জেআইসি সেলে গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা ও ডিজিএফআইয়ের সাবেক পাঁচ মহাপরিচালকসহ ১৩ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করার আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
আজ বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এই আদেশ দেন। প্যানেলের অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম, শাইখ মাহদীসহ অন্যান্য সদস্যরা।
মামলার পলাতক ১০ আসামির মধ্যে পাঁচজনই বিভিন্ন সময়ে ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আকবর হোসেন, মেজর জেনারেল (অব.) সাইফুল আবেদিন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আলম, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী এবং মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক।
বাকি আসামিরা হলেন:
- শেখ হাসিনার সাবেক প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক
- ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ তৌহিদুল উল ইসলাম
- মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ
- লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মখছুরুল হক
অরিজিনাল অভিযোগ গঠনের দিন ছিল ১৪ ডিসেম্বর। তবে সেই দিন কোনো আদেশ দেওয়া হয়নি। পরে ট্রাইব্যুনাল পরবর্তী দিন অর্থাৎ ১৮ ডিসেম্বর এটি ঠিক করেন। একই দিনে পুলিশের মাধ্যমে মামলায় গ্রেপ্তার তিনজনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
গত ৯ নভেম্বর, গ্রেপ্তার তিন আসামির আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু অব্যাহতি চেয়ে শুনানি করেন। তিনি চারটি কারণ উল্লেখ করে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাতে বেআইনি আটক, অপহরণ ও নির্যাতনের তিনটি কারণ বিবেচনা করেন। চতুর্থ কারণ ছিল গুম রাখা। পলাতক আসামিদের পক্ষে স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী হাসান ইমাম, মো. আমির হোসেনসহ অন্যান্যরা শুনানি করেন।
এই মামলায় প্রসিকিউশন পাঁচটি অভিযোগ দাখিল করেছে। ৭ ডিসেম্বর শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জেআইসি সেলে সরকারবিরোধী ব্যক্তিদের গুম রাখা ও নির্যাতনের ভয়াবহ ঘটনাগুলো তুলে ধরেন। তিনি ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত গুম হওয়া ২৬ জনের ঘটনা উল্লেখ করে ১৩ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের আবেদন করেন।
এর আগে ২৩ নভেম্বর পলাতক আসামিদের জন্য স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ দেওয়া হয়। স্বেচ্ছায় লড়তে চেয়ে শেখ হাসিনার জন্য জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেডআই খান পান্না নিয়োগ পান। তবে শারীরিক অসুস্থতার কারণে ৩ ডিসেম্বর তিনি দায়িত্ব প্রত্যাহার করেন। পরে মো. আমির হোসেনকে আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
২২ অক্টোবর সেনা হেফাজতে থাকা মামলার তিন সেনা কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। একই সঙ্গে পলাতক আসামিদের হাজির করার জন্য দুটি জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়। ৮ অক্টোবর মামলায় ১৩ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

