দেশে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ আবারও স্বাভাবিক ধারায় ফিরছে। যেসব দেশে বেশি সংখ্যক বাংলাদেশি কর্মরত, সেখান থেকেই এখন মূলত বেশি রেমিট্যান্স আসছে। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, প্রবাসী আয়ের শীর্ষ উৎস হিসেবে আবারও প্রথম স্থানে উঠে এসেছে সৌদি আরব। একসময় তালিকার শীর্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্র নেমে গেছে পঞ্চম স্থানে।
গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আয়ের প্রধান উৎসে পরিণত হয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক পাঁচ মাসের চিত্রে সেই অবস্থান বদলেছে। জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রবাসী আয়ের পর্যালোচনায় দেখা যায়, সৌদি আরবের পর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য। এরপর রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ও মালয়েশিয়া।
ব্যাংক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আগে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কিছু রেমিট্যান্স প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অন্য দেশ থেকে পাঠানো অর্থও উৎস দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র দেখানো হতো। সেই তথ্য সংশোধনের পর এখন দেশভিত্তিক প্রকৃত প্রবাসী আয়ের চিত্র স্পষ্ট হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক-এর তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-নভেম্বর সময়ে সৌদি আরব থেকে দেশে এসেছে সর্বোচ্চ ২০৫ কোটি ডলার। যুক্তরাজ্য থেকে এসেছে ১৬৭ কোটি ডলার। ইউএই থেকে এসেছে ১৫৮ কোটি ডলার। মালয়েশিয়া থেকে এসেছে ১৪৩ কোটি ডলার। যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে ১০৩ কোটি ডলার। একই সময়ে ইতালি থেকে এসেছে ৮৩ কোটি ডলার। ওমান থেকে এসেছে ৭৭ কোটি ডলার। কুয়েত থেকে এসেছে ৬৪ কোটি ডলার। কাতার থেকে এসেছে ৫৯ কোটি ডলার। সিঙ্গাপুর থেকে এসেছে ৫৫ কোটি ডলার।
সৌদি আরবে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি কর্মী কাজ করেন। ইউএই, কুয়েত, ওমান, কাতার, বাহরাইন ও মালয়েশিয়াতেও বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি কর্মরত। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে মূলত শিক্ষার্থী ও দক্ষ পেশাজীবীরা অবস্থান করছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে মোট ১ হাজার ৩০৩ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে। শুধু নভেম্বর মাসেই রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংক এনেছে ৫৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এনেছে ২৯ কোটি ৫৯ লাখ ডলার। বেসরকারি ব্যাংকগুলো এনেছে ১৯৯ কোটি ৬৮ লাখ ডলার। বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫৯ লাখ ডলার।
এর আগে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে মোট ৩ হাজার ৩৩ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় আসে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই অঙ্ক ছিল ২ হাজার ৩৯১ কোটি ডলার। গত মার্চ মাসে একক মাসে রেকর্ড ৩২৯ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় আসে, যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ।
চলতি মাসের প্রথম ১৭ দিনেই প্রবাসীরা ২০০ কোটি ডলারের বেশি অর্থ পাঠিয়েছেন। এই ধারা অব্যাহত থাকলে মাস শেষে প্রবাসী আয় ৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়াতে পারে বলে ব্যাংকাররা আশা করছেন।
এদিকে ডলারের সংকটও অনেকটাই কেটে গেছে। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়ায় ৩২ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার। ব্যাংক থেকে ডলার কেনা এবং বৈদেশিক মুদ্রার ধারাবাহিক প্রবাহে রিজার্ভ বাড়তির দিকেই রয়েছে।

