নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক কোনো প্রার্থী শুধুমাত্র ‘নন-ট্রানজেকশনাল’ ফি বা চার্জ না দেওয়ার কারণে ঋণখেলাপি হিসেবে বিবেচিত হবেন না। এই ধরনের ভুল তথ্য দিয়ে যাদের সিআইবিতে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, তাদের তথ্য দ্রুত সংশোধনের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ নির্দেশনা দেওয়ার মূল উদ্দেশ্য ছিল অতীতের নির্বাচনে কিছু প্রার্থীর প্রার্থিতা উদ্দেশ্যমূলকভাবে বাতিল হওয়া আটকানো। একই সঙ্গে প্রকৃত ঋণখেলাপিদের তথ্য বাদ না পড়া নিশ্চিত করতে ব্যাংকগুলোকে সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রস্তুত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নন-ট্রানজেকশনাল ফি কী: নন-ট্রানজেকশনাল ফি হলো ঋণ বা লেনদেন সরাসরি সম্পর্কিত নয় এমন চার্জ। যেমন ক্রেডিট কার্ডের বার্ষিক ফি, অ্যাকাউন্ট রক্ষণাবেক্ষণ চার্জ, সিআইবি তথ্য সংগ্রহ ফি বা এসএমএস চার্জ। এসব বকেয়া থাকলেও তা ঋণখেলাপির আওতায় পড়ে না। কিন্তু অতীতের কিছু নির্বাচনে এসব ফি বকেয়া থাকার কারণে প্রার্থীদের খেলাপি দেখিয়ে মনোনয়ন বাতিলের অভিযোগ উঠেছিল। গত রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। সভার সভাপতিত্ব করেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি জানান, আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের আগে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে হবে।
আইন কী বলে: গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সাত দিন আগে পর্যন্ত ঋণ নিয়মিত থাকলে কেউ প্রার্থী হওয়ার যোগ্য। নির্বাচিত হওয়ার পর কারও ঋণখেলাপি অবস্থা বা মিথ্যা তথ্য প্রমাণিত হলে নির্বাচন কমিশন তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল করতে পারে।
সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন, আগের সরকার আমলে বিরোধী প্রার্থীর মনোনয়ন নানা অজুহাতে বাতিল করা হয়েছে। প্রকৃত ঋণখেলাপি না হলেও সামান্য ফি বা চার্জ বকেয়া থাকায় প্রার্থিতা বাতিল হয়েছিল। আবার প্রকৃত খেলাপিরাও কিছু ক্ষেত্রে নির্বাচনে অংশ নিতে পারছিলেন। বিশেষ করে ২০২৪ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে সিআইবি তথ্য হালনাগাদ সহজ করার কারণে শাখা পর্যায়ে অনিয়মের সুযোগ তৈরি হয়েছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের চারটি মূল নির্দেশনা:
-
সঠিক ঋণ শ্রেণিকরণ: সব ঋণ সঠিকভাবে সিআইবিতে রিপোর্ট করতে হবে। কোনো গোপন বা আনরিপোর্টেড ঋণ থাকলে তা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
-
নন-ট্রানজেকশনাল ফিতে খেলাপি নয়: ক্রেডিট কার্ড বা অন্যান্য নন-ট্রানজেকশনাল ফি বকেয়া থাকলে গ্রাহককে খেলাপি দেখানো যাবে না। ভুলভাবে চিহ্নিতদের তথ্য দ্রুত সংশোধন করতে হবে।
-
তথ্য হালনাগাদ: সম্ভাব্য প্রার্থীদের এনআইডি, টিআইএনসহ সব প্রাসঙ্গিক তথ্য দ্রুত হালনাগাদ করতে হবে এবং সঠিকভাবে সিআইবিতে রিপোর্ট করতে হবে।
-
হাইকোর্টের মামলা নিষ্পত্তি: খেলাপি সংক্রান্ত যেসব মামলা হাইকোর্টে আছে, তা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আইনজীবী নিয়োগসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। ইতিমধ্যে খারিজ হওয়া মামলার তথ্যও দ্রুত সিআইবিকে জানাতে হবে।

