এবং নিশ্চিত মালিকানার যুগ শুরু হচ্ছে।

