স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও শিক্ষার্থীদের সুস্থতা নিশ্চিত করতে মানসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা থাকা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু নতুন একটি জরিপে দেখা গেছে, দেশের প্রায় ৭১ দশমিক ৪ শতাংশ স্কুলে এখনো মানসম্মত স্যানিটেশন নেই।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত ‘ওয়াশ ইন এডুকেশন অ্যান্ড হেলথ কেয়ার ফ্যাসিলিটিজ সার্ভে-২০২৪’ অনুযায়ী, প্রতি ৫০ শিক্ষার্থীর জন্য ন্যূনতম একটি উন্নত টয়লেট আছে মাত্র ২৮ দশমিক ৬ শতাংশ স্কুলে। মেয়েদের জন্য পৃথক, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট না থাকা ৮০ শতাংশ স্কুলে লক্ষ্য করা গেছে। একই সঙ্গে মৌলিক মাসিককালীন স্বাস্থ্যসেবা পায় মাত্র ৬ দশমিক ৯ শতাংশ স্কুলের মেয়েরা।
জরিপে দেখা গেছে, সরকারি, বেসরকারি ও এনজিও পরিচালিত বিদ্যালয়ের মধ্যে বেসরকারি স্কুলগুলো সবচেয়ে পিছিয়ে। ৫০ শিক্ষার্থীর জন্য উন্নত টয়লেট পাওয়া যায় মাত্র ২২ দশমিক ৮ শতাংশ বেসরকারি স্কুলে। অন্যদিকে সরকারি স্কুলে এ হার ৩৫ দশমিক ২, এনজিও স্কুলে ৪২ দশমিক ১ শতাংশ।
অঞ্চলভেদেও বৈষম্য স্পষ্ট। খুলনায় ৫০ শিক্ষার্থীর জন্য উন্নত টয়লেট আছে ৪৫ দশমিক ১ শতাংশ স্কুলে, যেখানে রাজশাহী বিভাগে এই হার মাত্র ১৭ দশমিক ৮ শতাংশ। চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুর, বরিশাল, ঢাকা ও ময়মনসিংহেও পরিস্থিতি দারুণ সমান নয়।
পানির সুবিধা তুলনামূলকভাবে কিছুটা ভালো, ৯৫ দশমিক ৪ শতাংশ স্কুলে এবং ৮৭ দশমিক ৫ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে উন্নত পানির উৎসে প্রবেশগম্যতা আছে। কিন্তু প্রাঙ্গণের ভিতরে থাকা ন্যূনতম মানদণ্ড পূরণ করে মাত্র ৮৬ শতাংশ স্কুল এবং ৭০ দশমিক ৫ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান। প্রতিবন্ধীদের জন্য উপযোগী পানি সুবিধা আছে মাত্র ৫৫ দশমিক ৪ শতাংশ স্কুলে এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে মাত্র ৪০ দশমিক ৯ শতাংশে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য পরিচ্ছন্ন শৌচাগার নিশ্চিত করা হবে। কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো অনেক পিছিয়ে। স্যানিটেশন, হাত ধোয়ার ব্যবস্থা, পানি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রগুলোতে ঘাটতি শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে উপস্থিতি কমিয়ে, অস্বস্তি ও লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য বাড়াচ্ছে।
আইসিডিডিআর,বি’র একটি গবেষণা অনুসারে, দেশের ৮৪ শতাংশ স্কুলে উন্নত ল্যাট্রিন, ১২ শতাংশে অনুন্নত। ল্যাট্রিনে তালা থাকলেও মাত্র ২৪ শতাংশ ব্যবহারযোগ্য। ৮০ শতাংশ স্কুলে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা আছে, কিন্তু হাত ধোয়ার জন্য পানি ও সাবান আছে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ স্কুলে।
মানববর্জ্য ও কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনাতেও ঘাটতি রয়েছে। মাত্র ৩৩ দশমিক ৯ শতাংশ স্কুল এবং ৪৫ দশমিক ৪ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে নিরাপদ মানববর্জ্য ব্যবস্থা আছে। চিকিৎসা-বর্জ্যের নিরাপদ ব্যবস্থাপনা পূরণ করতে সক্ষম প্রতিষ্ঠান মাত্র ২৫ দশমিক ৪ শতাংশ।
জলবায়ুজনিত ঝুঁকিও সমস্যা বাড়াচ্ছে। গত ১২ মাসে ২৪ শতাংশ স্কুল এবং ১৯ দশমিক ৪ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু ঝুঁকি কমাতে, জলবায়ু সহনশীল ওয়াশ ব্যবস্থা গড়ে তোলার হার কম।
বিবিএসের এসডিজি সেলের ফোকাল পয়েন্ট আলমগীর হোসেন বণিক বলেন, “স্কুলে স্যানিটেশন ও পানির সুবিধা নাজুক অবস্থায়। সরকারের বাজেট থাকলেও বাস্তবায়ন ও তথ্য-উপাত্তের ঘাটতি সমস্যা তৈরি করছে। এখন আমাদের কাছে পরিষ্কার তথ্য আছে, যা নীতি প্রণয়ন ও বাজেট পরিকল্পনায় সহায়ক হতে পারে।”
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী মন্তব্য করেন, “স্যানিটেশন শুধু সুবিধা নয়, এটি শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক পরিকল্পনা, বাজেট ও তথ্য-উপাত্ত ছাড়া দেশের স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানো সম্ভব নয়।”

