প্রিমিয়ার ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এইচ বি এম ইকবাল এবং তাঁর পরিবারের চার সদস্যের বিরুদ্ধে বিদেশে সম্পদ কেনা ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের সীমা অতিক্রমের অভিযোগে বড় অঙ্কের জরিমানা করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
বিএফআইইউর তদন্তে জানা গেছে, ইকবাল ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বিদেশে সম্পদ ক্রয় এবং সীমার বেশি অর্থ খরচ করেছেন। এই ঘটনায় প্রিমিয়ার ব্যাংককেও ২ কোটি ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আগামী রোববারের মধ্যে এই অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিতে বলা হয়েছে, অন্যথায় সরাসরি ব্যাংকের হিসাব থেকে কেটে নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
এ ছাড়া ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম রিয়াজুল করিমসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মোট ১ কোটি ২৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
প্রিমিয়ার ব্যাংকের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান জানিয়েছেন, তিনি এ রকম একটি চিঠি পাওয়ার কথা শুনেছেন। তবে ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবু জাফরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিএফআইইউর চিঠিতে বলা হয়, অর্থপাচার প্রতিরোধ আইন লঙ্ঘন করে ব্যাংকটি রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট (আরএফসিডি) হিসাব খুলেছে এবং এসব হিসাবে নিয়মবহির্ভূতভাবে অর্থ জমা দিয়েছে। এছাড়া ক্রেডিট কার্ডে বৈদেশিক মুদ্রা অনুমোদনের নিয়ম না মেনে বিপুল পরিমাণ ডলার পাচারে অংশ নিয়েছে ব্যাংকটি। এই অভিযোগে ব্যাংকের বিরুদ্ধে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা জরিমানা আরোপ করা হয়।
এছাড়া, ৫টি আরএফসিডি হিসাব ও ১৮টি ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে সন্দেহজনক লেনদেন হলেও তা বিএফআইইউকে জানানো হয়নি। এমনকি অন্য গ্রাহক প্রতিষ্ঠানের রপ্তানিকারকের রিটেনশন কোটা (ইআরকিউ) হিসাব থেকে ১ লাখ মার্কিন ডলার ইকবাল ও তাঁর ছেলে মইন ইকবালের হিসাবে স্থানান্তর করা হয়েছে, যা বিএফআইইউ “চুরির ঘটনা” হিসেবে উল্লেখ করেছে। এই ঘটনায় অতিরিক্ত এক কোটি টাকা জরিমানা করা হয়।
অর্থপাচার প্রতিরোধ আইনের আওতায় ব্যাংকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদেরও ব্যক্তিগতভাবে জরিমানা করা হয়েছে।
-
সাবেক এমডি এম রিয়াজুল করিম: ৩০ লাখ টাকা
-
বর্তমান এএমডি সৈয়দ নওশের আলী: ৩০ লাখ টাকা
-
বনানী শাখার তৎকালীন অপারেশন ম্যানেজার মনিরুল করিম লিটন: ২২ লাখ টাকা
-
কার্ড বিভাগের সাবেক দুই প্রধান: প্রত্যেকে ১০ লাখ টাকা
-
কার্ড সীমা ২২ বার বেআইনিভাবে খুলে দেওয়ায় জাকির হোসেন জিতু: ২২ লাখ টাকা
বিএফআইইউ জানিয়েছে, এসব কর্মকর্তার কাছ থেকেই অর্থ আদায়যোগ্য হবে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিএফআইইউর তদন্তে জানা গেছে, ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে এইচ বি এম ইকবাল, তাঁর তিন সন্তান — ইমরান ইকবাল, মইন ইকবাল, নওরীন ইকবাল, এবং পুত্রবধূ ইয়াসনা পূজা ইকবাল — প্রিমিয়ার ব্যাংকের ১৮টি আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড ও ৪টি প্রিপেইড কার্ড ব্যবহার করে বিদেশে ৩২ লাখ ৫০ হাজার ৩১১ মার্কিন ডলার খরচ করেছেন। যা বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের সীমার অনেক ঊর্ধ্বে।
বিএফআইইউ এ বিষয়ে প্রিমিয়ার ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা চাইলে, সেটি সন্তোষজনক না হওয়ায় জরিমানা আরোপ করা হয়।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আর্থিক খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, বড় ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালীদের এ ধরনের অনিয়ম ব্যাংকিং সেক্টরে জবাবদিহিতা প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

