দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান ও সাবেক ১৭ কর্মকর্তা এবং দুই ভারতীয় নাগরিকসহ মোট ১৯ জনের তথ্য তলব করেছে। সম্প্রতি গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরকে চিঠি পাঠিয়ে এসব ব্যক্তির বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে। চিঠিতে প্রত্যেকের পাসপোর্ট বা জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, কাজের পরিধিসহ অন্যান্য বিষয় জানাতে বলা হয়েছে।
তালিকায় থাকা অনেকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলা এবং নীতি শিথিলতার আড়ালে ব্যাংক থেকে অর্থ আত্মসাতের সুযোগ তৈরি করার অভিযোগে তদন্ত চলছে। সাবেক গভর্নরদের মধ্যে তালিকায় রয়েছেন ড. আতিউর রহমান, ফজলে কবির ও আব্দুর রউফ তালুকদার। রিজার্ভ চুরির সময় গভর্নরের দায়িত্বে ছিলেন আতিউর রহমান। ওই বছরের ১৫ মার্চ তিনি পদত্যাগ করেন। এছাড়া সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী, আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান, এসএম মনিরুজ্জামান, কাজী ছাইদুর রহমান, আবু ফরাহ মো. নাছের, আহমেদ জামাল এবং ডেপুটি গভর্নর পদমর্যাদার বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সাবেক প্রধান মো. মাসুদ বিশ্বাসের তথ্যও চাওয়া হয়েছে। সাবেক নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহাও তালিকায় আছেন।
বর্তমান কর্মকর্তাদের মধ্যে রাজশাহী অফিসের নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক ও আইসিটি বিভাগের দেবদুলাল রায়ের তথ্য চাওয়া হয়েছে। মেজবাউল হক ১৪ সেপ্টেম্বর এক মাসের নোটিশ দিয়ে পদত্যাগ করেছেন। এছাড়া তালিকায় আছেন কমন সার্ভিস বিভাগ-২-এর পরিচালক মো. তফাজ্জল হোসেন, বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার্স কাউন্সিলের সভাপতি মাসুম বিল্লাহ, আইসিটি বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মসিউজ্জামান খান ও রাহাত উদ্দিন। চিঠিতে মসিউজ্জামান খানের নাম দু’বার উল্লেখ আছে; একজনকে উপপরিচালক হিসেবে দেখানো হলেও তারা একই ব্যক্তি। মাসুম বিল্লাহ ছাড়া বাকিরা সবাই রিজার্ভ রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন।
২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় নেওয়া দুই কোটি ডলার তখনই ফেরত আসে। ফিলিপাইনে নেওয়া আট কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে দেশটির আদালতের নির্দেশে ক্যাসিনো মালিক কিম অং ২০১৬ সালের নভেম্বরে প্রায় দেড় কোটি ডলার ফেরত দেন। বাকি ছয় কোটি ৬০ লাখ ডলার উদ্ধারে ফিলিপাইনের বিভিন্ন সরকারি সংস্থা বাংলাদেশের পক্ষে ১২টি মামলা করেছেন, যা এখনও চলমান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের চারটি বিভাগ ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট, আইটি, পেমেন্ট সিস্টেম এবং অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং রিজার্ভ রক্ষণাবেক্ষণ ও ছাড়ের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত।
দুদকের চিঠিতে দুই ভারতীয় নাগরিক নীলা ভান্নান ও রাকেশ আস্তানার তথ্যও চাওয়া হয়েছে। নীলা ভান্নান রিজার্ভ চুরির আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে তিনটি ব্যাংকের লেনদেনের জন্য ‘সুইফট’ সংযোগ স্থাপন করেছিলেন। রিজার্ভ চুরির পর ‘ফায়ার ওয়াল’ ভেদ করে চুরির ঘটনায় রাকেশ আস্তানাকে বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিয়োগ দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমান।