বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ ব্যবস্থায় মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ১০ বছরের জন্য খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়। এ সুবিধার জন্য জমা পড়ে এক হাজার ৫১৬টি আবেদন। যাচাই-বাছাই শেষে এখন পর্যন্ত ৩০০ গ্রুপের ৯০০টি আবেদন চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি করা হয়েছে। নীতি সহায়তার আওতায় আগের আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক ব্যবসায়ীর পাশাপাশি বিভিন্ন সুবিধাভোগীও আবেদন করেন। এসব তথ্য পাওয়া গেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের (বিআরপিডি) এক প্রতিবেদনে।
গত রোববার ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে ব্যাংকার্স সভায় প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। সভায় আবেদন নিষ্পত্তির গতি বাড়াতে ব্যাংকগুলোকে পরিষ্কার নির্দেশনা দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। জানা যায়, ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ পুনঃতফসিল উদ্যোগ নেয়। কোনো সার্কুলার ছাড়াই পাঁচ সদস্যের একটি কমিটির মাধ্যমে আবেদন নেওয়া শুরু হয়। কমিটি মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে দুই বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১০ থেকে ১৫ বছরের জন্য খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠনের সুযোগ দেয়।
তবে নির্দিষ্ট সার্কুলার ছাড়া সুবিধা দেওয়ায় নানা প্রশ্ন ওঠে। অভিযোগ রয়েছে, অনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগ আমলের বিভিন্ন সুবিধাভোগীদের নামও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সমালোচনার মুখে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি বিশেষ সুবিধা নিয়ে একটি সার্কুলার জারি করে। গত সেপ্টেম্বরে জারি করা সার্কুলার অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত খেলাপি হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো আবেদন করতে পারবে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা ২ শতাংশ জমা দিয়ে ঋণ নিয়মিত করতে পারবেন। মেয়াদ সর্বোচ্চ ১০ বছর। ঋণ নিয়মিত হলে দুই বছরের পরিশোধ বিরতিও দেওয়া হবে। পরে নভেম্বরে আরেকটি সার্কুলার দিয়ে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত আবেদন গ্রহণের সময়সীমা বাড়ানো হয়।
ব্যাংকার্স সভায় উপস্থাপিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক হাজার ৫১৬টি আবেদনের বিপরীতে পুনঃতফসিল সুবিধা চাওয়া হয়েছে এক লাখ ৯৬ হাজার ৪৭ কোটি টাকার। এর মধ্যে ৩০০ গ্রুপের ৯০০টি আবেদন নিষ্পত্তি করা হয়েছে। তবে ব্যাংকগুলো এখন পর্যন্ত ২৫০টি আবেদন বাস্তবায়ন করেছে, যার অঙ্ক ২৬ হাজার ১১৪ কোটি টাকা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ঋণ পুনরুদ্ধার ও পুনর্গঠনে ব্যাংকগুলোর অগ্রগতি আশানুরূপ নয়। খেলাপি ঋণ ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকিং ব্যবস্থায় নতুন চাপ সৃষ্টি হয়েছে। সাম্প্রতিক নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় অনেক ঋণগ্রহীতা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তাদের ঋণ পরিশোধে সহায়তা দেওয়ার মতো ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করাও জরুরি হয়ে উঠেছে। এ পরিস্থিতিতে নীতি সহায়তা কমিটির সুপারিশ এবং সার্কুলারের আওতায় জমা পড়া আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, নীতি সহায়তা দ্রুত কার্যকর হলে খেলাপি ঋণ কমবে এবং আদায় ত্বরান্বিত হবে। এতে ব্যাংক খাতের তারল্যচাপ কমবে এবং ব্যবসার পরিবেশ স্থিতিশীল হবে। দেশের অর্থনীতির প্রবাহ সচল রাখতে খেলাপি ঋণ সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনার স্বার্থে ব্যাংকগুলোকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্দেশ দিয়েছে।
মোট এক লাখ ৯৬ হাজার ৪৭ কোটি টাকার আবেদনে শীর্ষ ২০ গ্রুপই জমা দিয়েছে এক লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার আবেদন। এর মধ্যে মাগুরা গ্রুপ ১৪ হাজার ৭৭১ কোটি টাকা, এস আলম ১২ হাজার ৭৬৬ কোটি, বসুন্ধরা গ্রুপ ১১ হাজার ১৬৪ কোটি, নাসা ৬ হাজার ৯১৯ কোটি, জিপিএইচ ৬ হাজার ৮৯৪ কোটি এবং সাদ মুসা ৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা চেয়েছে।
এ ছাড়া ওপেক্স সিনহা গ্রুপ ৪ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা, আনোয়ার গ্রুপ ৪ হাজার ৪৬৩ কোটি, নাবিল ৪ হাজার ১৬১ কোটি, পারটেক্স ৪ হাজার ৬২ কোটি, প্রভিটা ৩ হাজার ৪০৬ কোটি, রুবি ফুড ৩ হাজার ৩৫৭ কোটি, আহসান ৩ হাজার ২৮ কোটি, আনোয়ার খান মডার্ন ২ হাজার ৮৫৭ কোটি, সানম্যান গ্রুপ ২ হাজার ৫৪১ কোটি, আব্দুল মোনেম ২ হাজার ৫১১ কোটি, ডার্ড গ্রুপ ২ হাজার ২১৫ কোটি ও জেএমআই গ্রুপ ২ হাজার ২০১ কোটি টাকার আবেদন করে।

