বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় থাকা পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ার শূন্য করার নির্দেশ দিয়েছে। ব্যাংকগুলোর শেয়ারের নেট অ্যাসেট ভ্যালু (এনএভি) ঋণাত্মক হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোতে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।
একীভূত হওয়া ব্যাংকগুলো হলো—গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, চিঠিতে এসব ব্যাংককে তাদের সব শেয়ার শূন্য ঘোষণা করতে বলা হয়েছে। তিনি জানান, এটি ‘ব্যাংক রেজোলিউশন অধ্যাদেশ ২০২৫’-এর আওতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত। একটি মূল্যায়নে দেখা গেছে, পাঁচটি ব্যাংকের শেয়ারের মূল্য ঋণাত্মক। তাই শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ার শূন্য করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এক ব্যাংকের প্রশাসক জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠি অনুযায়ী পেইড-আপ ক্যাপিটাল শূন্য করতে হবে। এর জন্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) বা রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসের (আরজেএসসি) অনুমতির প্রয়োজন নেই।
গত নভেম্বর মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পাঁচটি ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডাররা নতুন একীভূত ব্যাংকে কোনো অংশীদারিত্ব পাবেন না। কারণ প্রতিটি শেয়ারের নিট সম্পদ মূল্য ইতোমধ্যে ৩৫০ থেকে ৪২০ টাকা পর্যন্ত ঋণাত্মক হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী শেয়ারহোল্ডারদের দায়ভার বহন করতে হয়। যেহেতু পুঁজি ঋণাত্মক, তাই সব শেয়ার শূন্য করা হবে। তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক শেয়ারহোল্ডারদের বিষয়টি বিবেচনায় নিচ্ছে না। একীভূতকরণের ফলে এই পাঁচটি ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডাররা শত শত কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একীভূতকরণ আদেশের পর গত মাসে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে এসব ব্যাংকের শেয়ারের লেনদেন স্থগিত করা হয়। গত ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক পাঁচটি দুর্বল ইসলামী ব্যাংক একীভূত করে গঠিত ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক পিএলসি’-কে চূড়ান্ত লাইসেন্স দেয়। এটি দেশের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রায়ত্ত শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তবে দীর্ঘদিন ধরে আমানতের অর্থ উত্তোলন করতে না পারায় গ্রাহকরা চরম সংকটে পড়েছেন। তাদের দাবি, আমানতের অর্থ দ্রুত ফেরত দিতে হবে। আজ মঙ্গলবার তারা রাজধানীর মতিঝিলস্থ বাংলাদেশ ব্যাংক চত্বরে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট পাঁচটি ব্যাংকের গ্রাহকরা দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে তাদের কষ্টার্জিত আমানতের অর্থ উত্তোলনে ব্যর্থ হচ্ছেন। প্রায় পাঁচ মাস আগে বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের ঘোষণা দিলেও আমানত ফেরতের বিষয়ে কার্যকর কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।
গ্রাহকরা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর একাধিকবার গণমাধ্যমে অর্থ ফেরতের আশ্বাস দিলেও বাস্তবে তা প্রতিফলিত হয়নি। গত দুই মাসে বিভিন্ন সময়ে ‘চলতি মাসে’, ‘আগামী সপ্তাহে’ বা ‘খুব শিগগিরই’ টাকা পাওয়া যাবে—এমন বক্তব্য প্রচারিত হলেও ব্যাংক শাখাগুলোতে কর্মকর্তাদের কাছ থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য বা ইতিবাচক সাড়া মিলছে না। এর ফলে আমানতকারীরা ও তাদের পরিবার চরম আর্থিক দুরবস্থায় জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। পাঁচ ব্যাংক একীভূত করে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক গঠনের সিদ্ধান্তে সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের প্রায় ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য অনুযায়ী, এই পাঁচ ব্যাংকের মোট ৫৮২ কোটি শেয়ার ইস্যু করা হয়েছিল। এর মধ্যে সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা মালিক ছিলেন ৪৪৩ কোটি শেয়ারের। এই শেয়ারের মোট ফেসভ্যালু প্রায় ৪ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা, আর বাজারদরে মূল্য ছিল প্রায় ১ হাজার ২২ কোটি টাকা।
ব্যাংকভিত্তিক শেয়ার বিভাজন হলো—
-
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক: ১১৩ কোটি শেয়ার, ফেসভ্যালু ১ হাজার ১৩০ কোটি, বাজারদর ২১৫ কোটি
-
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক: ১০০ কোটি শেয়ার, বাজারদর ৩০১ কোটি
-
এক্সিম ব্যাংক: ৯৭ কোটি শেয়ার, বাজারদর ২৯৩ কোটি
-
গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক: ৮৪ কোটি শেয়ার, বাজারদর ১৪২ কোটি
-
ইউনিয়ন ব্যাংক: ৪৭ কোটি শেয়ার, বাজারদর ৭১ কোটি

